জামালপুর–মানিকগঞ্জে আওয়ামী নেতা ও লালমনিরহাটে সাবেক মন্ত্রীর ভাই গ্রেপ্তার

গ্রেপ্তারপ্রতীকী ছবি

জামালপুর, লালমনিরহাট ও মানিকগঞ্জে পৃথক মামলায় আওয়ামী লীগের তিন নেতা-কর্মী গ্রেপ্তার হয়েছেন। তাঁরা হলেন জামালপুরের মাদারগঞ্জ উপজেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মোশাররফ হোসেন, আওয়ামী লীগ সরকারের সাবেক সমাজকল্যাণমন্ত্রী নুরুজ্জামান আহমেদের ছোট ভাই শামসুজ্জামান আহমেদ (ভুট্টু) ও মানিকগঞ্জ জেলা আওয়ামী লীগের সদস্য ও পৌর আওয়ামী লীগের সাবেক সহসভাপতি আবদুস সালাম। গতকাল রোববার রাতে পৃথক স্থান থেকে তাঁদের গ্রেপ্তার করে গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি)।

পুলিশ সূত্র জানায়, ২০২২ সালের নাশকতার মামলায় মোশাররফ এবং চলতি বছর বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে হত্যা মামলায় শামসুজ্জামান, ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগের মামলায় আবদুস সালাম গ্রেপ্তার হয়েছেন।

গতকাল রোববার রাতে জামালপুর শহরের শাহ জামালের মাজার এলাকা থেকে মোশাররফকে গ্রেপ্তার করে জেলা গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি)। মাদারগঞ্জ উপজেলার কড়ুইচড়া ইউনিয়নের ঘুঘুমারি গ্রামের এই বাসিন্দা আওয়ামী লীগ সরকার পতনের পর থেকে আত্মগোপনে ছিলেন। তিনি নাশকতার মামলার এজাহারভুক্ত আসামি।

গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি) ও স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, ২০২২ সালের ২২ আগস্ট বিএনপির কেন্দ্রীয় কর্মসূচির অংশ হিসেবে মাদারগঞ্জ উপজেলার গাবেরগ্রাম বাজারে একটি বিক্ষোভ মিছিল বের হয়েছিল। ওই মিছিলে দেশীয় অস্ত্র নিয়ে হামলা চালান আওয়ামী লীগ ও এর সহযোগী সংগঠনের নেতা-কর্মীরা। এ ঘটনায় উপজেলা যুবদলের যুগ্ম আহ্বায়ক হাফিজুর রহমান বাদী হয়ে মাদারগঞ্জ থানায় গত বৃহস্পতিবার একটি মামলা (বিস্ফোরক ও বিশেষ ক্ষমতা আইন) করেন। ওই মামলায় এজাহারভুক্ত আসামি মোশাররফ।

মোশাররফের অবস্থান নিশ্চিত হওয়ার পর অভিযান চালিয়ে তাঁকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে বলে জানান জামালপুর জেলা গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি-১) ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সাকিব আহমেদ। তিনি জানান, আজ দুপুরের মধ্যে তাঁকে আদালতে পাঠানো হবে।

অন্যদিকে গত ৪ আগস্ট রংপুরে ছাত্রলীগ নেতা মাহমুদুল হাসান (মুন্না) হত্যা মামলায় গ্রেপ্তার হয়েছেন শামসুজ্জামান আহমেদ। গতকাল রাত ৮টার দিকে কালীগঞ্জ বাজার এলাকা থেকে তাঁকে গ্রেপ্তার করে জেলার গোয়েন্দা পুলিশ।

শামসুজ্জামানের ভাই নুরুজ্জামান আহমেদ লালমনিরহাট-২ আসন থেকে আওয়ামী লীগের সংসদ সদস্য (এমপি) নির্বাচিত হন। পরে দলটিতে তিনি মন্ত্রিত্বও পান। তাঁরা উভয়ই লালমনিরহাটের কালীগঞ্জ উপজেলার কাশিরাম গ্রামের বাসিন্দা। স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, শামসুজ্জামান পেশায় একজন ব্যবসায়ী ও ঠিকাদার। আওয়ামী লীগ ও এর সহযোগী অঙ্গ সংগঠনের কোনো পদপদবি না থাকলেও মন্ত্রীর ভাই পরিচয়ে ব্যবসা ও ঠিকাদারি কাজে ব্যাপক সুযোগ-সুবিধা নিয়েছেন।

পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, রংপুরে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সময় ৪ আগস্ট সংঘর্ষে ছাত্রলীগের কাউনিয়া শাখার সাবেক উপপরিবেশ–বিষয়ক সম্পাদক মাহমুদুল হাসান মুন্নাসহ আওয়ামী লীগের ৪ নেতা নিহত হন। ওই ঘটনায় গত ৩১ আগস্ট রংপুর মেট্রোপলিটন কোতোয়ালি থানায় বাদী হয়ে একটি হত্যা মামলা করেন তাঁর বাবা ও কাউনিয়া উপজেলার পূর্ব চান্দঘাটের বাসিন্দা আবদুল মজিদ। এতে এজাহারভুক্ত ১২৮ আসামির মধ্যে ১৬ নম্বরে আছে শামসুজ্জামানের নাম।

গ্রেপ্তারের বিষয়টি নিশ্চিত করে লালমনিরহাট ডিবি পুলিশের ওসি আমিরুল ইমলাম বলেন, গতকাল রাতেই তাঁকে রংপুর কোতোয়ালি থানায় হস্তান্তর করা হয়েছে।

মানিকগঞ্জ জেলা ডিবির কার্যালয় এবং স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে গত ৪ আগস্ট বিকেলে মানিকগঞ্জ জেলা শহরের শহীদ রফিক সড়কে জেলা বিএনপির কার্যালয় ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ করে আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীরা। এ ঘটনায় গত ২৫ সেপ্টেম্বর পৌর স্বেচ্ছাসেবক দলের আহ্বায়ক ও জেলা জজ আদালতের আইনজীবী মুরাদ হোসেন থানায় মামলা করেন। এ মামলায় মানিকগঞ্জ-৩ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য ও স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক, জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি গোলাম মহীউদ্দীন, সাধারণ সম্পাদক আবদুস সালাম ও সদস্য আবদুস সালামসহ ৯১ জনের নাম উল্লেখসহ অজ্ঞাতপরিচয় আরও ১৫০ জনকে আসামি করে মামলা করা হয়। এ মামলায় গতকাল সালামকে জেলা শহরের বাসা থেকে গ্রেপ্তার করে ডিবি পুলিশের একটি দল।

মানিকগঞ্জ সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) এস এম আমান উল্লাহ বলেন, আজ সোমবার দুপুরে আদালতের মাধ্যমে সালামকে কারাগারে পাঠানো হয়েছে।