প্রবাসজীবন ছেড়ে রাজবাড়ীর কাজী সিদ্দিক মাল্টার সফল চাষি

রাজবাড়ীর কাজী সিদ্দিক প্রবাসজীবন ছেড়ে বাণিজ্যিকভাবে মাল্টার আবাদ শুরু করেন। নিজের বাগানের পরিচর্যায় ব্যস্ত সময় কাটান তিনি। গত বৃহস্পতিবার
ছবি: প্রথম আলো

রাজবাড়ী সদর উপজেলার বসন্তপুর ইউনিয়নের বড় ভবানীপুর গ্রামের কাজী সিদ্দিক থাকতেন দুবাইয়ে। ইউটিউব দেখে বাণিজ্যিকভাবে ফলের বাগান করার আগ্রহ জাগে। দেশে কিছু একটা করবেন—এ ভেবে ১২ বছর পর দেশে ফিরে আসেন। সে ইচ্ছা থেকে ২০২০ সালের জানুয়ারিতে চার বিঘা জমিতে দক্ষিণ আফ্রিকার রঙিন মাল্টার প্রায় ৪০০ চারা রোপণ করেন। ফল আসার পর সব নিমেষেই বিক্রি হয়ে যায়।

এরপর আর পেছনে ফিরে তাকাতে হয়নি সিদ্দিককে। এখন প্রায় ১২ বিঘা জমিতে রঙিন মাল্টা ও বারি জাতের ৮০০ বেশি মাল্টাগাছ রয়েছে তাঁর বাগানে। বাগানের নাম দিয়েছেন ‘কাজী গ্রিন চ্যানেল ফ্রেশ অর্গানিক ফুডস’। মাল্টা রোপণের পর একটি গাছ থেকে প্রায় ২০ বছর ফল পাওয়া যায়। ফলে নেই বাড়তি ঝক্কি। তাঁর এই বাগান দেখতে ও তাঁর পরামর্শ নিতে দূরদূরান্ত থেকে অনেকে আসছেন। তাঁদের চারাও বিক্রি করছেন তিনি। বাগান থেকে প্রতিবছর ১০ লাখ থেকে ১২ লাখ টাকা আয় হচ্ছে।

গত বৃহস্পতিবার সরেজমিনে দেখা যায়, বড় ভবানীপুর গ্রামের পথের দুই পাশে রয়েছে তাঁর বাগান। এক পাশে প্রায় ৯ বিঘা, আরেক পাশে আরও প্রায় ৩ বিঘা জমি। বাগানের চারপাশ বাঁশ ও জাল দিয়ে ঘেরা। প্রতিটি গাছের ডালে থোকায় থোকায় ঝুলছে রঙিন মাল্টা। পাশাপাশি কমলা ও সাথি ফসল হিসেবে অনেক গাছে পেঁপে ধরেছে। বাগানে তিন-চারজন শ্রমিক কাজ করছেন। কেউ মাল্টা কাটছেন, কেউ ফল বিক্রির প্রক্রিয়া করছেন। তাঁদের কাজে সহযোগিতা করছেন কাজী সিদ্দিক নিজেও।

শ্রমিক মোস্তাক মণ্ডল বলেন, তাঁরা চারজন নিয়মিত কাজ করেন। এমন সুন্দর বাগান হওয়ায় স্থানীয়ভাবে তাঁদের কাজের ব্যবস্থার পাশাপাশি পরিবারের ফলের চাহিদাও পূরণ হচ্ছে। দূরদূরান্ত থেকে অনেকে বাগান দেখতে আসেন। তাঁরা বাগান থেকে ফল কেনার পাশাপাশি চারা গাছও কিনে নেন।  

কাজী সিদ্দিক বলেন, দুবাইতে কোনোভাবে জীবন কেটে যাচ্ছিল। তিনি সব সময় বিদেশে না থেকে দেশে ফিরে কিছু করতে চেয়েছিলেন। সেই চিন্তাধারা থেকে ইউটিউবে মাল্টা চাষ দেখে উদ্বুদ্ধ হন। দেশে ফিরে ২০২০ সালের জানুয়ারিতে এলাকায় নিজের চার বিঘা জমিতে ৪০০টির মতো দক্ষিণ আফ্রিকার রঙিন মাল্টার চারা রোপণ করেন। নিয়মিত বাগানের যত্ন করায় ভালো ফলন হয়। পরে জমির পরিমাণ বাড়িয়ে বারি জাতের চারাও রোপণ করেন। মাল্টা বিক্রির টাকা দিয়ে ৯ বিঘা জমির বাগান করেন। তাতে চায়নিজ ও দার্জিলিং জাতের কমলা, সাথি ফসল হিসেবে পেঁপেগাছও রোপণ করেন। বর্তমানে ১২ বিঘার ওপর জমিতে তাঁর মিশ্র ফলের বাগান রয়েছে।

সাথি ফসল হিসেবে চাষ করছেন পেঁপের
ছবি: প্রথম আলো

সিদ্দিক দাবি করেন, রাজবাড়ী ও ফরিদপুর জেলার মধ্যে দক্ষিণ আফ্রিকার রঙিন মাল্টা তাঁর বাগানে রয়েছে। দ্বিতীয়টি আর কোথাও চাষ হচ্ছে কি না, তাঁর জানা নেই। রঙিন জাতের একেকটি মাল্টা আকারে অনেক বড়, ভেতরে ভরপুর রস। যাঁরা উদ্যোক্তা হতে চান, তাঁদের তিনি রঙিন মাল্টা বাগানের পরামর্শ দিচ্ছেন। তবে বারি-১ জাতের মাল্টা চাষ কিছুটা ঝুঁকিপূর্ণ। কারণ, তাতে ভাইরাসে আক্রমণ করে বেশি। তিনি বলেন, এ বছর নভেম্বর মাস পর্যন্ত ১২ লাখ টাকার মতো মাল্টা বিক্রি করেছেন। ফল প্রায় শেষের দিকে হলেও এখনো কিছু মাল্টা, কমলা ও পেঁপে রয়েছে। পাশাপাশি মাল্টার চারা বিক্রি করছেন তিনি। একেকটি চারা গাছ ২০০ টাকা করে বিক্রি করছেন। কাজের স্বীকৃতি হিসেবে ২০২২ সালে তিনি রাজবাড়ী সদর উপজেলা কৃষি বিভাগ থেকে সেরা কৃষি উদ্যোক্তার পুরস্কার পেয়েছেন।

সদর উপজেলার কৃষি কর্মকর্তা মো. জনি খান প্রথম আলোকে বলেন, কাজী সিদ্দিকের বাগানের ফল আকারে যেমন বড়, দেখতেও অনেক সুন্দর, রসাল ও মিষ্টি। স্বল্প দিনেই লাভবান হওয়ায় কাজী সিদ্দিক সুনাম কুড়িয়েছেন। কৃষি বিভাগ থেকে তাঁকে নিয়মিত পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে।