বাসার তিনতলা ভবনের নির্মাণ কাজ চলছিল। ভবনটি ঘেঁষে ছিল বৈদ্যুতিক সঞ্চালন লাইনের খুঁটি। অসর্তকতায় এক নির্মাণ শ্রমিক ওই খুঁটির তারে বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে আটকে যান; আগুন ছড়িয়ে পড়ে ভবনের তৃতীয় তলায়। একপর্যায়ে পোড়া লাশটি তিনতলা থেকে মাটিতে আছড়ে পড়ে।
রংপুরের পীরগঞ্জ উপজেলার ওসমানপুর গ্রামে গতকাল বুধবার সন্ধ্যা সাড়ে ছয়টার দিকে এ ঘটনা ঘটে। নিহত মোতালেব হোসেন (১৮) উপজেলার কাবিলপুর ইউনিয়ন পরিষদের কাবিলপুর গ্রামের মৃত হাসান আলীর ছেলে। ভবনের মালিক ওসমানপুর গ্রামের আবদুল গফুর। পেশায় তিনি কলেজ শিক্ষক।
পীরগঞ্জ ফায়ার সার্ভিসের স্টেশনের কর্মকর্তা রতন চন্দ্র শর্মা জানান, বৈদ্যুতিক খুঁটি থেকে কমপক্ষে আট ফুট দূরত্বে ভবন নির্মাণ করার নিয়ম রয়েছে। কিন্তু ভবনটি নির্মাণ করা হচ্ছে অনেকটা খুঁটি ঘেঁষে। এ ছাড়া বহুতল ভবন নির্মাণের ক্ষেত্রে ফায়ার সার্ভিসের অনুমতি নিতে হয়। কিন্তু ভবন মালিক কোনো নিয়ম মানেননি।
ঘটনার পর থেকে ভবন মালিক আবদুল গফুর এলাকা ছেড়ে চলে যান। যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তাঁর মুঠোফোন বন্ধ পাওয়া যায়।
পাঁচজন প্রত্যক্ষদর্শী জানান, গতকাল দিনভর ওই ভবনের তিন তলার নির্মাণকাজ চলছিল। মোতালেব হোসেনসহ কয়েকজন শ্রমিক কাজ করছিলেন। সন্ধ্যায় বৈদ্যুতিক তারে মোতালেব হোসেন আটকে গেলে আগুন লাগে। অগ্নিদগ্ধ হন তিনি। আশেপাশের লোকজন ঘটনাটি দেখলেও তাঁদের কিছুই করার ছিল না। একপর্যায়ে তিন তলা ভবন থেকে পোড়া মরদেহ মাটিতে আছড়ে পড়ে।
খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে আসেন ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা। তাঁরা মোতালেবের লাশ উদ্ধার করেন এবং ভবনের আগুন নেভান।
নির্মাণাধীন ভবনে কাজ করছিলেন আবু বক্কর সিদ্দিক। তিনি বলেন, ‘ভবনে আমরা গত একমাস থেকে নির্মাণকাজ করছি। ঘটনার সময়ে আমি রুমের ভেতরে কাজ করছিলাম। বাইরে সাটারিংয়ের কাজ করছিলেন মোতালেব। কীভাবে যে ঘটনাটি ঘটেছে, তা বুঝে উঠতে পারিনি।’
ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী আবদুর রহিম বলেন, ‘ভবনের তিন তলায় হঠাৎ আগুন জ্বলতে দেখে ভাবছিলাম, সেখানে কারেন্টের ঝালাইয়ের কাজ করা হচ্ছে। কিন্তু পরে দেখি ওই ছেলের (মোতালেব) গায়ে কারেন্টের আগুন লেগেছে। নিচ থেকে তা দেখে আমরা চিৎকার করছিলাম। কিন্তু করার কিছুই ছিল না। একপর্যায়ে আমাদের চোখের সামনেই আগুনে সে পুড়ে যায়। তাঁর লাশ তিনতলা ভবন থেকে মাটিতে পড়ে। ঘটনাটি অনেকে মুঠোফোনে ভিডিও করেছে।’