বিরোধ-কোন্দলে ত্রিমুখী লড়াই খোকসা উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে
কুষ্টিয়ার খোকসা উপজেলায় আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীরা কোন্দল-বিরোধে বিভক্ত হয়ে পড়েছেন। গত জাতীয় সংসদ নির্বাচনে এই বিরোধ তুঙ্গে ছিল। এর প্রভাব পড়েছে উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে; যদিও কেন্দ্র থেকে বিরোধ মেটাতে বলা হলেও তা মানা হয়নি।
সাধারণ নেতা-কর্মীরা বলছেন, এই বিরোধের কারণে দলের অবস্থান বিরোধী দলের নেতা-কর্মীদের থেকেও দুর্বল। তবে শীর্ষ নেতাদের বক্তব্য, বরাবারের মতোই ভোটের পর সব ঠিক হয়ে যাবে।
ষষ্ঠ উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে প্রথম ধাপে আগামী ৮ মে এই উপজেলায় ভোট গ্রহণ অনুষ্ঠিত হবে। সেখানে মোট ভোটার ১ লাখ ১৩ হাজার ৯৫৩ জন। এর মধ্যে ৫৭ হাজার ৩২০ জন পুরুষ এবং ৫৬ হাজার ৬৩৩ জন নারী ভোটার।
চেয়ারম্যান পদে প্রার্থী হয়েছেন ছয়জন। তাঁদের মধ্যে তিনজন আছেন উপজেলা আওয়ামী লীগের শীর্ষ নেতা। বাকি তিনজনের মধ্যে দুজন দুই প্রার্থীর ডামি। প্রার্থী ছয়জন হলেও উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও বর্তমান চেয়ারম্যান বাবুল আখতার (মোটরসাইকেল), সিনিয়র সহসভাপতি আবদুর রহিম খান (দোয়াত–কলম) ও যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আল মাসুম মোর্শেদ (ঘোড়া) মধ্যে তীব্র লড়াই হবে। বাকি তিনজন প্রার্থী হলেন আবদুর রহিমের ছেলে শাওন মাহমুদ খান, ওসমানপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ওহিদুল ইসলামের স্ত্রী সালেহা বেগম ও ওহিদুলের ছোট ভাই সাইফুল ইসলাম। শাওন নিজে প্রার্থী হলেও তাঁর বাবা রহিম উদ্দিন খানের পক্ষে ভোট চাইছেন। আর সাইফুল ইসলামও তাঁর ভাবির জন্য ভোটের মাঠে ভোট চাইছেন।
এলাকায় গিয়ে জানা গেছে, আবদুর রহিম খান জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান সদর উদ্দিন খানের ছোট ভাই। ভাইকে জেতাতে তিনি এলাকায় মরিয়া হয়ে কাজ করছেন। প্রতিদিন সকাল থেকে মধ্যরাত পর্যন্ত এলাকায় পথসভা করছেন। এর আগে তফসিল ঘোষণার দিন স্থানীয় আওয়ামী লীগের এক নেতাকে ভয়ভীতি দেখিয়ে অপহরণ করে মারধরের অভিযোগ ওঠে সদর উদ্দিন খানের বিরুদ্ধে। সেই ঘটনায় থানায় মামলা হলে রহিম খান প্রধান আসামি হন। সব আসামি জামিনে আছেন।
বর্তমান চেয়ারম্যান বাবুল আক্তার কুষ্টিয়া-৪ (কুমারখালী-খোকসা) আসনের সাবেক সংসদ সদস্য ও যুবলীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য সেলিম আলতাফ জর্জের অনুসারী। তাঁরও নিজস্ব বলয় আছে। আর আল মাসুম মোর্শেদের প্রতি বর্তমান স্বতন্ত্র সংসদ সদস্য আবদুর রউফের সমর্থন আছে বলে এলাকায় গুঞ্জন আছে। এই তিন বলয়ে ভোটের মাঠ বেশ গরম রয়েছে। তবে নেতা-কর্মীরা তীব্র তাপপ্রবাহের মধ্যে দিনের বেলায় বাড়ি বাড়ি যেতে বেগ পাচ্ছেন। খুব সকালে বা বিকেলের পর প্রার্থীরা ভোট চাইতে বাড়ি বাড়ি যাচ্ছেন।
সাধারণ ভোটাররা বলছেন, ভোটকেন্দ্রে ভোটার উপস্থিতি ব্যাপক হবে। কেননা, উপজেলার সব ধারার নেতারা প্রার্থী হয়েছেন। নিজেদের ভোট টানতে তাঁরা কাজ করছেন। তবে বিএনপির সাধারণ ভোটারদেরও তাঁরা টানার চেষ্টা করছেন। উপজেলা বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক মমিনুর রহমান বলেন, বিএনপির সাধারণ ভোটাররা সামাজিক ও পারিবারিক কারণে কোনো কোনো প্রার্থীর হয়ে কাজ করছেন।
চেয়ারম্যান প্রার্থী ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি বাবুল আক্তার বলেন, ‘এটা সত্য, সাধারণ নেতা-কর্মীরা দলের মধ্যে বিভক্তি হয়ে পড়েছে। তবে সাধারণ মানুষ ভালোর পক্ষে। বিগত পাঁচ বছর এলাকায় ব্যাপক উন্নয়ন করেছি। বিপুল ভোটে জয় হবে আমার।’
চেয়ারম্যান প্রার্থী আল মাসুম মুর্শেদ বলেন, ‘দীর্ঘদিন ধরে রাজনীতি করছি। আমার বাবা উপজেলা আওয়ামী লীগের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি ছিলেন। মানুষ এবার আমার পক্ষে। জয় সুনিশ্চিত। কারও কোনো গুন্ডামি ও নোংরামি পাত্তা পাবে না।’
চেয়ারম্যান প্রার্থী আবদুর রহিম উদ্দিন খান বলেন, এলাকায় তাঁর গ্রহণযোগ্যতা রয়েছে। এই উপজেলায় আওয়ামী লীগের রাজনীতিকে তাঁর পরিবার সুসংগঠিত করেছে। জয়ের ব্যাপারে তিনি শতভাগ নিশ্চিত। আর যেসব অভিযোগ আনা হচ্ছে বা হয়েছে, তার কোনো ভিত্তি নেই। ভোটের মাঠে বাড়তি সুবিধা নিতে প্রতিপক্ষরা উল্টোপাল্টা কথা বলছে।
উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক তারিকুল ইসলাম বলেন, খোকসায় অংশগ্রহণমূলক ও শান্তিপূর্ণ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে, যা বর্তমান সরকারপ্রধান প্রত্যাশা করছেন।
খোকসা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আননূর যায়েদ বলেন, ‘এলাকায় শান্তিশৃঙ্খলা বজায় রাখতে সজাগ রয়েছি। এখন পর্যন্ত নির্বাচনী পরিবেশ শান্তিপূর্ণ রয়েছে। আশা করি ভোটের দিনেও শান্তিপূর্ণ থাকবে।’
রিটার্নিং কর্মকর্তা ও সিনিয়র জেলা নির্বাচন কর্মকর্তা আবু আনছার প্রথম আলোকে বলেন, খোকসার নির্বাচন শান্তিপূর্ণ করতে যা যা করার তার সব রকম ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। কোথাও কোনো অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটানোর কোনো সুযোগ থাকবে না। ভোট কাটা বা কেন্দ্র দখল করার চিন্তাভাবনা যাঁরা করবেন, তাঁদের তাৎক্ষণিক আইনের আওতায় আনা হবে। কোনো ছাড় হবে না।