গাজীপুরে কারখানা ছুটির পর আবার শ্রমিক বিক্ষোভ, দুই মহাসড়ক বন্ধ
গাজীপুরের বিভিন্ন পোশাক কারখানায় ছুটির পর বিকেলে মহাসড়ক অবরোধ করে আবার বিক্ষোভ শুরু করেছেন পোশাকশ্রমিকেরা। আজ বুধবার বিকেলে শ্রমিকেরা ঢাকা-ময়মনসিংহ ও ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়কের বিভিন্ন জায়গায় অবস্থান নিয়ে বিক্ষোভ শুরু করেন।
মহাসড়কে অবস্থান নেওয়ায় দুই মহাসড়কেই যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। এ সময় মহাসড়কের দুই পাশের বিভিন্ন কারখানায় ঢিল ছুড়ে ভাঙচুর করেন শ্রমিকেরা। খবর পেয়ে থানা ও শিল্প পুলিশ কাঁদানে গ্যাসের শেল, রাবার বুলেট ও সাউন্ড গ্রেনেড ছুড়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করছে। বিকেল সাড়ে পাঁচটায় এ প্রতিবেদন লেখা পর্যন্ত পাঁচজন পুলিশ সদস্যের আহত হওয়ার খবর পাওয়া গেছে।
এর আগে আজ সকাল থেকে পোশাকশ্রমিকদের ন্যূনতম মজুরি ২৩ হাজার টাকা করার দাবিতে নগরের কোনাবাড়ী, জরুন, বাইমাইলসহ বিভিন্ন এলাকায় বিক্ষোভ শুরু করেন শ্রমিকেরা। কোনাবাড়ীতে পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষে আঞ্জুয়ারা খাতুন (৩০) নামের এক নারী পোশাকশ্রমিক নিহত হন। এরপর জেলার কোথাও শ্রমিক বিক্ষোভের কথা শোনা যায়নি।
শিল্প পুলিশ ও শ্রমিকেরা জানান, বেতন বাড়ানোর দাবিতে ২৩ অক্টোবর থেকে গাজীপুরের বিভিন্ন এলাকায় বিক্ষোভ করে আসছিলেন শ্রমিকেরা। এরপর গতকাল মঙ্গলবার মালিক ও শ্রমিক প্রতিনিধিদের সঙ্গে বৈঠকের পর ন্যূনতম মজুরি সাড়ে ১২ হাজার টাকা নির্ধারণ করে সরকার। কিন্তু এতে সন্তুষ্ট নন শ্রমিকেরা। এ জন্য আবার তাঁরা আন্দোলনে নেমেছেন।
পুলিশ, পোশাকশ্রমিক ও স্থানীয় লোকজনের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, সকালে পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষে এক শ্রমিক নিহত হওয়ার পর জেলার বিভিন্ন এলাকায় বিক্ষোভ থেমে যায়। বিকেলে কারখানা ছুটি ঘোষণার পর চারটার পর থেকে নগরের শিববাড়ী, চান্দনা চৌরাস্তা, নাওজোড়, ইটাহাটা ও ভোগাড়া এলাকার বেশ কয়েকটি কারখানার শ্রমিকেরা সরকার ঘোষিত নতুন বেতনকাঠামো প্রত্যাহার করে বিক্ষোভ শুরু করেন। একপর্যায়ে তাঁরা ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়কের নাওজোড় এলাকায় ও ঢাকা–টাঙ্গাইল মহাসড়কের চান্দনা চৌরাস্তায় সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ শুরু করেন। এতে মহাসড়কে যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। পরে শ্রমিকেরা বিভিন্ন এলাকায় মহাসড়কের দুই পাশের কারখানায় ঢিল ছুড়ে ভাঙচুর করতে থাকেন। খবর পেয়ে থানা ও শিল্প পুলিশ কাঁদানে গ্যাসের শেল, রাবার বুলেট ও সাউন্ড গ্রেনেড ছুড়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করছে। এ সময় পুলিশের পাঁচজন সদস্য আহত হন।
গাজীপুরের শহীদ তাজউদ্দীন আহমদ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের আবাসিক চিকিৎসক রফিকুল ইসলাম বলেন, আহত অবস্থায় পাঁচজন পুলিশ সদস্যকে হাসপাতালে নিয়ে আসা হয়েছে। তাঁদের মধ্যে গুরুতর আহত প্রবীর (৩০), ফুয়াদ (২৮) ও খোরশেদকে (৩০) উন্নত চিকিৎসার জন্য ঢাকায় পাঠানো হয়েছে। আশিকুল (২৭) ও বিপুলকে (২৪) হাসপাতালে ভর্তি রেখে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে। আহত ব্যক্তিদের মধ্যে ফুয়াদের অবস্থা বেশি গুরুতর। তাঁর ডান হাতের কবজি থেঁতলে গেছে।
গাজীপুর শিল্প পুলিশের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার ইমরান আহমেদ প্রথম আলোকে বলেন, বিকেলে শ্রমিকেরা রাস্তায় নেমে বিভিন্ন এলাকায় বিক্ষোভ ও ভাঙচুর করেন। পুলিশ তাঁদের নিয়ন্ত্রণ করার চেষ্টা করছে।