শরীয়তপুরের জাজিরা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আল-আমিনের (৪৫) ঝুলন্ত মরদেহ উদ্ধারের ঘটনায় জেলা পুলিশ তাঁর হতাশায় ভোগার কথা বলছে। তাদের ভাষ্য, হতাশা থেকে আত্মহত্যা করেছেন আল–আমিন। তবে পরিবারের সদস্যদের দাবি, হতাশায় থাকার তথ্য তাঁরা জানতেন না। পরিবার নিয়ে সুখেই ছিলেন আল–আমিন।
আজ বৃহস্পতিবার দুপুরে জাজিরা থানা ভবনের দ্বিতীয় তলার একটি কক্ষের জানালার সঙ্গে ঝুলন্ত অবস্থায় ওসি আল-আমিনের মরদেহ উদ্ধার করা হয়। মরদেহ উদ্ধারের সময় কক্ষের দরজা খোলা ছিল। সন্ধ্যায় সিআইডি পুলিশের অপরাধ বিশ্লেষণ বিভাগের একটি দল মরদেহটি উদ্ধার করে। সন্ধ্যা ৭টার দিকে আল–আমিনের মরদেহ ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে গেছে পুলিশ।
আল–আমিন বরিশালের মুলাদি উপজেলার কাচিচর গ্রামের মৃত বেলায়েত হোসেনের ছেলে। জাজিরা থানা সূত্র জানায়, আল–আমিন ২০০৭ সালে পুলিশের চাকরিতে যোগ দেন। গত বছর ১৪ সেপ্টেম্বর তিনি জাজিরা থানায় বদলি হয়ে আসেন। এর পর থেকে থানা ক্যাম্পাসের চারতলা ভবনের দ্বিতীয় তলার একটি কক্ষে থাকতেন। আজ সকালে তিনি থানায় তাঁর কার্যালয়ে না এলে ওই থানার এক কনস্টেবল বেলা ১১টার দিকে তাঁকে ফোন করে কিছু জরুরি নথিতে স্বাক্ষর দেওয়ার কথা বলেন। তখন ফোন ধরে ওসি আল–আমিন পরে স্বাক্ষর করবেন বলে ওই পুলিশ সদস্যকে জানিয়ে ফোন রেখে দেন। এর দুই ঘণ্টা পর তিনি তাঁর কার্যালয়ে না আসায় থানার পরিদর্শক (তদন্ত) আবদুস সালাম দ্বিতীয় তলায় ওসির কক্ষে যান। তখন কক্ষের দরজা ধাক্কা দিয়ে ভেতরে প্রবেশ করে জানালার গ্রিলের সঙ্গে ওসির ঝুলন্ত দেহ দেখতে পান। তখন বিষয়টি শরীয়তপুরের পুলিশ সুপারকে জানানো হয়। খবর পেয়ে জেলা প্রশাসক আশরাফ উদ্দিন ও পুলিশ সুপার নজরুল ইসলাম জাজিরা থানায় ছুটে যান।
পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগের (সিআইডির) একটি অপরাধ বিশ্লেষণ দল সন্ধ্যায় জাজিরা থানায় পৌঁছে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটের উপস্থিতিতে মরদেহ নামিয়ে আনে। পরে জাজিরা থানা-পুলিশ মরদেহটির সুরতহাল করে।
ওসি আল–আমিন জাজিরায় চাকরি করলেও তাঁর স্ত্রী–সন্তান ঢাকায় থাকতেন। ১২ বছর বয়সী তাঁর দুই মেয়ে ঢাকার ভিকারুননিসা নূন স্কুলে পড়ালেখা করে। খবর পেয়ে বিকেল ৫টার দিকে আল–আমিনের স্ত্রী শরীফুন্নেছা দুই শিশুকন্যাকে নিয়ে জাজিরায় আসেন।
ওসির মৃত্যুর খবর প্রকাশ পাওয়ার পর জাজিরা থানায় সর্বসাধারণ ও গণমাধ্যমকর্মীদের প্রবেশ বন্ধ করে দেওয়া হয়। বিকেল সাড়ে পাঁচটার দিকে গণমাধ্যমকর্মীদের সঙ্গে কথা বলেন অতিরিক্ত পুলিশ সুপার শেখ শরীফ উজ জামান। তিনি বলেন, ‘ওসি আল–আমিন আজ তাঁর কার্যালয়ে যাননি। তখন থানার কেউ কেউ তাঁকে ফোন করেন। বেলা ১১টা পর্যন্ত থানার সদস্যদের সঙ্গে তাঁর ফোনে কথা হয়েছে। এরপর বেলা সোয়া একটার দিকে আমাদের এক কর্মকর্তা তাঁর কক্ষে গিয়ে ঝুলন্ত দেহ দেখতে পান। তখন কক্ষের দরজা খোলা ছিল। আমরা জেনেছি, আল–আমিন কোনো একটি বিষয় নিয়ে হতাশায় ভুগতেন। তিনি থানা ভবনের যে কক্ষে থাকতেন, সেই কক্ষে আমরা কিছু ওষুধ পেয়েছি, যা হতাশা কাটানোর জন্য খাওয়া হয়। তিনি আত্মহত্যা করেছেন বলে আমরা প্রাথমিকভাবে ধরে নিয়েছি। বেলা ১১টা থেকে বেলা ১টার মধ্যে যেকোনো সময়ে তাঁর মৃত্যু হয়েছে।’
তবে আল–আমিনের কোনো হতাশার কথা জানেন না স্বজনেরা। আল–আমিনের ভায়রা (স্ত্রীর বড় বোনের স্বামী) আবদুর রব বাবুল প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমরা এসে আল–আমিনের দেহ ঝুলে থাকতে দেখেছি। প্রথমে পুলিশ আমাদের তার কাছে যেতে দেয়নি। পরে দেখেছি, ঘরের জানালার সঙ্গে গামছা প্যাঁচানো অবস্থায় আল–আমিনের দেহ ঝুলছে। আসলে কী ঘটেছে, তা আমরাও বুঝতে পারছি না। এখানে এসে পুলিশের কাছে শুনলাম, সে হতাশায় ভুগত। হতাশায় ভোগার তথ্য আমাদের কাছে ছিল না। সে স্ত্রী–সন্তান নিয়ে সুখেই ছিল। কয়েক দিন আগে স্ত্রী ও দুই মেয়ে জাজিরায় কিছুদিন বেড়িয়ে গিয়েছে।’
শরীয়তপুরের পুলিশ সুপার (এসপি) নজরুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, ‘ঘটনাপ্রবাহ ও অন্যান্য বিষয় দেখে মনে হচ্ছে, আল–আমিন আত্মহত্যা করেছেন। তারপরও অধিকতর তদন্ত করা হবে। সিআইডির ফরেনসিক বিশেষজ্ঞদের অধীনে আল–আমিনের মরদেহ ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ময়নাতদন্ত করা হবে।’