নির্বাচন-পরবর্তী সহিংসতা: হিজলায় আওয়ামী লীগের দুই পক্ষের সংঘর্ষে আহত ৭
বরিশালের হিজলায় নির্বাচনী বিরোধকে কেন্দ্র করে আওয়ামী লীগের দুই পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। আজ মঙ্গলবার দুপুরে হিজলার রেমেডি মেডিকেল সার্ভিসেস ক্লিনিকের সামনে এ ঘটনা ঘটে। সংঘর্ষে উভয় পক্ষের অন্তত সাতজন আহত হয়েছেন। তাঁদের হিজলা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স ও বরিশাল শেরে-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।
বরিশাল-৪ (হিজলা-মেহেন্দীগঞ্জ) আসনের সংসদ সদস্য পংকজ নাথ ও নাগরিকত্ব জটিলতায় প্রার্থিতা হারানো আওয়ামী লীগের আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক শাম্মী আহমেদের অনুসারীদের মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। হিজলা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) জুবাইর আহমেদ সংঘর্ষের বিষয়টি প্রথম আলোকে নিশ্চিত করেছেন।
আহত ব্যক্তিরা হলেন হিজলা উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও বড়জালিয়া ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান এনায়েত হোসেন হাওলাদারের ছেলে উপজেলা যুবলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক আম্মান হাওলাদার, যুবলীগের কর্মী মাসুদ সিকদার, মো. আনিম, বরকত সিকদার এবং বড়জালিয়া ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি হিরণ হাওলাদারের অনুসারী আলমগীর হাওলাদার, সোলায়মান হাওলাদার ও সোয়েব হাওলাদার। তাঁদের মধ্যে এনায়েত হোসেন সংসদ সদস্য পংকজ নাথের এবং হিরণ হাওলাদার শাম্মী আহমেদের অনুসারী হিসেবে পরিচিত।
আওয়ামী লীগের নেতা এনায়েত হোসেন হাওলাদার বলেন, এবারের নির্বাচনে বরিশাল-৪ আসনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী ছিল না। তাঁরা স্বতন্ত্র প্রার্থী পংকজ নাথের পক্ষে কাজ করেন। এ জন্য শাম্মীর অনুসারীরা ক্ষুব্ধ ছিলেন। আজ দুপুরে রেমেডি মেডিকেল সার্ভিসেস ক্লিনিকে অন্তঃসত্ত্বা এক নারীর জন্য তাঁর দলের কর্মী মাসুদ সিকদার রক্ত দিতে গিয়েছিলেন। ক্লিনিক থেকে বের হওয়ার পর হিরণ হাওলাদারের অনুসারীরা তাঁকে বেধড়ক পেটান। খবর পেয়ে তাঁর ছেলে সেখানে গেলে তাঁর ওপরও হামলা হয়। পরে আনিস, বরকতসহ ছয়-সাতজনকে কুপিয়ে ও পিটিয়ে আহত করা হয়।
তবে অভিযোগ ভিত্তিহীন বলে দাবি করেছেন আওয়ামী লীগের নেতা হিরণ হাওলাদার। এনায়েত হোসেনের অনুসারীদের বিরুদ্ধে পাল্টা হামলার অভিযোগ তুলে তিনি বলেন, ‘গতকাল (সোমবার) হিজলা ডিগ্রি কলেজে এনায়েতের লোকজন আমাদের অপমান করেন। আজকের হামলার ব্যাপারে আমি কিছু জানি না। হামলা-মারধরের খবর পেয়ে হাসপাতালে গিয়ে দেখি, আমার দুই ভাই ও ভাতিজা গুরুতর আহত অবস্থায় চিকিৎসা নিচ্ছে।’
হিজলা থানার ওসি জুবাইর আহমেদ বলেন, আওয়ামী লীগের দুই পক্ষের হামলায় সাতজন আহত হলেও কোনো পক্ষ থানায় অভিযোগ করেনি। অভিযোগ পেলে আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
সংসদ সদস্য পংকজ নাথ এবার দলীয় মনোনয়ন পাননি। তাঁর জায়গায় দলের আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক শাম্মী আহমেদকে মনোনয়ন দেওয়া হয়। পংকজ নাথ স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়ে শাম্মী আহমেদের বিরুদ্ধে দ্বৈত নাগরিকত্ব থাকার অভিযোগ করেন। এতে তাঁর প্রার্থিতা বাতিল হয়ে যায়। পরে লিভ টু আপিলেও নির্বাচন কমিশনের আদেশ বহাল থাকায় তিনি নির্বাচনে অংশ নিতে পারেননি। এতে সহজেই ৭ জানুয়ারির নির্বাচনে আবার সংসদ সদস্য হন পংকজ নাথ। এদিকে নির্বাচনের পর মেহেন্দীগঞ্জ ও হিজলায় একের পর এক হামলার ঘটনা ঘটছে। হামলার পর শাম্মীর সমর্থক নেতা-কর্মীরা অনেকেই ভয়ে ও আতঙ্কে এলাকা ছেড়েছেন।