পূজার ফুল-অনুষঙ্গ বেচে জীবন বাঁচে তাদের
ময়মনসিংহ নগরের কে বি ইসমাইল রোডে আছে পৌর কাঁচাবাজার। সেই বাজার ঘেঁষে প্রতিদিন পূজার ফুল ও নানা অনুষঙ্গ নিয়ে বসেন একদল নারী। তাঁদের বয়স ৫০ থেকে ৭০ বছরের মধ্যে। রাস্তার পাশে সারি করে নারীরা ভোর থেকে বসেন বর্ণিল ফুল, বেলপাতা, দূর্বাঘাস, আমপাতা, তুলসীপাতাসহ নানা অনুষঙ্গ নিয়ে। সকাল ৯টা পর্যন্ত বেচাকেনা চলে।
কুয়াশার আড়মোড়া ভেঙে সূর্য ওঠার সঙ্গে সঙ্গে এই নারীরা পূজার ফুল–পাতা নিয়ে চলে আসেন এই বাজারে। রাস্তার পাশে কাগজ বিছিয়ে পসরা সাজিয়ে বসেন। এক ভাগ ফুলের দাম ১০ টাকা। ফুলসহ পূজার অন্যান্য জিনিস মেলে ২০ টাকায়।
সনাতন ধর্মাবলম্বীরা পূজার উপকরণ কিনতে এখানে আসেন। যাঁরা নিজ আঙিনায় ফুলের আবাদ করতে পারেন না, তাঁরা এখান থেকে কিনে নিয়ে যান। আজ মঙ্গলবার সকালে ১২ জন নারীকে পূজার ফুল–অনুষঙ্গ নিয়ে বসে থাকতে দেখা যায়। তাঁদের একজন সদর উপজেলার চরবিনপাড়া গ্রামের চম্পা ঘোষ (৬৪)। দুই বছর ধরে তিনি এখানে পূজার ফুল–অনুষঙ্গ বিক্রি করেন। তাঁর স্বামী কিশোরী ঘোষ মারা গেছেন সাত বছর আগে। নগরের ছোট বাজার এলাকায় আগে শ্রমিকের কাজ করতেন। এক ছেলে অনেক কষ্টে সংসার চালান। ছেলের সংসারে একটু সহযোগিতা করতে তিনি নিজে এখন পূজার ফুল–পাতা নিয়ে বসেন।
দক্ষিণ চরকালীবাড়ি এলাকার আরতি রানী বর্মণের (৬৫) স্বামী মারা গেছেন ১৬ বছর আগে। ছেলেমেয়েরা খোঁজ নেয় না। পাঁচ বছর ধরে এই বাজারে ব্যবসা করছেন। প্রতিদিন সকাল ৬টায় আসেন, সকাল ৯টায় বিক্রি শেষ করে চলে যান। আজ সকাল ৮টা নাগাদ ২৫০ টাকার ফুল–অনুষঙ্গ বিক্রি করেছেন। নানা জায়গা থেকে বেলপাতা, তুলসীপাতা, দূর্বাঘাস সংগ্রহ করেন। নিজের বাড়িতে কয়েক ধরনের ফুলের গাছ লাগিয়ে রেখেছেন।
নগরের কাটাখালী এলাকার ফুলবাসী রাজভর (৭০) ১২ বছর ধরে ফুল বিক্রি করেন। দিনে ৩০০ থেকে ৪০০ টাকা আয় তাঁর।
নগরের আঠারোবাড়ি এলাকার বাসিন্দা রুমা রায় এসেছিলেন পূজার জন্য ফুল কিনতে। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, গ্রামে পূজার জিনিসপত্রের কথা চিন্তা করতে হয় না। কিন্তু শহরে এসব পাওয়া দুষ্কর। তাই এই হাটই তাঁদের ভরসা। কম টাকায় সব পাওয়া যায়।
নগরের নাটকঘর লেনের বাসিন্দা রিপন সাহা বলেন, ‘দুই বছর ধরে প্রতিদিনের ক্রেতা আমি। প্রতিদিন সকালে এসে পূজার অনুষঙ্গ নিয়ে যাই। এই হাটে পূজার জন্য ফুল–বেলপাতা পাওয়া না গেলে শহরের বাসায় বসে প্রতিদিন আমাদের পূজা করা হতো না।’