নির্যাতনে অভিযুক্তদের শাস্তির খবরে ফুলপরী বললেন, ‘আমাকে পালাইয়ে চলে যেতে হবে’
শিক্ষার্থী নির্যাতনে জড়িত ছাত্রলীগের বহিষ্কৃত নেত্রীসহ পাঁচ শিক্ষার্থীকে এক বছরের জন্য ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বহিষ্কারের খবরে হতাশা প্রকাশ করেছেন ভুক্তভোগী ফুলপরী খাতুন। জড়িত ব্যক্তিদের আজীবনের জন্য বহিষ্কারের দাবি জানিয়ে আসা ফুলপরী বলেন, ‘আমার মনে হয় না এখানে পড়ব, আমার পড়াই হবে না। ওরা ফিরে এসে শিওর (নিশ্চিত) আমার সঙ্গে আবার কিছু করবে। আমাকে বাধ্য হয়ে এখান থেকে পালাইয়ে চলে যেতে হবে।’
আজ শনিবার বেলা সাড়ে তিনটার দিকে মুঠোফোনে প্রথম আলোর কাছে এই মন্তব্য করেন ফুলপরী খাতুন। এ সময় তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ে শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিব হলে ছিলেন।
ফুলপরীকে নির্যাতনে অভিযুক্ত ছাত্রলীগের বহিষ্কৃত নেত্রী সানজিদা চৌধুরীসহ পাঁচ শিক্ষার্থীকে এক বছরের জন্য বহিষ্কার করেছে ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। আজ বেলা সাড়ে ১১টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র শৃঙ্খলা কমিটির সভায় এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। এ সময় বহিষ্কৃতরা বিশ্ববিদ্যালয়ে ক্লাস-পরীক্ষাসহ কোনো কিছুতেই অংশ নিতে পারবেন না। বিশ্ববিদ্যালয়ের আইনে এটা সর্বোচ্চ শাস্তি বলে জানিয়েছেন প্রক্টর শাহাদৎ হোসেন।
বহিষ্কৃত শিক্ষার্থীরা হলেন বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিসংখ্যান বিভাগের শিক্ষার্থী সানজিদা চৌধুরী ওরফে অন্তরা, চারুকলা বিভাগের হালিমা আক্তার ঊর্মি, আইন বিভাগের ইসরাত জাহান মিম, ফিন্যান্স অ্যান্ড ব্যাংকিং বিভাগের তাবাসসুম ইসলাম ও একই বিভাগের মুয়াবিয়া জাহান। এর মধ্যে সানজিদা চৌধুরী বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সহসভাপতি ছিলেন। অন্যরা ছাত্রলীগের কর্মী। নির্যাতনের ঘটনায় পাঁচজনকেই সংগঠন থেকে বহিষ্কার করে কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগ।
নির্যাতনে জড়িত ব্যক্তিদের এমন শাস্তির বিষয়ে তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়ায় ফুলপরী খাতুন বলেন, ‘আমার সঙ্গে তারা (অভিযুক্ত ৫ জন) যে অন্যায়টা করেছে, তার শাস্তি এত কম পরিমাণ হতে পারে না। খুবই কম পরিমাণ শাস্তি হয়েছে। আমার তো দাবি ছিল তাদের আজীবনের জন্য বহিষ্কার করা।’ শঙ্কা করে ফুলপরী বলেন, ‘তারা যে এক বছর পর ফিরে আসবে এবং আমার ক্ষতি করবে, এটা স্বাভাবিক। যেকোনো মুহূর্তে, যেকোনো সময় করবে। এখানকার প্রশাসন কিছুই করতে পারবে না।’
ফুলপরী বলেন, ‘তারা (অভিযুক্তরা) স্বীকারও করে না আমাকে মারধর করেছে। খারাপ কিছু করেছে। আমার ওপর দোষ চাপিয়ে বিভিন্ন সময় মিথ্যা মিথ্যা বানাইয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে লেখে। এতে খুবই আতঙ্কের মধ্যে থাকি।’
গত ১২ ফেব্রুয়ারি রাতে বিশ্ববিদ্যালয়ের দেশরত্ন শেখ হাসিনা হলের গণরুমে সাড়ে চার ঘণ্টা আটকে রেখে নির্যাতন করার অভিযোগ করেন ফিন্যান্স বিভাগের প্রথম বর্ষের ছাত্রী ফুলপরী খাতুন। ভুক্তভোগী ছাত্রীর ভাষ্য, সানজিদা চৌধুরীর নেতৃত্বে তাঁর অনুসারীরা তাঁকে নির্যাতন করেন। এ সময় তাঁকে বিবস্ত্র করে ভিডিও ধারণ, গালাগাল ও ঘটনা কাউকে জানালে মেরে ফেলার হুমকি দেওয়া হয়। পরে ভুক্তভোগী ফুলপরী বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর, হলের প্রাধ্যক্ষ ও ছাত্র উপদেষ্টার কাছে এ বিষয়ে লিখিত অভিযোগ দেন। এ ঘটনায় রিট হলে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষকে ঘটনা তদন্তে কমিটি গঠনের পাশাপাশি কিছু নির্দেশনা দেন হাইকোর্ট।