‘আমার তো সব শেষ হয়ে গেল’

নড়াইলের লোহাগড়ায় খুন হওয়া নারী শিক্ষক সবিতা রানী
ছবি:সংগৃহীত

‘আমাদের ১৪ বছরের সংসারজীবন। ছেলেমেয়ে নেই। সংসার তিনিই (স্ত্রী) চালাতেন। সবকিছু গুছিয়ে রাখতেন। মধুর জীবন ছিল আমাদের। আমার তো সব শেষ হয়ে গেল।’ নড়াইলের লোহাগড়া উপজেলায় খুন হওয়া নারী শিক্ষক সবিতা রানী বালার স্বামী পরিতোষ কুমার মণ্ডল আজ মঙ্গলবার বিলাপ করতে করতে এ কথাগুলো বলছিলেন।

নড়াইলের লোহাগড়া উপজেলার ইতনা ইউনিয়নের চরদৌলতপুর গ্রামে বসতঘরে গত রোববার গভীর রাতে সবিতা রানী খুন হন। তিনি চরদৌলতপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক হিসেবে কর্মরত ছিলেন। তাঁকে শ্বাসরোধে হত্যার পর স্বর্ণালংকার ও ল্যাপটপ নিয়ে যায় দুর্বৃত্তরা।

স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, পরিতোষ কুমার মণ্ডলের বসতঘরের মেঝে মাটির। একটি কক্ষে একা ছিলেন সবিতা রানী। ওই ঘরে সিঁদ কেটে ঢোকে দুর্বৃত্তরা পরিতোষের স্ত্রী স্কুলশিক্ষক সবিতা রানীকে হত্যা করে। এ নিয়ে আজ মঙ্গলবার প্রথম আলোতে ‘নিজ বাড়িতে নারী শিক্ষককে শ্বাসরোধে হত্যা’ শিরোনামে সংবাদ প্রকাশিত হয়েছে।

এ ঘটনায় গতকাল রাতে পরিতোষ কুমার মণ্ডল বাদী হয়ে লোহাগড়া থানায় মামলা করেন। মামলার তদন্ত কর্মকর্তা লোহাগড়া থানার উপপরিদর্শক (এসআই) সুমন্ত কুমার সাহা প্রথম আলোকে জানান, ঘটনাটি সর্বাধিক গুরুত্ব দিয়ে পুলিশের সব বিভাগ মাঠে নেমেছে। আশা করা হচ্ছে দ্রুতই দুর্বৃত্তদের ধরা সম্ভব হবে। স্থানীয় লোকজন জানান, আগামীকাল বুধবার শিক্ষক, শিক্ষার্থী ও এলাকাবাসী ওই হত্যার বিচার দাবিতে এলাকায় মিছিল সমাবেশ করবেন।

আজ দুপুরে সরেজমিনে দেখা গেছে, সবিতা রানীদের বাড়িতে এলাকার লোকজন ভিড় করছেন। আত্মীয়স্বজনেরা এসে আহাজারি করছেন। স্বামী পরিতোষ মণ্ডল মাঝেমধ্যে কেঁদে উঠছেন, আবার চুপ হয়ে যাচ্ছেন।

নড়াইলের লোহাগড়ায় খুন হওয়া নারী শিক্ষক সবিতা রানীর স্বামী পরিতোষ মণ্ডল আহাজারি করছেন। মঙ্গলবার উপজেলার চরদৌলতপুর গ্রামে
ছবি: প্রথম আলো

স্ত্রীর স্মৃতিচারণা করতে গিয়ে পরিতোষ মণ্ডল জানান, ২০১০ সালে তাঁদের বিয়ে হয়েছে। সবিতার বাবার বাড়ি গোপালগঞ্জের চরভাটপাড়া গ্রামে। ১৯৯৩ সালে সবিতা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক হিসেবে যোগদান করেন। বিয়ের পর ২০১১ সালের জুনে লোহাগড়ার চরদৌলতপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক হিসেবে কর্মজীবন শুরু করেন। দুবার উপজেলার শ্রেষ্ঠ শিক্ষক নির্বাচিত হয়েছেন। পরিতোষ বলছিলেন, অনেক বড় মনের মানুষ ছিলেন তিনি। জীবনের সবকিছু মানুষের জন্য করেছেন।

চরদৌলতপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের পঞ্চম শ্রেণির শিক্ষার্থী লামিয়া, শাওন, শরিফা, ওমর, বর্ষা ও মহসিনা বলে, ‘আমাদের খুব ভালোবাসতেন ম্যাডাম। আমাদের মেয়ের মতো দেখতেন।’ ১০ বছর একসঙ্গে শিক্ষকতা করছেন সহকারী শিক্ষক নাজমা খাতুন। তিনি জানান, একজন সৎ, কর্মঠ, সাহসী, স্পষ্টভাষী, মানবিক ও দানশীল মানুষ ছিলেন সবিতা রানী।

এলাকার সাংস্কৃতিক সংগঠক নারায়ণ চন্দ্র বিশ্বাস বলেন, এলাকায় সবিতা রানীর খুব সুনাম। অনেক বড় মনের মানুষ ছিলেন তিনি। স্বামীর আত্মীয়স্বজনের মধ্যে অন্তত তিন-চারটি পরিবারের সংসার তিনি চালাতেন।