বিএনপির কর্মিসভায় ওসি বললেন, ‘গণ-অভ্যুত্থান না হলে ওসি হতে পারতাম না’

কুষ্টিয়ার খোকসা উপজেলার জানিপুর সরকারি পাইলট মাধ্যমিক বিদ্যালয় মাঠে বুধবার বেলা ১১টার দিকে বিএনপির কর্মিসভায় বক্তব্য দেন খোকসা থানার ওসি শেখ মঈনুল ইসলামছবি: ভিডিও থেকে নেওয়া

কর্মিসভার মঞ্চে উঠে বিএনপির নেতা-কর্মীদের উদ্দেশে কুষ্টিয়ার খোকসা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শেখ মঈনুল ইসলাম বলেন, ‘৫ তারিখের গণ-অভ্যুত্থান না হলে আমি এখানে ওসি হতে পারতাম না। এটা আমি সব সময় বলি এবং স্বীকার করি।’

গত বুধবার বেলা ১১টার দিকে কুষ্টিয়ার খোকসা উপজেলার জানিপুর সরকারি পাইলট মাধ্যমিক বিদ্যালয় মাঠে বিএনপির অনুষ্ঠানে এ কথা বলেন এই পুলিশ কর্মকর্তা।

গতকাল শুক্রবার রাতে সেই বক্তব্যের একটি ভিডিও ক্লিপ সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়ে। এর পর থেকে রাজনৈতিক দলের মঞ্চে ওসির এমন বক্তব্যকে ‘অপেশাদার’ বলে মন্তব্য করছেন অনেকে। ২ মিনিট ৪৪ সেকেন্ডের ভিডিও ক্লিপটি প্রথম আলোর কাছে আছে।

ভিডিওতে সাবলীলভাবে ওসিকে বক্তব্য দিতে দেখা যায়। তিনি তাঁর বক্তব্যে বিএনপির নেতা-কর্মীদের উদ্দেশে বলেন, ‘১৫-১৬ বছর কীভাবে, কোথায় ছিলেন, আপনারা আমার চেয়ে ভালো জানেন। কোথায়, কীভাবে কষ্ট করেছেন। আপনারা ঠিকমতো বাড়িতে থাকতে পারেননি। আমি পুলিশ, হয়তো আরেকজন ছিল। আমাকে বাধ্য করেছে। হয়তো আমাকে দেখে আপনারা বলছেন, এ বড় বড় কথা বলে, আসলে না। আমিও ওই রকম নির্যাতিত ছিলাম।’

ভিডিওতে দেখা যায়, ওসি শেখ মঈনুল ইসলাম বিএনপির কর্মীদের আহ্বান জানিয়ে বলেন, ‘অনেক ত্যাগতিতিক্ষার পর আপনারা (বিএনপি) এ পর্যন্ত আসতে পেরেছেন। ১৫-১৬ বছর পর আপনারা এক জায়গায় হতে পারছেন, সবার সঙ্গে কথা বলতে পারছেন। আপনাদের কাছে বিনীত অনুরোধ করব, যে সুযোগটা আসছে, সেই সুযোগটা সদ্ব্যবহার করেন। এমন কোনো কাজ কইরেন না যে আপনাদের মধ্য থেকে তৃতীয় পক্ষ কোনো সুযোগ নিতে পারে।’

এরপর ওসিকে বলতে দেখা যায়, ‘এ প্রোগ্রামটা আপনাদেরই। আমি কেন পুলিশ আসব? তারপরও আমি আসলাম। আমার থানার সামনে, আসতে হবে। মনও চায় আসতে। মনও টান দেয় যে এখানে একটু কথা বলি। আসলে সব সময় তো সব কথা বলা যায় না। আমি আপনাদের কাছে বিনীত অনুরোধ করছি, কেউ কোনো ঝামেলা করবেন না। আমরা আপনাদের সেবায় এখানে আছি। যতটুকু পারি, আমাদের পক্ষ থেকে আইনশৃঙ্খলা নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করব। সব হিংসা-বিদ্বেষ ভুলে যান। আপনাদের মধ্যে যদি হিংসা থাকে, তাহলে তৃতীয় পক্ষ সুযোগ নেবে। এই সুযোগ আর দেওয়া যাবে না।’

গতকাল রাতে এ ব্যাপারে যোগাযোগ করা হলে ওসি শেখ মঈনুল ইসলাম তাঁর বক্তব্যের জন্য দুঃখপ্রকাশ করেন। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, ‘সেখানে বক্তব্য দেওয়া ঠিক হয়নি। তবে থানার সামনেই সভাটি হচ্ছিল। সেখানে লাঠি-চায়নিজ কুড়াল নিয়ে মারামারি হচ্ছিল। সেটা শান্ত করতেই বক্তব্য দেওয়া হয়। এই মঞ্চে বক্তব্য দেওয়া ঠিক নয়, তা জানি। এ ছাড়া আমার অন্য কোনো উদ্দেশ্যও ছিল না।’

সমাবেশে উপস্থিত ছিলেন এমন কয়েকজনের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, বুধবার সকাল ১০টার দিকে খোকসা উপজেলা ও পৌর বিএনপির আয়োজনে বিশেষ কর্মিসভা ছিল। সভায় প্রধান অতিথি ছিলেন বিএনপির চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা ও জেলা বিএনপির সাবেক সভাপতি সৈয়দ মেহেদী আহমেদ।

খোকসা উপজেলা বিএনপির আহ্বায়ক সৈয়দ আমজাদ আলীর সভাপতিত্বে কর্মিসভার উদ্বোধক ছিলেন জেলা বিএনপির আহ্বায়ক কুতুব উদ্দিন আহমেদ এবং প্রধান বক্তা ছিলেন জেলা বিএনপির সদস্যসচিব প্রকৌশলী জাকির হোসেন সরকার। এ ছাড়া সভার বিশেষ অতিথি ছিলেন জেলা বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক শেখ সাদী, নুরুল ইসলাম আনসার প্রামাণিক ও সদস্য আলাউদ্দিন খান। অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনায় ছিলেন খোকসা পৌর বিএনপির সভাপতি মুন্সি এ জেড জি রশিদ।

সকাল থেকেই সেখানে স্থানীয় দুই গ্রুপের সমর্থকদের মধ্যে উত্তেজনা ও হট্টগোল চলছিল। প্রথমে বিএনপি নেতা আলাউদ্দিন খান মঞ্চের মাইকে নেতা-কর্মীদের শান্ত থাকতে বলেন। পরে বেলা ১১টার দিকে খোকসা থানার ওসি এসে মঞ্চে উঠে মাইকে বক্তব্য দেন। সেই বক্তব্যই গতকাল ছড়িয়ে পড়ে।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে কুষ্টিয়া জেলা পুলিশের এক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা প্রথম আলোকে বলেন, ওসির বক্তব্যের বিষয়টি নজরে এসেছে। তিনি কী বক্তব্য দিয়েছেন, সেটা তাঁর ব্যক্তিগত ব্যাপার। তবে বিষয়টি খতিয়ে দেখা হচ্ছে।