মজার ও বুদ্ধিদীপ্ত প্রশ্নে জমজমাট বিজ্ঞান উৎসব
মানুষ কিংবা কোনো প্রাণীর শরীরে কামড়ে রক্ত পান করে মশা। কিন্তু একটি পাত্রে যদি রক্ত রেখে দেওয়া হয়, তা মশা পান করে না কেন? এ জিজ্ঞাসা ছিল সিলেট সরকারি অগ্রগামী বালিকা উচ্চবিদ্যালয়ের ছাত্রী স্বস্তিকা পালের। এমন বুদ্ধিদীপ্ত ও মজার সব প্রশ্নের বৈজ্ঞানিক উত্তর জানা ও শেখার মধ্য দিয়ে সিলেটে অনুষ্ঠিত হয়েছে বিজ্ঞান উৎসব।
আজ রোববার সকাল সাড়ে নয়টায় শুরু হওয়া উৎসব চলে বেলা দেড়টা পর্যন্ত। সকাল আটটা থেকেই শিক্ষার্থীরা উৎসবস্থল সিলেট নগরের শামীমাবাদ বাগবাড়ি এলাকার সিলেট ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটিতে হাজির হতে শুরু করে। বিজ্ঞানচর্চায় স্কুলশিক্ষার্থীদের উদ্বুদ্ধ করতে যৌথভাবে এ উৎসবের আয়োজন করেছে মোবাইলে আর্থিক সেবাদাতা প্রতিষ্ঠান বিকাশ ও বিজ্ঞানবিষয়ক সাময়িকী বিজ্ঞানচিন্তা।
সকাল সাড়ে নয়টায় জাতীয় সংগীতের সঙ্গে জাতীয় পতাকা ও উৎসবের পতাকা উত্তোলনের মধ্য দিয়ে অনুষ্ঠান শুরু হয়। এরপর আমন্ত্রিত অতিথিরা শান্তির প্রতীক পায়রা উড়িয়ে দেন। উৎসবের উদ্বোধন ঘোষণা করেন সিলেট কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য মো. জামাল উদ্দিন ভূঞা। উদ্বোধনী পর্বে বক্তব্য দেন সিলেট ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির ট্রাস্টি বোর্ডের সদস্য শামীম আহমদ, বিকাশের ইভিপি ও হেড অব রেগুলেটরি অ্যান্ড করপোরেট অ্যাফেয়ার্স কর্মকর্তা হুমায়ূন কবির এবং প্রথম আলোর সিলেটের নিজস্ব প্রতিবেদক সুমনকুমার দাশ।
উদ্বোধনী মঞ্চে উপস্থিত ছিলেন সিলেট ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির ডিন আবুল ফতেহ ফাত্তাহ ও সহকারী অধ্যাপক প্রণবকান্তি দেব এবং বিজ্ঞানচিন্তার নির্বাহী সম্পাদক আবুল বাসার। প্রথম আলো বন্ধুসভা সিলেটের সদস্য নাহিয়ান রহমান অনুষ্ঠান সঞ্চালন করেন। আয়োজনে সহযোগিতা করেন বন্ধুসভার সদস্যরা।
শিক্ষার্থীদের বিজ্ঞানমনস্ক হয়ে ওঠার প্রেরণা দিয়ে উৎসবের উদ্বোধক মো. জামাল উদ্দিন ভূঞা বলেন, বিজ্ঞান মানুষকে অনুসন্ধিৎসু করে। তাই শিক্ষার্থীদের এ বিষয়ে আগ্রহী হতে হবে। বিজ্ঞানের চিন্তার সঙ্গে নিজের চিন্তাকে যুক্ত করতে হবে। বিজ্ঞানচিন্তার পাশাপাশি একজন শিক্ষার্থীকে মানবিকও হতে হবে।
বিকাশের কর্মকর্তা হুমায়ূন কবির বলেন, ‘বিজ্ঞানে বিকাশ’ এই থিম নিয়ে বিজ্ঞানচিন্তার সঙ্গে সম্মিলিতভাবে বিকাশ এ উৎসবের আয়োজন করছে। শিক্ষার্থীদের বিজ্ঞানমনস্ক ও উদ্ভাবনী চেতনা বাড়াতেই এ উৎসবের আয়োজন। বিকাশ সব সময়ই শিক্ষার্থীদের পাশে আছে। শিক্ষার্থীদের ভেতর উদ্ভাবন জাগিয়ে তুলতে চাচ্ছে বিকাশ।
সিলেট ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির ট্রাস্টি বোর্ডের সদস্য শামীম আহমদ বলেন, সংবাদ প্রকাশের পাশাপাশি বিভিন্ন ইতিবাচক কাজের সঙ্গে প্রথম আলো সম্পৃক্ত। প্রথম আলোর সহযোগী প্রতিষ্ঠান বিজ্ঞানচিন্তা বিকাশের সঙ্গে যৌথভাবে যে উৎসবের আয়োজন করেছে, এটি শিক্ষার্থীদের বিজ্ঞানের প্রতি ভালোবাসা তৈরিতে সহায়তা করবে।
উদ্বোধনী পর্ব শেষে বিভিন্ন স্কুলের ষষ্ঠ থেকে দশম শ্রেণির শিক্ষার্থীরা প্রজেক্ট প্রদর্শনী ও কুইজ প্রতিযোগিতায় অংশ নেয়। কুইজ প্রতিযোগিতায় দুটি ক্যাটাগরিতে শিক্ষার্থীরা অংশ নেয়। পাশাপাশি বিজ্ঞানভিত্তিক বিভিন্ন প্রজেক্ট তৈরি করে এনেও প্রদর্শন করে খুদে বিজ্ঞানীরা।
প্রতিযোগিতা শেষে দুপুরে ছিল প্রশ্নোত্তর পর্ব। এতে শিক্ষার্থীদের বিভিন্ন প্রশ্নের উত্তর দেন শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক দীপেন দেবনাথ ও শাখিনুর মণ্ডল, সহযোগী অধ্যাপক সাদিয়া সুলতানা, সহকারী অধ্যাপক জাসির আহমদ এবং বিকাশের ইভিপি ও হেড অব রেগুলেটরি অ্যান্ড করপোরেশন অ্যাফেয়ার্স কর্মকর্তা হুমায়ূন কবির। এ পর্ব সঞ্চালনা করেন বিজ্ঞানচিন্তার সহসম্পাদক উচ্ছ্বাস তৌসিফ।
প্রশ্নোত্তর পর্বে শিক্ষার্থীরা বিজ্ঞানের জটিল ও মজাদার বিষয়ে প্রশ্ন করে পুরস্কার হিসেবে ‘বিজ্ঞানচিন্তা’ উপহার পায়। এ সময় এক শিক্ষার্থীর প্রশ্নের জবাবে বিকাশের কর্মকর্তা হুমায়ূন কবির বলেন, ‘বিকাশ থেকে কখনো গ্রাহকদের কল করা হয় না। যদি বিকাশের নাম করে কেউ কল করেন, তাহলে বুঝে নিতে হবে প্রতারক চক্র কল করেছে।’
খুদে বিজ্ঞানীদের এ মিলনমেলায় বিজ্ঞানের জাদু দেখান জাদুশিল্পী রাজীব বসাক। এ ছাড়া প্রশ্নোত্তর পর্বের শুরুতেই নৃত্য পরিবেশন করেন দ্বীপান্বিতা সেন। এ পর্ব সঞ্চালনা করেন প্রথম আলো বন্ধুসভা সিলেটের সভাপতি হুমাইরা জাকিয়া। পরে পুরস্কার বিতরণী পর্বে দুই ক্যাটাগরিতে কুইজ প্রতিযোগিতায় বিজয়ী ২০ জনকে পুরস্কৃত করা হয়। এ ছাড়া প্রজেক্ট প্রদর্শনী প্রতিযোগিতায় ছয়টি দলের হাতে পুরস্কার তুলে দেওয়া হয়। অনুষ্ঠানে প্রায় ২৫০ শিক্ষার্থী অংশ নেয়।
পুরস্কার বিতরণী পর্বের প্রশ্নোত্তর পর্বে উপস্থিত থাকা শিক্ষক ও বিকাশের কর্মকর্তা ছাড়াও সিলেট ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির উপাচার্য মো. শহীদ উল্লাহ তালুকদার, ট্রাস্টি বোর্ডের চেয়ারম্যান রাজীব আহমেদ, কোষাধ্যক্ষ (প্রস্তাবিত) নিতাই চন্দ্র চন্দ প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন। আমন্ত্রিত অতিথিরা বিজয়ী শিক্ষার্থীদের হাতে পুরস্কার হিসেবে বই, সনদ, মেডেল ও টি–শার্ট তুলে দেন। এ ছাড়া কুইজ প্রতিযোগিতার দুটি ক্যাটাগরিতে সেরাদের সেরা হওয়া দুই শিক্ষার্থী এবং প্রজেক্ট প্রদর্শনীতে সেরাদের সেরা হওয়া একটি দলকে ট্রফি ও বিজ্ঞান বাক্স তুলে দেন অতিথিরা। বিজয়ীরা ঢাকায় জাতীয় পর্যায়ে অনুষ্ঠেয় প্রতিযোগিতায় অংশ নেবে।