নরসিংদীতে বিএনপি কার্যালয়ে ছাত্রদলের দুই পক্ষের সংঘর্ষ, পরে হাসপাতালে গিয়েও হামলা

সংঘর্ষে আহত ব্যক্তিরা নরসিংদী সদর হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে আসেন। পরে সেখানেও প্রতিপক্ষ হামলা করে। গতকাল বৃহস্পতিবার রাতেছবি: প্রথম আলো

নরসিংদীতে জেলা বিএনপির অস্থায়ী কার্যালয় হিসেবে ব্যবহৃত দলের যুগ্ম মহাসচিব খায়রুল কবির খোকনের বাসভবনে চেয়ারে বসা নিয়ে ছাত্রদলের দুই পক্ষের সংঘর্ষে অন্তত ১৪ জন আহত হয়েছেন।

গতকাল বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা ৭টার দিকে কার্যালয়ের নিচতলায় প্রথম দফায় দুই পক্ষের সংঘর্ষ হয়। পরে রাত ৯টার দিকে আহত ব্যক্তিরা নরসিংদী সদর হাসপাতালে চিকিৎসা নেওয়ার সময় আরেক দফা হামলার ঘটনা ঘটে।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, জেলা ছাত্রদল সভাপতি ছিদ্দিকুর রহমান (নাহিদ) ও সাবেক যুগ্ম আহ্বায়ক জাহিদ হোসেনের (জাপ্পি) কর্মী-সমর্থকদের মধ্যে এ হামলা-সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে।

নরসিংদী সদর হাসপাতালে চিকিৎসা নেওয়া আহত ব্যক্তিরা হলেন জেলা ছাত্রদলের সাবেক যুগ্ম আহ্বায়ক শহরের ব্রাহ্মন্দী এলাকার জাকির হোসেনের ছেলে জাহিদ হোসেন (২৮), তাঁর কর্মী মিনহাজুর রহমান (২৩), ইয়াসিন আহমেদ (২৯), সানভির আলম নিবিড় (২৫), সাইফুল ইসলাম (২৭), জাহিদ বিন রাফি (২২), দুলাল (২৫), রিপন (২২), তৌফিক (২৭), অয়ন (২৯), শিমুল (২০), শিপন (২৫), জীবন (২০) এবং জেলা যুবদলের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক জামান মিয়া (২৪)।

আহত ছাত্রদল নেতা–কর্মীদের ভাষ্য, গতকাল দুপুরে বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী বৈষম্যবিরোধী ছাত্র–জনতার আন্দোলনে নিহত ব্যক্তিদের পরিবারকে আর্থিক সহায়তা প্রদান অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হয়ে নরসিংদীতে আসেন। তিনি চলে যাওয়ার পর সন্ধ্যায় বিএনপির অস্থায়ী কার্যালয় হিসেবে ব্যবহৃত বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব খায়রুল কবির খোকনের বাসভবনে সভা শুরু হচ্ছিল। সামনের দিকের কিছু চেয়ারে জাহিদ হোসেনের কর্মীরা বসতে গেলে তাঁদের বাধা দেন ছিদ্দিকুর রহমান। এ নিয়ে বাগ্‌বিতণ্ডার একপর্যায়ে হাতাহাতি ও মারামারি শুরু হয়। এ সময় জ্যেষ্ঠ নেতাদের হস্তক্ষেপে পরিস্থিতি শান্ত হয়। আহত ব্যক্তিরা নরসিংদী সদর হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে যান। রাত ৯টার দিকে ওই হাসপাতালে ঢুকে চিকিৎসা নিতে আসা নেতা-কর্মীদের ওপর হামলা চালান ছিদ্দিকুর রহমান পক্ষের কর্মীরা। সেখানে অন্তত তিনজনকে কুপিয়ে আহত করা হয়।

নরসিংদী সদর হাসপাতালের আবাসিক চিকিৎসা কর্মকর্তা (আরএমও) মাহমুদুল কবির বাসার জানান, ওই ঘটনায় ১৪ জন জরুরি বিভাগে চিকিৎসা নিয়েছেন। তাঁদের মধ্যে ৪ জনকে উন্নত চিকিৎসার জন্য ঢাকায় নেওয়ার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। হাসপাতাল কমপ্লেক্সে ঢুকে আতঙ্ক সৃষ্টি এবং অন্তত ৩ জনকে কুপিয়ে জখম করা হয়েছে। হাসপাতালের জরুরি বিভাগের একটি কক্ষে ভাঙচুরের চেষ্টাও চালানো হয়েছে।

আহত ছাত্রদল নেতা জাহিদ হোসেন বলেন, ‘দলীয় কার্যালয়ে আমাদের ওপর হামলা করা হয়েছে। হাসপাতালে চিকিৎসা নেওয়ার সময় আবারও অস্ত্র নিয়ে হামলা চালিয়ে আমাদের চারজনকে কুপিয়ে আহত করেছেন নাহিদ ও তাঁর কর্মীরা। অথচ বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে আমরা রাজপথে ছিলাম। আর তিনি (নাহিদ) ছিলেন জেলে। সম্প্রতি জেলা আইনজীবী সমিতিতেও তাঁর নেতৃত্বে হামলা-ভাঙচুরের ঘটনা ঘটেছে। দুই ছাত্রদল নেতার হত্যা মামলার তিন নম্বর আসামি তিনি। তাঁর বিচার করা না হলে নরসিংদীকে তিনি অপরাধের রাজ্যে পরিণত করবেন।’

হাসপাতালে হামলার অভিযোগ অস্বীকার করেছেন ছিদ্দিকুর রহমান। তিনি বলেন, ‘কার্যালয়ে সামান্য বিষয়ে কর্মীদের মধ্যে কথা-কাটাকাটি হয়েছিল। আমাকে আহত করা হয়েছে—এমন গুজব ছড়ানোর পর আমার শুভাকাঙ্ক্ষীরা ভেবেছিলেন আমি হয়তো নরসিংদী সদর হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে গেছি। তাঁরা আমাকে দেখার জন্য হাসপাতালে গিয়েছিলেন। হামলার সঙ্গে তাঁরা জড়িত নন। যদি হাসপাতালে হামলার ঘটনা ঘটে থাকে, তাহলে সিসিটিভি ফুটেজ দেখে অপরাধীদের শনাক্ত করে বিচারের আওতায় আনা হোক।’

নরসিংদী মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) এমদাদুল হক জানান, ছাত্রদলের দুই পক্ষের মধ্যে সামান্য বিষয় নিয়ে মারামারি হয়েছে। আহত ব্যক্তিরা নরসিংদী সদর হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে গেলে সেখানে আবার হামলার ঘটনা ঘটে। পুলিশ ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে বিস্তারিত জানার চেষ্টা করছে। এ ঘটনায় কেউ অভিযোগ দেননি।