‘আমার আর কেউ থাকল না’

দিনাজপুর সদর উপজেলায় সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত ট্রাকচালক নুর মোহাম্মদ ওরফে হাসু মিয়ার স্ত্রী সানজিদা আক্তারের আহাজারি। আজ দুপুরে দিনাজপুরের এম আবদুর রহিম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে
ছবি: প্রথম আলো

‘রাইত দুইটা পর্যন্ত ছেলের গলা ধরে শুয়েছিল আমার স্বামী। ছেলেও ছাড়ে না, ওর বাপও ছাড়ে না। এর মধ্যে বারবার ফোন করে মহাজন। টিপ নিয়ে যাওয়ার জন্য তাড়া দেয়। আমি নিষেধ করি। ছেলেও যেতে দিচ্ছিল না। কিন্তু কারও কথা শুনেনি। ঝাড়িঝুড়ি মেরে চলে গেল। মহাজন জোর করে আমার স্বামীকে বাড়ি থেকে বের করল। শ্বশুর-শাশুড়িও কিছুদিন আগে মারা গেল। আজ স্বামীও গেল। আমার আর কেউ থাকল না। আমি মহাজনের বিচার চাই।’

আজ শুক্রবার দুপুরে দিনাজপুর এম আবদুর রহিম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের নিচতলায় এভাবেই আহাজারি করছিলেন সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত নুর মোহাম্মদ ওরফে হাসু মিয়ার স্ত্রী সানজিদা আক্তার (২৭)। এ সময় স্বজনেরা তাঁকে সান্ত্বনা দেওয়ার চেষ্টা করছিল। কিন্তু সানজিদার আহাজারি কিছুতেই থামছিল না।

আজ সকাল ছয়টার দিকে দিনাজপুর সদর উপজেলার পাঁচবাড়ী বাজারসংলগ্ন চকরামপুর এলাকায় ফলবোঝাই ট্রাকের সঙ্গে যাত্রীবাহী বাসের মুখোমুখি সংঘর্ষ হয়েছে। এ ঘটনায় নুর মোহাম্মদের মৃত্যু হয়েছে। নিহত নুর মোহাম্মদ ঠাকুরগাঁওয়ের পীরগঞ্জ উপজেলার মিত্রপাটি গ্রামের সুরা ইসলামের ছেলে। তিনি ছাড়াও এ ঘটনায় মারা গেছেন পাঁচ ব্যক্তি। গুরুতর আহত হয়ে দিনাজপুর এম আবদুর রহিম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন আছেন ২৮ জন।

নুর মোহাম্মদের স্ত্রী সানজিদা বলেন, কয়েক দিন আগেও চট্টগ্রামে ট্রাকভর্তি ভুট্টা নিয়ে গিয়েছিলেন স্বামী। সেখান থেকে গত বুধবার রাতে ফিরেছেন। গতকাল বৃহস্পতিবার রাতে আবারও ট্রাক নিয়ে বের হয়ে গেল। বাড়িতে এসে একটুও বিশ্রাম নিতে পারেননি। মহাজন আবারও ফোন করে টিপ নিয়ে যাওয়ার জন্য চাপ দেন। টিপ নিয়ে না গেলে বকেয়া টাকা দেবে না বলে ধমকও দেন। পরে বাধ্য হয়ে কাওছারকে (সহকারী) ফোন দিয়ে বলে, ‘আমার শরীর ভালো না, তুমি সঙ্গে নিয়ে চলো। এভাবেই বের হয়ে যায়।’

নুর মোহাম্মদের স্বজন আরমান আলী বলেন, ‘গাড়িতে আম নিয়ে চট্টগ্রামে যাচ্ছিলেন নুর মোহাম্মদ ও কাওছার আলী। কাওছার মূলত চালকের সহকারী। নুর মোহাম্মদ ভাইকে পাশে বসিয়ে গাড়ির স্টিয়ারিং এ ছিলেন কাওছার।’