মুক্তিযোদ্ধাকে লাঞ্ছনাকারীরা ফ্যাসিবাদের মতো নাগরিক অধিকার কেড়ে নিতে চায়: জোনায়েদ সাকি
কুমিল্লার চৌদ্দগ্রামে বীর মুক্তিযোদ্ধাকে জুতার মালা পরিয়ে লাঞ্ছিত করার ঘটনায় জড়িত ব্যক্তিরা ফ্যাসিস্টদেরই দোসর বলে মন্তব্য করেছেন গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়কারী জোনায়েদ সাকি। কোনো মানুষের এই রকম মর্যাদাহানি কেউ ঘটাতে পারে— প্রশ্ন রেখে তিনি বলেছেন, ‘যারা করে তাঁরা ফ্যাসিস্টেরই দোসর। এভাবে মানুষের মানবিক মর্যাদা ক্ষুণ্ন করা এটা ফ্যাসিবাদের দোসরদেরই কাজ। যাঁরাই করে থাকুক, তাঁরা আসলে ওই ফ্যাসিবাদের মতো করে আমাদের নাগরিক অধিকার কেড়ে নিতে চায়।’
আজ সোমবার বেলা চারটায় সিলেটের কেন্দ্রীয় মুসলিম সাহিত্য সংসদে আয়োজিত গণসংলাপ অনুষ্ঠানে তিনি এ কথা বলেন। ‘নতুন রাজনৈতিক বন্দোবস্ত প্রতিষ্ঠার লক্ষে৵ কেমন বাংলাদেশ চাই’ শীর্ষক এই গণসংলাপের আয়োজন করে গণসংহতি আন্দোলন সিলেট জেলা কমিটি।
ফ্যাসিস্টরা যা করেছে, গণতান্ত্রিক শক্তি তা করতে পারে না উল্লেখ করে সংলাপে জোনায়েদ সাকি বলেন, ‘ফ্যাসিস্টদের পথ অবলম্বন করে ফ্যাসিবাদের বিরুদ্ধে লড়াই করা যায় না। ফ্যাসিবাদের বিরুদ্ধে আমাদের গণতান্ত্রিক পথে যেতে হবে। ফ্যাসিবাদের দোসররা উসকানি দেওয়ার চেষ্টা করছে। আমাদের দেখাতে হবে সম্প্রীতি, আমাদের দেখাতে হবে ঐক্য, আমাদের দেখাতে হবে নিরাপত্তা।’
অনুষ্ঠানে জোনায়েদ সাকি বলেন, ‘আমাদের অসত্য ও মিথ্যার বিরুদ্ধে সত্য নিয়ে দাঁড়াতে হবে। এই দেশের মানুষ ঐক্যবদ্ধ। তাঁরা মানবিক মর্যাদপূর্ণ রাষ্ট্র চায়। তাঁর ওপরই রাষ্ট্র দাঁড়িয়ে থাকবে। এ রকম একটি বন্দোবস্তের জন্য আমরা লড়াই করছি।’
বীর মুক্তিযোদ্ধাকে জুতার মালা পরিয়ে হেনস্তার সঙ্গে জড়িত ব্যক্তিদের বিচার দাবি করে তিনি বলেন, এটি অত্যন্ত নিন্দনীয় কাজ। দোষীদের আইনের আওতায় আনতে হবে। তবে এটা ঠিক যে বাংলাদেশের মানুষ আওয়ামী লীগের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে ক্ষোভ রয়েছে; কিন্তু আইন নিজের হাতে তুলে নেওয়া যাবে না। মানুষের মানবিক মর্যাদা কোনোভাবেই ক্ষুণ্ন করা যাবে না।
বড় লড়াইয়ের মাধ্যমে ফ্যাসিস্টের পতনের পর লড়াই এবং অভ্যুত্থান এখন দ্বিতীয় পর্বের উল্লেখ করে জোনায়েদ সাকি বলেন, ‘এখন আমাদের গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠার লড়াই। বর্তমানে সরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোতে যারা বসে আছে, তাঁদের উল্লেখযোগ্য একটি অংশ ওই ফ্যাসিস্টের দোসর। প্রতিষ্ঠানের আইন, সংবিধান বদলাতে হবে। আর এসব প্রতিষ্ঠানে এমন লোক বসাতে হবে, যাতে গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা ধ্বংসের চেষ্টা করতে না পারে।’
গণসংলাপ অনুষ্ঠান শুরুর আগে সাংবাদিকদের বিভিন্ন প্রশ্নের উত্তর দেন জোনায়েদ সাকি। নির্বাচনসংক্রান্ত এক প্রশ্নে তিনি বলেন, ‘অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা একটি টাইমলাইন দিয়েছেন। আমরা মনে করি, রাজনৈতিক দল, ছাত্রনেতাসহ সব অংশীজনের সঙ্গে বসা দরকার। সবার ঐকমতে৵র ভিত্তিতেই নির্বাচনের সুনির্দিষ্ট রূপরেখা দাঁড় করাতে হবে। সরকার ঘোষণা দিয়েছেন জানুয়ারি মাসে সংস্কার কমিশনগুলো যদি প্রতিবেদন দেয়, তাহলে আলোচনার জায়গাটা তারা তৈরি করবেন।’
শেখ হাসিনার বিচারের প্রশ্নে তিনি বলেন, জুলাই–আগস্টসহ গত ১৫ বছরের ভয়ংকর সব নির্বিচার হত্যা ও লুটপাটের নেতৃত্বে ছিলেন শেখ হাসিনা। তাঁকে দেশে ফিরিয়ে এনে বিচারের মুখোমুখি করতে হবে। বাংলাদেশের মানুষ ন্যায়বিচার চায়। সরকারের দায়িত্ব, এটি তাঁরা করছেন।
অনুষ্ঠানে গণসংহতি আন্দোলনের সিলেট জেলার আহ্বায়ক নিগার সুলতানার সভাপতিত্বে ও বিশ্বজিৎ দেবনাথের সঞ্চালনায় বিশেষ অতিথির বক্তব্য দেন সংগঠনটির কেন্দ্রীয় নির্বাহী সমন্বয়কারী আবুল হাসান, রাজনৈতিক পরিষদ সদস্য মনির উদ্দিন, সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য জুলহাসনাইন বাবু প্রমুখ।