মহেশখালীতে হামুনের আঘাতে উপড়ে পড়েছে পল্লীবিদ্যুৎতের খুঁটি, সড়কে গাছ পড়ে বন্ধ যান চলাচল
ঘূর্ণিঝড় হামুন চট্টগ্রাম-কক্সবাজার উপকূলে আঘাত করে কিছুটা এগিয়ে দুর্বল হয়ে বাংলাদেশের স্থলভাগ অতিক্রম করেছে। ঝড় শুরুর পর গতকাল মঙ্গলবার রাতে ঝোড়ো হাওয়ায় দেয়াল ও গাছ চাপা পড়ে কক্সবাজার জেলায় দুজনের মৃত্যু হয়েছে। অনেক জায়গায় স্বাভাবিকের চেয়ে ৩ থেকে ৫ ফুট উচ্চতার জলোচ্ছ্বাস হয়েছে। ঝড়ে পুরো কক্সবাজার জেলার বিদ্যুৎ ও টেলিযোগাযোগ ব্যবস্থা বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে। এর মধ্যে ঝড়ে পুরো লন্ডভন্ড হয়ে পড়েছে দ্বীপ উপজেলা মহেশখালী। গাছপালা ভেঙে পড়ায় দ্বীপটির সড়ক যোগাযোগ এখনো বিচ্ছিন্ন রয়েছে।
গতকাল রাতে প্রচণ্ড বাতাসে মহেশখালীর অন্তত ১০ হাজার কাঁচা ঘরবাড়ি বিধ্বস্ত হয়েছে বলে জানিয়েছেন জনপ্রতিনিধিরা। এ ছাড়া শত শত গাছ ভেঙে পড়ে বন্ধ হয়ে পড়েছে সড়ক যোগাযোগ। ঝড়ে পল্লী বিদ্যুতের অন্তত ৩৫টি খুঁটি ভেঙে গেছে। এ কারণে উপজেলার পুরো এলাকায় বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ রয়েছে। পল্লী বিদ্যুতের সংশ্লিষ্টরা বলছেন, উপজেলার বিদ্যুতের লাইন চালু করতে অন্তত ১৫ দিন সময় লাগবে।
সরেজমিনে দেখা গেছে, উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় গাছপালা উপড়ে পড়েছে। বেশ কয়েক জায়গায় ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছঝে বেড়িবাঁধ। মুঠোফোন নেটওয়ার্ক না থাকায় উপদ্রুত এলাকার মানুষজন কারও সঙ্গে যোগাযোগও করতে পারছে না।
মুঠোফোন নেটওয়ার্ক না থাকায় উপজেলার ক্ষয়ক্ষতির প্রকৃত হিসাব এখনো পাওয়া যায়নি। জানতে চাইলে উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা কাউসার আহমেদ বলেন, সড়কের ওপর গাছপালা ভেঙে পড়েছে। এ ছাড়া মুঠোফোন নেটওয়ার্ক না থাকায় ক্ষয়ক্ষতির প্রকৃত হিসাব পাওয়া যায়নি। তবে কমপক্ষে ১০ হাজার বাড়ি বিধ্বস্ত হয়েছে। আপাতত দুই টন চাল ও নগদ ৫০ হাজার টাকা বরাদ্দ পাওয়া গেছে। আরও বরাদ্দ চাওয়া হয়েছে।
উপজেলা প্রকৌশলী সবুজ কুমার দে বলেন, সড়কে ওপর গাছ উপড়ে পড়ায় গতকাল রাত থেকে যানবাহন চলাচল বন্ধ রয়েছে। আজ বুধবার সকাল থেকে যান চলাচল স্বাভাবিক করার জন্য সড়কের ওপর থেকে গাছ সরিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করা হচ্ছে।
কক্সবাজার পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির মহেশখালী জোনাল অফিস সূত্রে জানায়, ঘূর্ণিঝড় হামুনের এর প্রভাবে গতকাল সন্ধ্যার পর থেকে এই এলাকায় দমকা হাওয়া শুরু হয়। এতে প্রচণ্ড বাতাসের প্রভাবে বিভিন্ন এলাকায় বিদ্যুৎ সঞ্চালন লাইনের ওপর গাছের ডালপালা ভেঙে পড়ে। এ সময় ৩৫টি বিদ্যুতের খুঁটি ভেঙে যায়। নষ্ট হয়ে গেছে ২৩ টি ট্রান্সফার। এ ছাড়া ২৩ টি খুঁটির আংশিক ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার পাশাপাশি ১৫০ টি জায়গায় তার ছিঁড়ে গেছে। ফলে খুঁটি ভেঙে যাওয়ার পাশাপাশি বিদ্যুৎ সঞ্চালন লাইনের ওপর গাছপালা ভেঙে পড়ায় গতকাল বিকেল থেকে পুরো উপজেলায় বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ রয়েছে।
জানতে চাইলে কক্সবাজার পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির মহেশখালী জোনাল অফিসের উপমহাব্যবস্থাপক (ডিজিএম) নাজমুল হাসান প্রথম আলোকে বলেন, লাইন স্বাভাবিক করতে সকাল থেকে পল্লী বিদ্যুতের ৪০ কর্মী মাঠে কাজ করছে। কিন্তু ঘূর্ণিঝড় হামুনের প্রভাবে যে পরিমাণ ক্ষতি হয়েছে তার জন্য দরকার অন্তত ৩০০ কর্মী। তাই দ্রুত লোকবল দেওয়ার জন্য ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে অবহিত করা হয়েছে।