চট্টগ্রাম-১০ আসনের একটি কেন্দ্র দখল করে নৌকায় ভোট দেওয়ার ঘটনা ঘটেছে। আজ রোববার বেলা পৌনে তিনটার দিকে নগরের নাছিরাবাদ সরকারি বালক উচ্চবিদ্যালয়ের দ্বিতীয় তলার ১ নম্বর বুথ কক্ষে এ ঘটনা ঘটে।
এ ঘটনার ছবি তোলার কারণে প্রথম আলোর প্রতিনিধি মোশাররফ শাহকে মারধর করা হয়। তাঁরা মোশাররফের মুঠোফোন ছিনিয়ে নেন। ছবি ও ভিডিও মুছে দেন। পরে মুঠোফোনের রিসাইকেল থেকে ছবি উদ্ধার করা হয়।
বেলা পৌনে তিনটায় কেন্দ্রে গিয়ে দেখা যায়, কোনো ভোটার নেই। নৌকার কার্ড গলায় ঝোলানো কয়েকজন কেন্দ্রে ঘোরাঘুরি করছেন। দ্বিতীয় তলায় একটি কক্ষে উঁকি দিতেই দেখা যায় একজন নৌকায় টানা সিল মারছেন। পরে সাংবাদিকের উপস্থিতি টের পেলে তিনি কক্ষ ত্যাগ করেন। পাশের আরেকটি কক্ষেও একই চিত্র দেখা যায়। যদিও পোলিং কর্মকর্তারা তখন সেখানেই ছিলেন।
তাৎক্ষণিক প্রিসাইডিং কর্মকর্তা রাজীব দাশকে প্রশ্ন করলে তিনি এসব সিল দেওয়া ব্যালেট বাতিল করা হবে সাংবাদিকদের জানান। তাঁর উপস্থিতিতে কীভাবে এসব সিল মারা হলো জানতে চাইলে তিনি বলেন, তিনি শৌচাগারে ছিলেন। এ কারণে দেখেননি।
ঘটনার বর্ণনা দিয়ে মোশাররফ শাহ বলেন, প্রিসাইডিং কর্মকর্তার সঙ্গে কথা বলার সময়ই নৌকার সমর্থক ২০ থেকে ৩০ জন এ কেন্দ্রে আসেন। তাঁরা জোর করে মুঠোফোন ও ডায়েরি নিয়ে যান। মুঠোফোন দিতে অস্বীকৃতি জানালে থাপ্পড় কিল-ঘুষি দিতে থাকেন কয়েকজন মিলে। উপস্থিত পুলিশ, নিরাপত্তাকর্মীদের বিষয়টি জানালেও তাঁরা ব্যবস্থা নেননি। পরে তিনি দৌড়ে কেন্দ্র থেকে বেরিয়ে আসেন। প্রায় এক ঘণ্টা পর মুঠোফোন ফেরত দেন তাঁরা।
কেন্দ্র দখল করে জাল ভোট দেওয়া ও মোশাররফকে মারধর করা লোকজন খুলশী থানা ছাত্রলীগের নেতা-কর্মী। তাঁদের মধ্যে একজন নিজেকে খুলশী থানা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক নুরুল আবছার নামে পরিচয় দেন।
পরে মুঠোফোনে এ বিষয়ে জানতে চাইলে খুলশী থানা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক নুরুল আবছার প্রথম আলোকে বলেন, ঘটনাটি তিনি শুনেছেন। তবে তিনি এতে সম্পৃক্ত নন। সকালে কেন্দ্রে থাকলেও বিকেলে তিনি ছিলেন না।
খুলশী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শেখ মো. নেয়ামত উল্লাহ প্রথম আলোকে বলেন, এ বিষয়ে তাঁকে কেউ জানাননি। তিনি খোঁজ নিয়ে দেখছেন।
সিটি করপোরেশনের ৮ নম্বর ওয়ার্ডের পূর্ব অংশের পুরুষ ভোটারদের জন্য ছিল নাছিরাবাদ সরকারি বালক উচ্চবিদ্যালয়ের কেন্দ্র। এ কেন্দ্রের মোট ভোটার ছিলেন ২ হাজার ১৫৬। বেলা ২টা পর্যন্ত এ কেন্দ্রে ৭৭৪ জন ভোট দিয়েছেন বলে দাবি করেছিলেন ওই কেন্দ্রের প্রিসাইডিং কর্মকর্তা।
এর আগে এই আসনের আরেক কেন্দ্র খুলশীর পাহাড়তলী ডিগ্রি কলেজ কেন্দ্রে সকালে নৌকা ও ফুলকপি প্রতীকের অনুসারীদের মধ্যে সংঘর্ষে দুজন গুলিবিদ্ধ হন। এ সময় শামীম নামের এক যুবককে পিস্তল উঁচিয়ে গুলি করতে দেখা যায়।
নগরের সিটি করপোরেশনের ৮, ১১, ১২, ১৩, ১৪, ২৪, ২৫, ২৬ নম্বর ওয়ার্ড নিয়ে গঠিত হয়েছে চট্টগ্রাম-১০ আসন। এ আসনের মোট ভোটকেন্দ্র ১৪৮টি। আর ভোটারসংখ্যা ৪ লাখ ৮৫ হাজার। আসনটিতে নৌকা প্রতীক নিয়ে লড়ছেন মো. মহিউদ্দিন (বাচ্চু)। ফুলকপি প্রতীকের প্রার্থী চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের সাবেক মেয়র মোহাম্মদ মনজুর আলম। এ ছাড়া আরও আটজন প্রার্থী রয়েছেন।