কিশোরগঞ্জে হিন্দু বাড়িতে হামলায় জড়িতদের দ্রুত গ্রেপ্তারের দাবিতে বিক্ষোভ
কিশোরগঞ্জ সদরের ব্রাহ্মণকচুরী গ্রামে হিন্দু বাড়িতে হামলা ও লুটপাটের মামলায় আসামিদের দ্রুত গ্রেপ্তারের দাবিতে মানববন্ধন ও বিক্ষোভ মিছিল হয়েছে। এ সময় জেলা প্রশাসকের (ডিসি) কাছে স্মারকলিপি দিয়েছে ভুক্তভোগী পরিবার। তাদের অভিযোগ, হামলা ও লুটপাটের ঘটনায় জড়িত ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে মামলা হলেও গ্রেপ্তারে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর তৎপরতা নেই।
আজ বুধবার বেলা ১১টার দিকে কিশোরগঞ্জ জেলা শহরের কালীবাড়ী মোড় এলাকায় আধা ঘণ্টাব্যাপী মানববন্ধন কর্মসূচি পালন করা হয়। এতে ভুক্তভোগী পরিবারের সদস্যরাসহ স্থানীয় হিন্দু সম্প্রদায়ের দুই শতাধিক নারী-পুরুষ অংশগ্রহণ করেন। পরে এখান থেকে তাঁরা একটি বিক্ষোভ মিছিল বের করেন। বিক্ষোভকারীরা জেলা প্রশাসক কার্যালয়ে গিয়ে ডিসির কাছে স্মারকলিপি দেন।
হিন্দু বাড়িতে হামলা ও লুটপাটের ঘটনায় রশিদাবাদ ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান ও বিএনপি নেতা ইদ্রিস মিয়া, ফারুক মিয়াসহ জড়িত আসামিদের দ্রুত গ্রেপ্তারের দাবি জানান বিক্ষোভকারীরা। পাশাপাশি ভুক্তভোগীরা যাতে দ্রুত নিজ বাড়িতে ফিরতে পারেন, সেই দাবিও জানান তাঁরা। এ সময় ভুক্তভোগী গীতা রানী বর্মনের ভাই প্রদীপ বর্মন বলেন, ঘটনা দীর্ঘদিন হয়ে গেলেও এখনো কোনো আসামিকে গ্রেপ্তার করা হচ্ছে না।
৫ আগস্ট শেখ হাসিনা সরকার পতনের পর বিকেলে কিশোরগঞ্জ সদর উপজেলার রশিদাবাদ ইউনিয়নের ব্রাহ্মণকচুরী গ্রামে ইউপির সাবেক চেয়ারম্যান ইদ্রিস মিয়ার নেতৃত্বে গীতা রানী বর্মনের বাড়িতে হামলা ভাঙচুর ও লুটপাট চালানো হয়। প্রাণভয়ে বাড়ি ছেড়ে পালিয়ে যায় ভুক্তভোগী গীতা রানীর পরিবার। এখনো তারা বিএনপি নেতা–কর্মীদের ভয়ে বাড়িছাড়া।
এ ঘটনায় গত ২৩ সেপ্টেম্বর কিশোরগঞ্জ সদর মডেল থানায় মামলা করেন গীতা রানী বর্মন। মামলায় ইউপির সাবেক চেয়ারম্যান ও বিএনপি নেতা ইদ্রিস মিয়াসহ ১০ জনকে আসামি করা হয়েছে। অজ্ঞাতনামা আসামি আরও ৫০ জন। এ ছাড়া জেলা প্রশাসক ও পুলিশ সুপার বরাবর লিখিত অভিযোগ করেছেন গীতা রানী। এ ঘটনার প্রতিকার চেয়ে ২৭ সেপ্টেম্বর বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান বরাবর লিখিত অভিযোগ দিয়েছে গীতা রানী ভৌমিকের পরিবার।
অভিযোগের বিষয়ে জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক মাজহারুল ইসলাম বলেন, সংখ্যালঘু পরিবারের সঙ্গে এমন ঘটনা অনাকাঙ্ক্ষিত। এ ঘটনার সঙ্গে জড়িত থাকায় ইদ্রিসের বিরুদ্ধে দলীয়ভাবে সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেওয়ার পাশাপাশি তাঁকে বহিষ্কার করা হয়েছে। এ বিষয়ে কিশোরগঞ্জ সদর মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আবদুল্লাহ আল মামুন বলেন, এ ঘটনায় আসামিরা পলাতক থাকায় এখনো কাউকে গ্রেপ্তার করা যায়নি। তবে গ্রেপ্তারে অভিযান অব্যাহত রয়েছে।
গীতা রানী বর্মন বলেন, ‘বাড়িতে গিয়ে ভাঙচুর ও লুটপাটের ঘটনায় মামলা করায় ক্ষুব্ধ হয়ে আসামিরা বসতবাড়ির দরজা–জনালা খুলে নিয়ে যায়। মামলা প্রত্যাহরের জন্য আসামিরা মুঠোফোনেসহ আমাদের নানাভাবে হুমকি দিচ্ছে এবং আসামিরা উল্টো বিদেশে থাকা আমার এক ছেলেকে আরেকটি মামলার আসামি করেছে। যে কারণে আমরা আমাদের ধর্মীয় উৎসব দুর্গাপূজা ও কালীপূজা উদ্যাপন করতে পারিনি। আমরা এখনো বাড়িছাড়া। পলাতক অবস্থায় অন্যের বাড়িতে আশ্রয় নিয়ে আছি। প্রশাসনের কাছে দাবি, আমরা যাতে আমাদের নিজ ভিটা–বাড়িতে ফেরত যেতে পারি এবং নিরাপদে বসবাস করতে পারি।’
এ ঘটনায় দ্রুত প্রতিকার না পেলে আরও কঠোর আন্দোলন কর্মসূচির হুঁশিয়ারি দেন মানববন্ধন ও বিক্ষোভে অংশগ্রহণকারীরা। মানববন্ধন থেকে কয়েকজন বক্তা সারা দেশের যেসব জায়গায় হিন্দু সম্প্রদায়ের বাড়িঘরে হামলা ও লুটপাট হয়েছে, সেসব ঘটনার বিচার দাবি করেন।