ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠীর প্রশিক্ষণকেন্দ্র
অর্ধকোটি টাকার ভবন পড়ে আছে অযত্নে
বোদা উপজেলা সদর থেকে আট কিলোমিটার দূরে ময়দানদিঘির উত্তর পাড়ে ভবনটির অবস্থান।
মূল ফটকে দেওয়া তালাটিতে ধরেছে মরিচা। ভবনের চারপাশে গাছের পাতা জমে হয়েছে আবর্জনার স্তূপ। ভবনের দরজা-জানালাগুলো খোলা। কক্ষগুলোর ভেতরে আসবাবপত্রে জমেছে ধুলা ও মাকড়সার জাল। এভাবেই অযত্ন-অবহেলায় পড়ে আছে পঞ্চগড়ের বোদা উপজেলায় ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠীর দক্ষতা উন্নয়ন ও আয়বর্ধক কার্যক্রম পরিচালনার জন্য নির্মাণ করা ‘উথনাউ’ মাল্টিপারপাস কমপ্লেক্স। ভবনটি নির্মাণে ব্যয় হয়েছে প্রায় অর্ধকোটি টাকা।
উপজেলা সদর থেকে আট কিলোমিটার দূরে ময়দানদিঘির উত্তর পাড়ে ভবনটির অবস্থান। ২০২০ সালে ভবনটি উদ্বোধনের পর প্রশিক্ষণের কার্যক্রম শুরু হয়। কিন্তু কয়েক দিন পরই ওই কার্যক্রম বন্ধ হয়ে যায়। এদিকে ভবনটিতে ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠীর প্রশিক্ষণ কার্যক্রম চালু করার জন্য গত ২৭ ফেব্রুয়ারি বোদা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার (ইউএনও) কাছে আবেদন করেছেন বোদা উপজেলা আদিবাসীকল্যাণ সমিতির সাধারণ সম্পাদক শিবচরণ মারডী।
উপজেলা প্রশাসন সূত্রে জানা যায়, ২০১৮-১৯ অর্থবছরে ‘প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের বিশেষ এলাকার জন্য উন্নয়নসহায়তা (পার্বত্য চট্টগ্রাম ব্যতীত)’ কর্মসূচির আওতায় বোদা উপজেলার ময়দানদীঘি ইউনিয়ন পরিষদসংলগ্ন এলাকায় ‘উথনাউ’ নামে একতলাবিশিষ্ট একটি মাল্টিপারপাস ভবন নির্মাণ করা হয়। চারতলা ভিত্তির (ফাউন্ডেশন) ভবনটি নির্মাণে ব্যয় হয় ৪৯ লাখ টাকা। এখানে ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠীর দক্ষতা উন্নয়ন ও আয়বর্ধক কার্যক্রম পরিচালনার কথা। ২০২০ সালের ৩০ জানুয়ারি ভবনটির উদ্বোধন করেন তৎকালীন রেলমন্ত্রী ও পঞ্চগড়-২ আসনের সংসদ সদস্য নূরুল ইসলাম। উদ্বোধনের পর অল্প কিছুদিন প্রশিক্ষণ কার্যক্রম চলার পর তা বন্ধ হয়ে যায়। দেখভালের কোনো কর্মী নিয়োগ না করায় ভবনটি অযত্ন-অবহেলায় পড়ে আছে।
ভবনটি অযত্নে পড়ে আছে। আমাদের এলাকা থেকে ভবনটি বেশ কিছুটা দূরে। আমাদের ছেলেমেয়েরা যারা পড়াশোনা করছে, তাদের জন্য কম্পিউটার প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা হলে তারা আয় করতে পারবে। ভবনটিতে প্রশিক্ষণ কার্যক্রম চালু করার জন্য কর্তৃপক্ষের প্রতি জোর দাবি জানাচ্ছি।শিবচরণ মারডী, সাধারণ সম্পাদক, বোদা উপজেলা আদিবাসীকল্যাণ সমিতি
গত রোববার গিয়ে দেখা যায়, ময়দানদিঘির উত্তর পাড়ে পঞ্চগড়-ঢাকা মহসাড়কের পাশে তালাবদ্ধ অবস্থায় পড়ে আছে দৃষ্টিনন্দন ভবনটি। এর পূর্ব দিকে সামান্য দূরেই ময়দানদীঘি ইউনিয়ন পরিষদের কার্যালয়। দক্ষিণমুখী উথনাউ ভবনটির সামনের দিকে এবং পশ্চিম ও পূর্ব দিকে সীমানাপ্রাচীর থাকলেও পেছনের দিকে ফাঁকা পড়ে আছে। সীমানাপ্রচীরের মূল ফটক ও ভবনের মূল ফটক (কেচি গেট) তালাবদ্ধ। পেছন দিক থেকে ভবনের কাছকাছি গেলে দেখা যায়, ভবনটির দরজা-জানালা খোলা। কক্ষগুলোর ভেতরে আসবাবে ময়লা পড়ে আছে। তবে বেশির ভাগ কক্ষই ফাঁকা। ভবনের বাইরে মাটিতে জন্মেছে নানা রকমের আগাছা। সেখানে কয়েকটি ছাগল চড়ে বেড়াচ্ছিল।
বোদা উপজেলা আদিবাসীকল্যাণ সমিতির সাধারণ সম্পাদক শিবচরণ মারডী বলেন, ‘ভবন নির্মাণের পর বাঁশ-বেতের জিনিসপত্র তৈরির ওপর একটি প্রশিক্ষণ হয়েছিল। এর পর থেকে আর কোনো প্রশিক্ষণ হয়নি। ভবনটি অযত্নে পড়ে আছে। আমাদের এলাকা থেকে ভবনটি বেশ কিছুটা দূরে। ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠীর লোকজনের আয় হবে, এ ধরনের প্রশিক্ষণ দেওয়া হলে ভালো হয়। আমাদের ছেলে–মেয়েরা যারা পড়াশোনা করছে, তাদের জন্য কম্পিউটার প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা হলে তারা আয় করতে পারবে। ভবনটিতে প্রশিক্ষণ কার্যক্রম চালু করার জন্য কর্তৃপক্ষের প্রতি জোর দাবি জানাচ্ছি।’
এ বিষয়ে ইউএনও শাহরিয়ার নজির বলেন, চলতি বছরে উপজেলায় যে এডিবির বরাদ্দ আছে, এখান থেকে কিছু অর্থ দিয়ে এবং স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদ থেকে কিছু বরাদ্দ নিয়ে সম্মিলিতভাবে উন্নয়নকাজ করা হবে। তবে এখনো পূর্ণাঙ্গ হিসাব করা হয়নি, কত টাকায় কী করা হবে। ভবনটির নির্মাণকাজ শেষ হয়েছে। তবে কিছু মেরামত লাগবে এবং কিছু সুবিধাদি বাড়াতে হবে। সেখানে প্রশিক্ষণ কার্যক্রম শুরু করার পাশাপাশি সরকারি বিভিন্ন প্রকল্পে তাদের (ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠী) যুক্ত করা হবে।