ছাতকে ৫ চেয়ারম্যান প্রার্থীর ৪ জনই প্রবাসী
সুনামগঞ্জের ছাতক উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন পাঁচজন। এর মধ্যে চারজনই প্রবাসী। তবে সব প্রার্থী আওয়ামী ঘরানার। কেউ নেতা, কেউ সমর্থক।
সুনামগঞ্জে যেকোনো নির্বাচনে প্রবাসীরা প্রার্থী হন। বিশেষ করে স্থানীয় নির্বাচনে প্রবাসীরা প্রার্থী হন বেশি। ভোটের মাঠে প্রবাস থেকে এসে প্রচারণায় অংশ নেন তাঁদের স্বজনেরা। প্রার্থীদের বেশিসংখ্যক হন যুক্তরাজ্যপ্রবাসী। সিলেট অঞ্চলে ভোটের মাঠে তাঁরা ‘লন্ডনি’ প্রার্থী হিসেবে পরিচিত।
সুনামগঞ্জের জগন্নাথপুর ও ছাতক উপজেলাতেই যুক্তরাজ্যপ্রবাসী বেশি। এবার জগন্নাথপুরে নির্বাচন হচ্ছে না। ছাতক উপজেলায় চেয়ারম্যান পদে চারজন প্রবাসী প্রার্থীর মধ্যে তিনজন যুক্তরাজ্য ও একজন কানাডাপ্রবাসী।
চেয়ারম্যান পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতায় থাকা এই পাঁচ প্রার্থী হলেন ছাতক উপজেলা পরিষদের বর্তমান ভাইস চেয়ারম্যান ও উপজেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম আহ্বায়ক আবু সাদাত মো. লাহিন, আওয়ামী লীগ নেতা যুক্তরাজ্যপ্রবাসী আওলাদ আলী রেজা, রফিকুল ইসলাম (কিরণ) ও মাহমুদ আলী এবং কানাডাপ্রবাসী আমজদ আলী।
স্থানীয় লোকজন বলছেন, এসব প্রার্থীদের কেউ কেউ নিজে অথবা কারও পরিবার দীর্ঘদিন থেকে আওয়ামী লীগের রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত। আবার প্রবাসী প্রার্থীদের মধ্যে কেউ কেউ আছেন ধনেজনে বলবান। তাই মাঠে জোরেশোরে আছেন তাঁরা। দিনরাত প্রচার চালিয়ে যাচ্ছেন।
আবু সাদাত মো. লাহিন ছাতক উপজেলা পরিষদের বর্তমান ভাইস চেয়ারম্যান। ছাত্রলীগ ও যুবলীগ করে এসে এখন আওয়ামী লীগে সক্রিয়। তাঁর সমর্থকেরা লাহিনকে একমাত্র ‘স্বদেশি প্রার্থী’ বলে বিভিন্ন সভা-সমাবেশে প্রচার দিচ্ছেন। তাঁর পক্ষে মাঠে আছেন উপজেলা পরিষদের বর্তমান চেয়ারম্যান ও উপজেলা আওয়ামী লীগের আহ্বায়ক ফজলুর রহমান।
তবে এই উপজেলায় আওয়ামী লীগে বিভক্তি বহু পুরোনো। একদিকে স্থানীয় সংসদ সদস্য মুহিবুর রহমান, অন্যদিকে জেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক শামীম আহমেদ চৌধুরীর পরিবার। গত জাতীয় সংসদ নির্বাচনে এই দুজনের মধ্যে শক্ত প্রতিদ্বন্দ্বিতা হয়েছে। উপজেলা নির্বাচনে সংসদ সদস্য নীরব থাকলেও মাঠে নানাভাবে সংসদ সদস্য নিজের পক্ষ আছেন এমনটা বোঝানোর চেষ্টা করছেন কেউ কেউ।
আওলাদ আলী রেজা উপজেলায় আওয়ামী রাজনীতিতে ছাত্রজীবন থেকেই সক্রিয়। উপজেলার গোবিন্দগঞ্জ আবদুল হক স্মৃতি কলেজ ছাত্র সংসদের সহসভাপতি (ভিপি) ছিলেন। ভোটের মাঠে এবার জোরেশোরে আছেন। তাঁর পক্ষে আছে উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান দলের নেতা অলিউর রহমান চৌধুরী।
রফিকুল ইসলাম উপজেলা গোবিন্দগঞ্জ-সৈয়দের ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান আওয়ামী লীগ নেতা সুন্দর আলীর ছেলে। একসময় ছাত্রলীগ করেছেন। রফিকুল ইসলামের সমর্থকেরা প্রচারণায় সংসদ সদস্য তাঁদের পক্ষে আছেন, এমন বার্তা দেওয়ার চেষ্টা করছেন।
কানাডাপ্রবাসী আমজদ আলী ও যুক্তরাজ্যপ্রবাসী মাহমুদ আলীও মাঠে আছেন। সভা-সমাবেশ করে যাচ্ছেন।
আবু সাদাত মো. লাহিন বলছেন, তিনি ছাত্রলীগ, যুবলীগ করা লোক। এখন আওয়ামী লীগ করছেন। দলের জন্য নিবেদিত। তাই নেতা-কর্মীরা তাঁর পক্ষেই বেশি আছেন।
আওলাদ আলী রেজা ভোটারদের দেখেশুনে ভোট দেওয়ার অনুরোধ করছেন। তিনি জয়ের ব্যাপারে আশাবাদী।
রফিকুল ইসলাম আওয়ামী পরিবারের সন্তান হিসেবে দলের নেতা-কর্মীদের সমর্থন প্রত্যাশা করেন। তিনি বলেন, ‘একসময় ছাত্রলীগ করেছি। সব সময় দলের সঙ্গে আছি। আশা করি দলমত–নির্বিশেষে সবার ভোট আমি পাব।’
ছাতক উপজেলার গোবিন্দগঞ্জ এলাকার বাসিন্দা মিজানুর রহমান বলেন, ‘আমাদের এলাকায় প্রবাসী বেশি। নির্বাচনে প্রবাসীরাও প্রার্থী হন। আমরা তাঁদের সম্মান করি। তাঁরা নির্বাচনকে জমিয়ে রাখেন।’
ছাতক পৌর শহরের বাগবাড়ি এলাকার বাসিন্দা সমাজকর্মী হারুনুর রশিদ বলেন, সব প্রার্থীই ভোটারদের কাছে যাচ্ছেন। ছাতকের ভোটে প্রবাসী কিংবা দেশি প্রার্থী—এমনটা ভেবে নয়, মানুষ যোগ্যতা দেখেই ভোট দেবেন। তবে ভোট নিয়ে মানুষ আগ্রহ কম দেখা যাচ্ছে। প্রার্থীরাও এটা বুঝতে পারছেন। তাই কেন্দ্রে ভোটার উপস্থিতি বাড়ানোর চিন্তাও রাখতে হবে প্রার্থীদের।
ছাতক উপজেলায় একটি পৌরসভা ও ১৩টি ইউনিয়ন। এই উপজেলায় মোট ভোটার ৩ লাখ ১১ হাজার ৯৫৭ জন। কেন্দ্র আছে ১০৩টি। ভোট হবে ২৯ মে।