রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়—১
আবাসিক হলে ‘ছায়া বাহিনী’ ছাত্রলীগের
ছাত্রদের ১১টি হলে চলছে ‘দায়িত্বপ্রাপ্ত’ নেতাদের দাপট। সাধারণ ছাত্রের পাশাপাশি হল প্রশাসন, এমনকি ছাত্রলীগ নেতারাও যেন অসহায়।
বিভিন্ন হলে তিনজনকে মারধর, চারজনকে বের করে দেওয়া, দুটি দোকানে চাঁদাবাজি, এক শিক্ষার্থী ও দলীয় এক নেতাকে হুমকি দেওয়ার অভিযোগ।
প্রতিটি হলে আসন দখলের জন্য দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতারা কক্ষে কক্ষে গিয়ে রুমওয়ার্ক কর্মসূচি করেন।
ছাত্রদের সব হলে ছাত্রলীগের কমিটি আছে। পাশাপাশি আস্থাভাজনদের দিয়ে ‘দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতা’ নামে নতুন এক পদ সৃষ্টি করেছেন রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক। ছাত্রদের ১১টি হলে এখন এই দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতাদের দাপট চলছে। পরিস্থিতি বলছে, এই নেতারা যেন হলে নানা ‘অপকর্ম করার দায়িত্ব’ নিয়েছেন।
শিক্ষার্থী ও হল প্রশাসনের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, গত বছরের অক্টোবরে বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের নতুন কমিটি গঠনের পর সভাপতি মোস্তাফিজুর রহমান (বাবু) ও সাধারণ সম্পাদক আসাদুল্লা-হিল-গালিবের পক্ষ থেকে প্রতিটি হলে দুজন করে ‘দায়িত্বপ্রাপ্ত’ নেতা দেওয়া হয়। এর পর থেকে এ পর্যন্ত বিভিন্ন হলে তিনজনকে মারধর, চারজনকে হল থেকে বের করে দেওয়া, দুটি দোকানে চাঁদাবাজি, এক শিক্ষার্থী ও দলীয় এক নেতাকে হুমকি দেওয়ার অভিযোগ পাওয়া গেছে। এমন আরও অভিযোগ আছে, যা ভয়ে শিক্ষার্থীরা প্রকাশ করেন না। এ ছাড়া নিজেদের মধ্যে হাতাহাতি, মহড়া ও সংঘর্ষের ঘটনাও ঘটেছে। তাঁদের দাপটে সাধারণ ছাত্রের পাশাপাশি হল প্রশাসন এমনকি অন্য ছাত্রলীগ নেতারাও অসহায় বোধ করছেন।
জানতে চাইলে ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক শেখ ওয়ালী আসিফ ইনান প্রথম আলোকে বলেন, ‘এ সম্পর্কে আমরা অবগত নই। দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতা মনোনীত করার বিষয়টি ছাত্রলীগের গঠনতন্ত্রের সঙ্গে সাংঘর্ষিক হলে অবশ্যই ব্যবস্থা নেওয়া হবে। আর ছাত্রলীগের নাম ব্যবহার করে কারও অন্যায় কাজে জড়ানোর সুনির্দিষ্ট অভিযোগ পেলে আমরা ব্যবস্থা নিয়ে থাকি।’
প্রতিটি হলে ছাত্রলীগ একধরনের ‘ছায়া প্রশাসন’ সৃষ্টি করেছে। হলে কে উঠবেন, কে নামবেন, সেটি তারা নিয়ন্ত্রণ করছে।অধ্যাপক ফরিদ উদ্দিন খান অর্থনীতি বিভাগ, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়
দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতাদের বিরুদ্ধে যত অভিযোগ
১৪ মে মধ্যরাতে মাদার বখ্শ হলে এক শিক্ষার্থীকে ঘুম থেকে তুলে আসন থেকে বিছানাপত্র নামিয়ে দেন হল ছাত্রলীগের দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতা মিশকাত হাসান ও তাঁর অন্তত ১০ অনুসারী। পরে ছাত্রলীগের জ্যেষ্ঠ নেতা ও হল প্রশাসনের হস্তক্ষেপে আসন ফিরে পান ওই শিক্ষার্থী। হলের দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতার ওপর ক্ষোভ ও হলে আধিপত্য বিস্তার নিয়ে ১১ মে ছাত্রলীগের দুই পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষ হয়। নিয়াজ মোর্শেদ হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী হল ছাত্রলীগের সভাপতি হওয়া সত্ত্বেও¡তাঁকে না জানিয়ে ‘গেস্টরুম’ করছিলেন হলের ভারপ্রাপ্ত দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতা আতিকুর রহমান। অতিথিকক্ষে বসাকে কেন্দ্র করে কথা-কাটাকাটি, অতঃপর সেটি সংঘর্ষে রূপ নেয়। এ ঘটনায় তিন সদস্যের একটি ‘উচ্চতর তদন্ত কমিটি’ গঠন করে হল প্রশাসন। কমিটিকে দুই দিনের মধ্যে প্রতিবেদন দিতে বলা হলেও এখনো তা জমা হয়নি। সংঘর্ষের পরদিন সকালে ওই হলের এক নিরাপত্তাপ্রহরীকে প্রতিপক্ষকে তথ্য দেওয়ার অভিযোগে ছাত্রলীগের দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতা আতিকুর ইসলামসহ আরও কয়েকজন মিলে মারধর করেন।
১ মে শাহ মখদুম হল ছাত্রলীগের সভাপতি তাজবীউল হাসানের কক্ষ দখল ও তাঁকে হত্যার হুমকি দেওয়ার অভিযোগ ওঠে মিনহাজুল ইসলাম ও শাহ মখদুম হল ছাত্রলীগের সহসম্পাদক মিঠু মহন্তের বিরুদ্ধে। তাজবীউল অবশ্য পরে সেই ঘটনা সমাধান হয়েছে বলেও ফেসবুক পোস্ট দিয়ে প্রচার করেন।
প্রতিটি হলে আসন দখলের জন্য দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতারা কক্ষে কক্ষে গিয়ে রুমওয়ার্ক কর্মসূচি করেন। তাঁরা প্রতিটি হলের কক্ষে গিয়ে শিক্ষার্থীদের নাম, শিক্ষাবর্ষ, পড়াশোনা কবে শেষ হবে ইত্যাদি তথ্য সংগ্রহ করেন। কে থাকবেন, কে থাকবেন না, এমনকি আসন ছেড়ে দেওয়ার জন্য হুমকিও দেন তাঁরা।
গত ৫ মার্চ ২০২৩-২৪ শিক্ষাবর্ষের স্নাতক প্রথম বর্ষের ভর্তি পরীক্ষার মধ্যেই বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সভাপতি-সাধারণ সম্পাদকের নেতা-কর্মীদের হাতাহাতির ঘটনা ঘটে। সন্ধ্যায় এ ঘটনার পর ছাত্রলীগের এক পক্ষের নেতা-কর্মীরা রড ও লাঠিসোঁটা নিয়ে মহড়া দেন মাদার বখ্শ হলে। এতে ভর্তি-ইচ্ছুক শিক্ষার্থী ও অভিভাবকেরা ভীতসন্ত্রস্ত হয়ে পড়েন। ঘটনার সময় সভাপতির অনুসারী আল ফারাবী (মাদার বখ্শ হলের দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতা), তানভীর আহমেদ এবং সাধারণ সম্পাদকের অনুসারী সাজিদ (শহীদ জিয়াউর রহমান হলের দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতা), মিশকাত হাসান (মাদার বখ্শ হলের দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতা) উপস্থিত ছিলেন।
শহীদ হবিবুর রহমান হলের ‘দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতা’ মিনহাজুল ইসলাম। তিনি হল ছাত্রলীগের সহসভাপতিও। গত ২১ নভেম্বর ইতিহাস বিভাগের শিক্ষার্থী নিকল রায়কে হুমকি ও শারীরিক নির্যাতন করে হল থেকে নামিয়ে দেওয়ার অভিযোগ ওঠে মিনহাজুলের বিরুদ্ধে। ১৬ জানুয়ারি একই হলের আরেক ‘দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতা’ সোহান হাসান এক শিক্ষার্থীকে কক্ষ থেকে বের করে দেন। গত ৬ ও ১২ মার্চ মিনহাজুল ইসলামসহ কয়েকজন নেতার বিরুদ্ধে ক্যাম্পাসের ভ্রাম্যমাণ দোকান ও জিয়াউর রহমান হলের সামনের একটি খাবারের দোকান থেকে চাঁদাবাজির অভিযোগ পাওয়া যায়।
১ মে শাহ মখদুম হল ছাত্রলীগের সভাপতি তাজবীউল হাসানের কক্ষ দখল ও তাঁকে হত্যার হুমকি দেওয়ার অভিযোগ ওঠে মিনহাজুল ইসলাম ও শাহ মখদুম হল ছাত্রলীগের সহসম্পাদক মিঠু মহন্তের বিরুদ্ধে। তাজবীউল অবশ্য পরে সেই ঘটনা সমাধান হয়েছে বলেও ফেসবুক পোস্ট দিয়ে প্রচার করেন।
শহীদ সোহরাওয়ার্দী হলের দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতা ফজলে রাব্বি ও তাঁর কয়েকজন অনুসারীর বিরুদ্ধে গত ১ ডিসেম্বর আবীর হোসাইন নামের এক শিক্ষার্থীর বিছানাপত্র নামিয়ে দেওয়ার অভিযোগ ওঠে। বিষয়টি জানাজানি হলে আবার সেই শিক্ষার্থীকে আসনে তুলে দেওয়া হয়। ১৮ ডিসেম্বর নবাব আব্দুল লতিফ হল ছাত্রলীগের দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতা তাসকিফ আল তৌহিদের বিরুদ্ধে মফিজুর রহমান নামের এক শিক্ষার্থীকে মারধর ও হল ছেড়ে চলে যাওয়ার হুমকি দেওয়ার অভিযোগ ওঠে। ইফতারের নামে তোলা চাঁদা ফেরত চাওয়ায় গত ২০ মার্চ হলের কক্ষে আটকে খাদেমুল ইসলাম নামের এক শিক্ষার্থীকে মারধর ও হুমকির অভিযোগ ওঠে তাসকিফ আল তৌহিদ ও তাঁর অনুসারী মোজ্জাম্মেল হকের বিরুদ্ধে।
বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি মোস্তাফিজুর রহমান দাবি করেন, হলের অনেক নেতাই ক্যাম্পাস ত্যাগ করায় সাংগঠনিক গতিশীলতা বৃদ্ধির জন্য হলে দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতা দিয়েছেন। এ ছাড়া আগে আসন-বাণিজ্যসহ বিভিন্ন বিষয়ে বিতর্কিত হওয়ায় সেসব হলেও সুষ্ঠু ধারার রাজনীতি ফেরাতে দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতা দেওয়া হয়েছে। দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতাদের বিরুদ্ধে বিভিন্ন অভিযোগের বিষয়ে তিনি বলেন, ‘দু-একটা এ রকম ঘটনা ঘটেছিল। সেগুলো আমরা সঙ্গে সঙ্গে সমাধান করে দিয়েছি।’
আসন দখলে ‘রুমওয়ার্ক’
প্রশাসন সূত্রে জানা গেছে, ছাত্রদের ১১টি আবাসিক হলে মোট আসন রয়েছে ৫ হাজার ৩৮৩টি। তবে আবাসনপ্রত্যাশী শিক্ষার্থীর সংখ্যা তার চেয়ে অনেক বেশি। ফলে হলে আসন পাওয়া নিয়ে একধরনের প্রতিযোগিতা চলে। দীর্ঘদিন ধরেই ক্যাম্পাসে ছাত্রলীগ নেতা-কর্মীদের বিরুদ্ধে আসন-বাণিজ্যের অভিযোগ রয়েছে।
গত অক্টোবরে বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের নতুন কমিটি ঘোষণার পর ‘সিট-বাণিজ্যের কবর রচনার’ ঘোষণা দেন সভাপতি ও সম্পাদক। গত ছয় মাসে প্রকাশ্য আসন-বাণিজ্যের অভিযোগ পাওয়া না গেলেও ভেতরে-ভেতরে আসন দখলের দৌরাত্ম্য কমেনি। প্রতিটি হলে আসন দখলের জন্য দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতারা কক্ষে কক্ষে গিয়ে রুমওয়ার্ক কর্মসূচি করেন। তাঁরা প্রতিটি হলের কক্ষে গিয়ে শিক্ষার্থীদের নাম, শিক্ষাবর্ষ, পড়াশোনা কবে শেষ হবে ইত্যাদি তথ্য সংগ্রহ করেন। কে থাকবেন, কে থাকবেন না, এমনকি আসন ছেড়ে দেওয়ার জন্য হুমকিও দেন তাঁরা।
আমার মাস্টার্স পরীক্ষা চলছে। পরীক্ষা শেষে থিসিস করতে হবে। এ জন্য আরও কিছুদিন থাকতে হবে। কিন্তু যেভাবে কিছুদিন পরপর এসে জ্বালাচ্ছে, মনে হয় না থাকতে পারব। তারা এলে কক্ষ বন্ধ করে কিছু সময়ের জন্য বাইরে যাই।মাদার বখ্শ হলের আবাসিক শিক্ষার্থী
শিক্ষার্থীরা বলছেন, হলের কনিষ্ঠ কর্মীদের দিয়ে কথিত এই কর্মসূচি চালানো হয়। সন্ধ্যা থেকে মধ্যরাত পর্যন্ত এ অভিযান চলে। এতে সাধারণ শিক্ষার্থীদের পড়াশোনার ক্ষতি হয়। এ ছাড়া সম্প্রতি কয়েকটি হলে ‘জয় বাংলা ব্লাড স্কিম’ নামের কর্মসূচির মাধ্যমে কক্ষে কক্ষে শিক্ষার্থীদের ব্যক্তিগত তথ্য সংগ্রহ করার খবর জানা গেছে।
সর্বশেষ ১৪ মে বিশ্ববিদ্যালয়ের মাদার বখ্শ হলে রুমওয়ার্ক করেন দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতা মিশকাত হাসানের অনুসারীরা। ওই হলের একজন আবাসিক শিক্ষার্থী প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমার মাস্টার্স পরীক্ষা চলছে। পরীক্ষা শেষে থিসিস করতে হবে। এ জন্য আরও কিছুদিন থাকতে হবে। কিন্তু যেভাবে কিছুদিন পরপর এসে জ্বালাচ্ছে, মনে হয় না থাকতে পারব। তারা এলে কক্ষ বন্ধ করে কিছু সময়ের জন্য বাইরে যাই।’
এ ব্যাপারে প্রাধ্যক্ষ পরিষদের আহ্বায়ক অধ্যাপক এ এইচ এম মাহবুবুর রহমান প্রথম আলোকে বলেন, হলের সর্বময় ক্ষমতার অধিকারী প্রাধ্যক্ষ। প্রাধ্যক্ষদের ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য বলা হয়েছে। কিন্তু হল প্রশাসন এসব ব্যাপারে কোনো ব্যবস্থা নিচ্ছে না। তারা যদি সহযোগিতা চায়, তাহলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
‘হল প্রশাসন ও সংগঠনের জন্য বিপজ্জনক’
দলীয় সূত্রে জানা গেছে, ২০২২ সালের ২৪ মার্চ রাতে বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের তৎকালীন সভাপতি গোলাম কিবরিয়া ও সাধারণ সম্পাদক ফয়সাল আহমেদ ১৭টি আবাসিক হলের এক বছর মেয়াদি আংশিক কমিটি ঘোষণা করেন। বর্তমান সভাপতি ও সম্পাদকের সৃষ্টি করা পদ ‘দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতা’ দেওয়ায় হল কমিটি অসার হয়ে পড়েছে। হল কমিটির বেশ কিছু নেতা রাজনীতিতে নিষ্ক্রিয়। আবার যাঁরা আছেন, তাঁরা সাংগঠনিক কার্যক্রম পরিচালনা করতে পারছেন না। তাঁরা বলছেন, হল কমিটির অন্যান্য পদের কয়েকজন নেতা এ দায়িত্ব পেয়েছেন। কর্মীরাও ‘দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতা’ হয়েছেন।
ছাত্রলীগ নেতারা বলছেন, দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতার বিষয়ে গঠনতন্ত্রে কিছু নেই। এটি শাখা ছাত্রলীগের দুই শীর্ষ নেতার সৃষ্টি করা পদ। মূলত হলগুলোয় নিজেদের আধিপত্য প্রতিষ্ঠায় তাঁরা এই কৌশল নিয়েছেন। গঠনতন্ত্র অনুযায়ী হল কমিটির শীর্ষ নেতাদের কেউ অনুপস্থিত থাকলে ভারপ্রাপ্ত নেতা হিসেবে অন্য কাউকে দায়িত্ব দিতে পারে বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগ।
একজনের গাড়িতে যদি দুজন বসে, তখন সেই গাড়ির দুর্ঘটনায় পড়ার আশঙ্কা রয়েছে। হলে যখন অতিরিক্ত কেউ দায়িত্বে থাকে, তখন হল প্রশাসন বিপদে পড়ে। এটা হল প্রশাসন ও সংগঠন উভয়ের জন্য বিপজ্জনক।একটি হলের প্রাধ্যক্ষ
১১ মে সংঘর্ষের ঘটনায় বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক নিয়াজ মোর্শেদকে ১৪ মে বহিষ্কার করেছে কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগ। তিনি শহীদ সোহরাওয়ার্দী হল শাখার সভাপতিও। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমাদের রাজনীতি থেকে নিষ্ক্রিয় করে দেওয়ার জন্যই মূলত এই দায়িত্বপ্রাপ্ত সভাপতি ও সম্পাদক সৃষ্টি করা হয়েছে। ছাত্রলীগের কোথাও দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতার বিষয়ে বলা নেই।’
নাম প্রকাশ না করার শর্তে একটি হলের ছাত্রলীগের সভাপতি প্রথম আলোকে বলেন, ‘আগের কমিটির সময়ে যে সুযোগ-সুবিধায় হল চালিয়েছি, সেটি এই কমিটি দিতে পারেনি। এ ছাড়া আমাদের সঙ্গে সহকারী হিসেবে দায়িত্বপ্রাপ্ত দিতে চেয়েছে, যা মেনে নিতে পারিনি। এ জন্য নিষ্ক্রিয় হয়ে গেছি।’
‘দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতা’ দেওয়ায় হল প্রশাসনকে বিপদে পড়তে হচ্ছে মন্তব্য করেছেন একটি হলের প্রাধ্যক্ষ। গতকাল বুধবার তিনি প্রথম আলোকে বলেন, একজনের গাড়িতে যদি দুজন বসে, তখন সেই গাড়ির দুর্ঘটনায় পড়ার আশঙ্কা রয়েছে। হলে যখন অতিরিক্ত কেউ দায়িত্বে থাকে, তখন হল প্রশাসন বিপদে পড়ে। এটা হল প্রশাসন ও সংগঠন উভয়ের জন্য বিপজ্জনক।
প্রতিটি হলে ছাত্রলীগ একধরনের ‘ছায়া প্রশাসন’ সৃষ্টি করেছে। হলে কে উঠবেন, কে নামবেন, সেটি তারা নিয়ন্ত্রণ করছে। যাঁরা হল প্রশাসনের মাধ্যমে আসনে উঠছেন, তাঁদের ওপরেও জোর করে নির্যাতন চালানো হচ্ছে।
বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক ফরিদ উদ্দিন খান বলেন, এই কমিটির শুরু থেকেই একটা পক্ষের অনাস্থা ছিল, যা নিয়ে জটিলতা দেখা দিয়েছিল। তাদের সাংগঠনিক ব্যবস্থা নড়বড়ে, সেটা বোঝা যায়। তাদের মধ্যে শৃঙ্খলার অভাব রয়েছে। এর প্রভাব হলগুলোয় দেখা দিয়েছে। প্রতিটি হলে ছাত্রলীগ একধরনের ‘ছায়া প্রশাসন’ সৃষ্টি করেছে। হলে কে উঠবেন, কে নামবেন, সেটি তারা নিয়ন্ত্রণ করছে। যাঁরা হল প্রশাসনের মাধ্যমে আসনে উঠছেন, তাঁদের ওপরেও জোর করে নির্যাতন চালানো হচ্ছে। এ ক্ষেত্রে হল প্রশাসনের উদ্যোগ দেখা যায়নি কিংবা সহযোগিতা চাইলেও বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন এগিয়ে আসেনি। এটি শিক্ষার পরিবেশে মোটেও উচিত নয়। হল প্রশাসন দৃঢ়তার সঙ্গে দায়িত্ব পালন করতে না পারলে সেখান থেকে তাদের সরে আসা উচিত।