রাজশাহীতে আলুচাষিদের সমাবেশ, ভাড়া বাড়ানোয় হিমাগার ঘেরাও করার ডাক
হিমাগারে আলু রাখার ভাড়া চার টাকা কেজির পরিবর্তে আট টাকা করার প্রতিবাদে রাজশাহীর আলুচাষি ও ব্যবসায়ীরা প্রতিবাদ সমাবেশ করেছেন। গতকাল বৃহস্পতিবার বিকেলে তানোর উপজেলার গোল্লাপাড়া মাঠে সমাবেশে তাঁরা বলেছেন, দেশে বিদ্যুতের দাম বাড়েনি অথচ অযৌক্তিকভাবে হিমাগারের আলুর ভাড়া বাড়ানো হয়েছে। আগামী ১০ জানুয়ারির মধ্যে এই সিদ্ধান্ত প্রত্যাহার করা না হলে আবার সমাবেশ করে হিমাগার ঘেরাও করা হবে।
সমাবেশে জানানো হয়, গত বছর হিমাগারে আলু রাখায় বস্তাপ্রতি ‘পেইড বুকিং’ ছিল ২১০ থেকে ২২০ টাকা। সাধারণ ভাড়া বা ‘লুজ বুকিং’ ছিল ২৮৫ টাকা পর্যন্ত। সরকারিভাবে বস্তায় ৫০ কেজি পর্যন্ত আলু রাখার নিয়ম; কিন্তু সচরাচর কৃষকেরা ৬০-৬৫ কেজি পর্যন্ত আলু রাখার সুযোগ পান। পেইড বুকিং আলু ওঠার এক বছর আগেই দিতে হয়। আর লুজ বুকিংয়ের ভাড়া আলু হিমাগার থেকে বের করার সময় পরিশোধ করতে হয়। সব মিলিয়ে প্রতি কেজি আলুর জন্য গড়ে হিমাগারের ভাড়া পড়ে পাঁচ টাকা।
বক্তারা বলেন, এবার ইতিমধ্যে বাংলাদেশ কোল্ডস্টোরেজ সমিতি প্রতি কেজি আলুর ভাড়া নির্ধারণ করেছে আট টাকা। বিভিন্ন দেশে শিল্পপতিরাই কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করেন। আর এখানে হিমাগারের মালিকেরা কৃষকদের শোষণ করছেন। এটা মানা যায় না। এবার একটু বেশি আলু চাষ দেখেই হিমাগারের মালিকেরা সিন্ডিকেট করে সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। তাঁরা সমাবেশ থেকে ঘোষণা দেন, গত বছর যে ভাড়ায় আলু রেখেছেন, এবারও সেভাবেই আলু রাখবেন।
সমাবেশে সভাপতিত্ব করেন রাজশাহী আলুচাষি ও জেলা আলু ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি নূরুল ইসলাম। সমাবেশ শেষে তাঁরা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কাছে একটি স্মারকলিপি জমা দেন।
হিমাগারের মালিকেরা ব্যবসায়ী বা কৃষকের সঙ্গে আলোচনা না করেই ভাড়া বাড়িয়েছেন বলে জানান, পবা উপজেলার বড়গাছি এলাকার আলুচাষি ও ব্যবসায়ী ইমরান আলী। প্রশ্ন ছুড়ে তিনি বলেন, ‘হিমাগারের মালিকেরা কি বাংলাদেশের বাইরের লোক? আমরা সবাই যদি ঐক্যবদ্ধ থাকি, তাহলে ম্যানেজার যা বলবে তা হবে না। আমরা সফল হব। গত দুই বছর থেকে চাষিরা হয়তো দুই টাকা লাভ করছে, এইটা আর তারা সহ্য করতে পারছে না। তাদের মাথার ভেতর কিলবিল করতে শুরু করেছে, কৃষকদের কী করে পথে বসানো যায়।’
হিমাগারে আলুর ভাড়া বাড়ানোর কোনো যৌক্তিকতা নেই দাবি করে কৃষক আবু সাঈদ বলেন, ‘দেশে এখন বিদ্যুতের দাম বাড়েনি। ভবিষ্যতে আলোচনার মাধ্যমে তারা যদি আমাদের সঙ্গে একমত না হয়, তাহলে আমরা ঐক্যবদ্ধ হয়ে তাদের বিরুদ্ধে আন্দোলন গড়ে তুলব এবং ন্যায্য দাবি আদায় করব।’ আলুচাষি ও তানোর পৌরসভার সাবেক কাউন্সিলর আবদুল মান্নান বলেন, ‘হিমাগার ব্যবসায়ীরা যা খুশি তা করতে পারবে না। আমরা রাস্তায় ব্যারিকেড সৃষ্টি করব।’
১০ জানুয়ারির মধ্যে হিমাগারের মালিকেরা যদি কৃষকদের দাবি না মানেন তাহলে আবার সমাবেশের আয়োজন করা হবে। হিমাগার ঘেরাও করা হবে।আবদুল মতিন, তানোর আলুচাষি সমিতির সাধারণ সম্পাদক
‘চাষি বাঁচলে দেশ বাঁচবে, সবাই বাঁচবে’ উল্লেখ করে কাজী রশিদুল ইসলাম বলেন, ‘আমরা যদি না বাঁচি, দশতালা ভবনে খাবার যাবে না। আমরা যদি জমিতে না যাই তাহলে চাকরিজীবী বাজারে গিয়ে কিছু পাবে না। যারা সিন্ডিকেট করে ভাড়া বাড়াচ্ছে, তাদের আমাদের দাঁতভাঙা জবাব দেওয়ার জন্য একত্র হতে হবে।’
তানোর আলুচাষি সমিতির সাধারণ সম্পাদক আবদুল মতিন জানান, আগামী ১০ জানুয়ারির মধ্যে হিমাগারের মালিকেরা যদি কৃষকদের দাবি না মানেন তাহলে আবার সমাবেশের আয়োজন করা হবে। হিমাগার ঘেরাও করা হবে।