মাহিকে চলচ্চিত্র জগতে ফিরে যাওয়ার পরামর্শ দিলেন আওয়ামী লীগ নেতা
মাহিয়া মাহিকে চলচ্চিত্র জগতে ফিরে যাওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন রাজশাহী মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মো. ডাবলু সরকার। গতকাল শুক্রবার সন্ধ্যায় রাজশাহীর তানোর উপজেলার পাচন্দর ইউনিয়নে নৌকার নির্বাচনী পথসভায় তিনি এসব কথা বলেন। এ সময় বক্তব্যে মাহির মেকআপ প্রসঙ্গ তুলে তাঁকে কটাক্ষ করেন ডাবলু। এই বক্তব্যের ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছে।
চিত্রনায়িকা মাহিয়া মাহি (শারমিন আক্তার নিপা) রাজশাহী-১ (তানোর-গোদাগাড়ী) আসনের স্বতন্ত্র প্রার্থী। তাঁর প্রতীক ট্রাক। এই আসনে নৌকার প্রার্থী টানা তিনবারের সদস্য ওমর ফারুক চৌধুরী। তিনি ২০০৮, ২০১৪ ও ২০১৮ সালের সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের মনোনয়নে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন।
নৌকার প্রার্থী ওমর ফারুক চৌধুরীর উপস্থিতিতে ডাবলু সরকার তাঁর বক্তব্যে বলেন, ‘আপনাদের এলাকার কৃতী সন্তান, যিনি আপনাদের উন্নয়নের জন্য কাজ করে যাচ্ছেন, যিনি আপনাদের পথ দেখাচ্ছেন, সেই ওমর ফারুক চৌধুরীকে নৌকা প্রতীক দিয়ে পাঠিয়েছেন মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তাঁকে নিয়ে মাঝেমধ্যেই ফেসবুক বা ইউটিউবে এসে ওই মহিলা বেফাঁস কথা বলছেন। আমার মনে হয়, আপনারা এখানে যাঁরা এসেছেন। কেউই বিউটি পারলার থেকে ১ হাজার, ২ হাজার, ৩ হাজার টাকা খরচ করে এই জনসভায় আসেননি। আর ওই ভদ্রমহিলা ইউটিউব বা ফেসবুকে আসার টাইমে দেখবেন, তাঁর চেহারায় কত হাজার টাকার মেকআপ আছে। যার নাম নাকি মাহিয়া মাহি।’
মাহিকে ‘অতিথি পাখি’ আখ্যা দিয়ে ডাবলু সরকার তাঁকে চলচ্চিত্র জগতে চলে যাওয়ার আহ্বান জানিয়ে বলেন, ‘বাবা, তুমি তোমার চলচ্চিত্র জগতে চলে যাও। তুমি ওখানে অভিনয় করো। অভিনয় করে তুমি খ্যাতি অর্জন করো, পুরস্কার পাও। এখানে তো কোনো কিছু যায় আসে না। আর বাবা, তুমি যদি নির্বাচন করতেই চাও, তুমি সাধারণ মানুষের কাছে যাও। সাধারণ মানুষের সুখ-দুঃখের সাথি হও। সাধারণ মানুষের বিপদে-আপদে ছুটে যাও, সহযোগিতা করো। রাজনীতি খালি শুধু নির্বাচনের সময়ে আসবা, আর তুমি বেফাঁস কথা বলবা, সেটি কি রাজনীতি? এই মানুষ কি আপনাদের সেবা দিতে পারবে? পারবে না।’
ভোটারদের উদ্দেশে ডাবলু বলেন, ‘শুনেন, রাজনীতি আমরা করি। বুঝি এর মর্মব্যথা কত। রাত্রি তিনটার সময় ফোন আসে, ডাবলু ভাই আমরা হসপিটালে। এই শীতের মধ্যে একটা গেঞ্জি বা একটা চাদর গায়ে দিয়ে ছুটে চলে যাই একটা মোটরসাইকেল বা রিকশাতে করে। গিয়ে ওই লোকটার ট্রিটমেন্টের ব্যবস্থা করে, ওটিতে ঢুকিয়ে, ওষুধপত্র কিনে ব্যবস্থা করে দিয়ে ভোরবেলায় বাড়িতে যাই। এত সস্তা রাজনীতি না। কোন ব্যক্তিটা মারা গেল, তার পাশে গিয়ে দাঁড়াই। রাজনীতিতে আপনি আসলেন, সুন্দর চেহারা দেখাবেন, আর মনে হচ্ছে তানোর-গোদাগাড়ীর মানুষ আপনাকে উপচে পড়ে ভোট দিবে!’
এই বক্তব্যের বিষয়ে জানতে ডাবলু সরকারকে ফোন করা হলে তিনি ফোন ধরেননি। এ বিষয়ে প্রতিক্রিয়া জানতে মাহিয়া মাহিকে ফোন করা হলে তিনিও ফোন ধরেননি।
মাহি তাঁর নির্বাচনী প্রচারে নৌকার প্রার্থীর বিরুদ্ধে নিয়মিত বক্তব্য দিচ্ছেন। গত বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় তানোরে একটি পথসভায় তিনি বলেন, ‘চৌধুরী সাহেবের (ওমর ফারুক চৌধুরী) হয়তো অনেক টাকা আছে। কিন্তু তার মন নেই, দিল নেই। সে মানুষকে ভালোবাসতে জানে না। সে আপনাদের সঙ্গে টংদোকানে বসে চা খাইতে পারে না। কারণ, তার তো অনেক টাকা। সে এসি রুমে বসে থাকবে। আর খালি মানুষকে শাসন করবে। ভয় দেখাবে, শোষণ করবে। আমি এখানে এসেছি কেন। কারণ হচ্ছে, আমি এই জমিদারি প্রথার অবসান চাই। এই স্বাধীন বাংলাদেশে জমিদারি প্রথার কোনো ভাত নেই। এই বাংলাদেশের মানুষ স্বাধীন থাকতে চায়। নিজের খেয়ে, নিজের পরে, নিজের মতো করে বাঁচতে চায়। কাউকে ভয় পেয়ে বাঁচতে চায় না। আমি এর প্রতিবাদেই নির্বাচন করছি।’
দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে অংশ নিতে প্রথমে চাঁপাইনবাবগঞ্জ-২ (নাচোল-গোমস্তাপুর-ভোলাহাট) আসন থেকে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন চেয়েছিলেন মাহিয়া মাহি। কিন্তু দলীয় মনোনয়নবঞ্চিত হয়ে তিনি রাজশাহী-১ আসনে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে মনোনয়নপত্র দাখিল করেন। তবে ১ শতাংশ ভোটারের স্বাক্ষরের গরমিল থাকায় তাঁর মনোনয়নপত্র বাতিল করেন রিটার্নিং কর্মকর্তা। পরে নির্বাচন কমিশনে আপিলের পর প্রার্থিতা ফিরে পান তিনি।
রাজশাহী-১ আসনে মোট ১০ প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। আওয়ামী লীগের ওমর ফারুক চৌধুরী ও স্বতন্ত্র মাহিয়া মাহি (শারমিন আক্তার নিপা) ছাড়াও রয়েছেন ন্যাশনাল পিপলস পার্টির নুরুন্নেসা (আম প্রতীক), জাতীয় পার্টির শামসুদ্দিন (লাঙ্গল প্রতীক), তৃণমূল বিএনপির জামাল খান (সোনালী আঁশ প্রতীক), বাংলাদেশ সাংস্কৃতিক মুক্তিজোটের বশির আহমেদ (ছড়ি প্রতীক), বাংলাদেশ ন্যাশনালিস্ট ফ্রন্টের (বিএনএফ) আল সামাদ (টেলিভিশন প্রতীক), বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী আন্দোলনের (বিএনএম) সামসুজ্জোহা বাবু (নোঙর প্রতীক), স্বতন্ত্র মো. গোলাম রাব্বানী (কাঁচি প্রতীক) এবং স্বতন্ত্র মো. আখতারুজ্জামান (ঈগল প্রতীক)