‘আন্দোলনে গিয়ে আমার ছেলে লাশ হয়ে ফিরেছে’

মাসুম শেখছবি: সংগৃহীত

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন চলাকালে গত ৫ আগস্ট রাজধানীর উত্তরায় গুলিতে নিহত হন মাসুম শেখ (৩০)। তাঁর বড় ভাই মো. হিরা মিয়া পরদিন তাঁর লাশটি খুঁজে পান ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মর্গে। লাশের সারি থেকে ভাইয়ের নিথর দেহটি বের করেছিলেন তিনি। বললেন, একটি গুলি মাসুমের মাথা দিয়ে বের হয়ে যায়।

নিহত মাসুম শেখ ময়মনসিংহের ফুলপুর উপজেলার কুকাইল গ্রামের মৃত আবদুর রাজ্জাকের ছেলে। তাঁর মায়ের নাম রাহেলা খাতুন। তিন ভাই ও দুই বোনের মধ্যে মাসুম ছিলেন সবার ছোট। তিনি গাজীপুরের টঙ্গীতে একটি পোশাক কারখানায় কোয়ালিটি মাস্টার হিসেবে কাজ করতেন। সাড়ে তিন বছর আগে নেত্রকোনার পূর্বধলা উপজেলার নাদিরা সুলতানাকে বিয়ে করেন তিনি। তাঁদের সংসারে আড়াই বছর বয়সী নাফিজ হাসান নামের একটি ছেলেসন্তান আছে।

মাসুমের স্বজনদের ভাষ্য, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের শুরু থেকেই সক্রিয় ছিলেন মাসুম। নিয়মিত আন্দোলন কর্মসূচিতে অংশ নিতেন। শেখ হাসিনা সরকারের পতনের খবরে গত ৫ আগস্ট আনন্দমিছিল শুরু হলে সেই মিছিলে যোগ দিতে বের হয়েছিলেন মাসুম। সন্ধ্যা নাগাদ বাসায় না ফেরায় মাসুমের স্ত্রী নাদিরা সুলতানা বিষয়টি ভাশুর হিরা মিয়াকে জানান। হিরা ঢাকার বংশাল এলাকায় থাকেন। তিনি ভাইয়ের (মাসুম) খোঁজ শুরু করেন। বিভিন্ন জায়গায় খুঁজে ভাইকে না পেয়ে পরদিন রাত ৮টার দিকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মর্গে যান। সেখানে মাসুমের গুলিবিদ্ধ লাশ পান হিরা মিয়া।

কয়েক বছর ধরে বিএনপির রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত ছিলেন বলে জানিয়েছেন বড় ভাই হিরা মিয়া। তিনি বলেন, ‘মর্গে যখন লাশ পাই, তখন থানার কার্যক্রম বন্ধ ছিল। তাই ময়নাতদন্ত ছাড়াই ৭ আগস্ট বাড়িতে দাফন করা হয় ভাইয়ের লাশ।’

মাসুমের বয়স যখন ২৪ দিন, তখন বাবা মারা যান। অনেক কষ্টে তাঁকে বড় করেন মা রাহেলা খাতুন। তিনি বলেন, ‘আন্দোলনে গিয়ে আমার ছেলে লাশ হয়ে ফিরেছে। স্বামী মারা যাওয়ার পর অনেক কষ্টে ছেলেকে বড় করেছিলাম। এই ছেলেই আমার খোঁজ নিত, খরচ দিত। পুতেরে তো ভুলতে পারি না। আল্লায় আমারে কেন আগে নিল না। আমার সন্তান হত্যায় যারা জড়িত তাদের বিচার চাই।’

আড়াই বছরের ছেলেকে নিয়ে বিপদে পড়েছেন মাসুম শেখের স্ত্রী নাদিরা সুলতানা। তিনি বলেন, ‘গত ৫ আগস্ট দুপুর আড়াইটার দিকে বন্ধুর কল পেয়ে সরকার পতনের আনন্দমিছিলে যোগ দিতে বের হন মাসুম। আনন্দমিছিলে গিয়ে আমার সন্তানরে এতিম কইর‍্যা চইল্ল্যা গেছে। এই এতিম পোলারে লইয়া সারা জীবন পাড়ি দেওন লাগব আমার।’