পটুয়াখালীতে সরকারি দপ্তরসহ বিভিন্ন স্থাপনায় ভাঙচুর, অগ্নিসংযোগ
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পতনের পর থেকে পটুয়াখালীতে সরকারি দপ্তরসহ বিভিন্ন স্থাপনা, আওয়ামী লীগ নেতাদের বাড়িঘরে হামলা, ভাঙচুরের ঘটনা ঘটছে। লুট করা হয়েছে সরকারি দপ্তরের জিনিসপত্র। আগুন দেওয়া হয়েছে সরকারি স্থাপনা, গাড়ি ও মোটরসাইকেলে। গত সোমবার বিকেল থেকে এসব ঘটনা ঘটছে।
গত সোমবার বিকেলে শহরের সোনালী ব্যাংক মোড়ে স্থাপিত বঙ্গবন্ধু ও মুক্তিযুদ্ধের ভাস্কর্যে আগুন দিয়েছেন একদল লোক। এ সময় ভাস্কর্যটি ভেঙে ফেলা হয়। পটুয়াখালী শহরের আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নেতা আফজাল হোসেনের বাড়িতে ভাঙচুর, লুটপাট ও অগ্নিসংযোগ করা হয়েছে। বাসার তৃতীয় তলা থেকে পঞ্চম তলা পর্যন্ত কাস্টমস ও ভ্যাট কার্যালয়ে আগুন দেওয়া হয়েছে। এ সময় সরকারি দপ্তরের সাতটি কম্পিউটার লুট করা হয়েছে। ভবনের নিচতলায় চারটি মোটরসাইকেল ও একটি মাইক্রোবাসে আগুন দিয়ে পুড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। এর আগে জেলা আওয়ামী লীগ কার্যালয় দুই দফায় হামলা চালানো হয়। ভাঙচুর চালিয়ে আসবাবপত্র রাস্তায় ফেলে অগ্নিসংযোগ করা হয়েছে।
এ ছাড়া জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি কাজী আলমগীর, জেলা শ্রমিক লীগের সহসভাপতি খলিলুর রহমান, জেলা ছাত্রলীগ নেতা ও পৌর কাউন্সিলর মঈন খান চানু, জেলা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক তানভির হাসান আরিফ, সদর উপজেলার আউলিয়াপুর ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি ও ইউপি চেয়ারম্যান হুমায়ুন কবিরের বাড়িতে হামলা ও ভাঙচুর করা হয়েছে। এ সময় মালপত্র লুটও করা হয়েছে।
এদিকে দুমকি উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান কাওসার আমিন হাওলাদারকে শারীরিকভাবে লাঞ্ছিত করা হয়েছে। উপজেলা আওয়ামী লীগ কার্যালয়ে অগ্নিসংযোগ করা হয়েছে। দুমকি উপজেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি আবুল কালাম আজাদের বাড়িতেও হামলার ঘটনা ঘটেছে।
রাঙ্গাবালী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কার্যালয়ের প্রবেশপথে স্থাপিত বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্য ভাঙচুরের চেষ্টা করেন একদল লোক। পরে তাঁরা রাঙ্গাবালী প্রেসক্লাবে হামলা চালান এবং আসবাবপত্র ভাঙচুর করে আগুন জ্বালিয়ে দেন।
গলাচিপা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কার্যালয়ের প্রবেশপথে বঙ্গবন্ধুর ম্যুরাল ভাঙচুরের ঘটনা ঘটেছে। গলাচিপা উপজেলা আওয়ামী লীগ কার্যালয়ের আসবাবপত্র রাস্তায় ফেলে আগুন ধরিয়ে দেওয়া হয়েছে। গলাচিপা উপজেলা শহরের ফিডার রোডে পটুয়াখালী-৩ (গলাচিপা ও দশমিনা) আসনের সদ্য সাবেক আওয়ামী লীগের সংসদ সদস্য এস এম শাহজাদার বাসভবনে ইটপাটকেল ছোড়া হয়েছে। এ ছাড়া বাউফল, কলাপাড়া উপজেলাতেও হামলা ও ভাঙচুরের ঘটনা ঘটেছে।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে আওয়ামী লীগের একাধিক নেতা দাবি করেন, জেলায় এ পর্যন্ত প্রায় ৩০০ স্থাপনায় ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ করা হয়েছে।
হামলা ও ভাঙচুরের সঙ্গে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কেউ জড়িত নয় বলে জানিয়েছেন আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীরা। গতকাল বুধবার রাত সাড়ে আটটার দিকে পটুয়াখালী প্রেসক্লাবে সংবাদ সম্মেলন করে তাঁরা এ কথা জানান। একই সঙ্গে এসব হামলা, ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগের ঘটনায় নিন্দা জানিয়েছেন।
সংবাদ সম্মেলনে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সংগঠক ফাহাদ হোসেন বলেন, পটুয়াখালীর যেসব স্থানে হামলা ও ভাঙচুরের ঘটনা ঘটেছে, দুই দিন ধরে শিক্ষার্থীরা তা পরিষ্কার করেছেন।
জেলা বিএনপির আহ্বায়ক কমিটির সদস্যসচিব স্নেহাংশু সরকার পটুয়াখালী প্রেসক্লাবে সাংবাদিকদের বলেন, পটুয়াখালীতে দুষ্কৃতকারীরা ভাঙচুর, দোকানপাট চাঁদাবাজির মতো ঘৃণিত অপরাধ করছে। এর সঙ্গে বিএনপি এবং এর সহযোগী সংগঠনের কেউ জড়িত নেই। যদি কেই জড়িত থাকেন, তাঁদের বিরুদ্ধে সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেওয়া হবে। তিনি আরও বলেন, বিএনপির পক্ষ থেকে বিভিন্ন সম্প্রদায়, বিশেষ করে হিন্দু সম্প্রদায়ের জানমাল ও মন্দির সুরক্ষিত রাখা হবে।