ধানের দাম কমলেও চট্টগ্রামে কমেনি চালের দাম
বোরোর মৌসুমে দাম কমার আশ্বাস দিলেও চট্টগ্রামের বাজারে এখনো বাড়তি চালের দাম। এর আগে প্রাকৃতিক দুর্যোগ, ফলন নষ্ট, ধানের দাম বৃদ্ধিসহ নানা কারণে গত আমন মৌসুমে বস্তাপ্রতি ১০০ থেকে ১৫০ টাকা চালের দাম বাড়িয়েছিলেন। সে সময় ব্যবসায়ীরা জানিয়েছেন, বোরো সংগ্রহ শুরু হলে বাজারে দাম কমে আসবে। তবে বোরোর ভরা মৌসুমেও দাম কমতির দিকে নেই বাজারে। অথচ এই মৌসুমে ধানের দাম আমনের মৌসুমের তুলনায় কম।
চট্টগ্রামের পাইকারি বাজারে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, গত মার্চ মাসে আমনের মৌসুম শেষ ও ধানের দাম বাড়ার অজুহাতে বস্তাপ্রতি চালে নতুন করে ১০০ থেকে ১৫০ টাকা বেড়েছিল বাজারে। এর আগে জানুয়ারি মাসেও বেড়েছিল চালের দাম। বর্তমানে ধানের দাম কমলেও মিলমালিকেরা চাল সরবরাহ কমিয়েছেন, তাই বাজারে দাম কমেনি।
ব্যবসায়ীরা বলছেন, বাজারে চালের দাম আরও ২০০ টাকা কম হওয়ার কথা। সরকারের পক্ষ থেকে ধানের দাম কেজি প্রতি ৩২ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে। সে হিসেবে চালের দাম কমার কথা। কিন্তু বাজারে সরবরাহ কমিয়ে রেখে মিলমালিকেরা চালের কৃত্রিম সংকট তৈরি করে চালের দাম বাড়াচ্ছেন।
গত শুক্রবার চট্টগ্রামের পাহাড়তলি বাজারে প্রতি কেজি গুঁটি সেদ্ধ ৪৬ টাকা, জিরাশাইল ৬৪ টাকা, মিনিকেট আতপ ৫৪ টাকা, মিনিকেট সেদ্ধ ৫২ টাকা, স্বর্ণা ৫৪ টাকা ও কাটারি ৬৮ টাকা দরে বিক্রি হয়েছে। পাইকারি ব্যবসায়ীরা বলছেন, দাম আরও চার থেকে পাঁচ টাকা কম থাকার কথা। কারণ, ধানের দাম এখন কম।
পাহাড়তলি বণিক সমিতির সাবেক সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ নিজাম উদ্দিন প্রথম আলোকে বলেন, বোরোর মৌসুমে চালের দাম বস্তাপ্রতি আরও ২০০ টাকা কম থাকার কথা। কিন্তু ধানের দাম কমলেও চালের দাম কমেনি। সরকার ধানের বস্তায় ছয় ধরনের তথ্য দিতে বলেছে। অনেক মিলার এটি বাস্তবায়ন করতে না পারায় কম পরিমাণে চাল বাজারজাত করছে। ফলে সরবরাহ–সংকট তৈরি হচ্ছে।
সরকারিভাবে এ বছর প্রতি কেজি বোরো ধানের দাম নির্ধারণ করা হয়েছে ৩২ টাকা। সে হিসেবে প্রতি মণ (৪০ কেজি) ধানের দাম পড়ে ১ হাজার ২৮০ টাকা। তবে চালকল মালিকেরা জানিয়েছেন, এর চেয়ে কম দামেই বাজারে ধান বিক্রি হচ্ছে। বর্তমানে প্রতি মণ ধান ১ হাজার ১০০ থেকে ১ হাজার ২৫০ টাকায় কেনা পড়ছে।
ধানের উৎপাদন ও কেনা দাম কম হলেও চাল উৎপাদনে খরচ বেশি পড়ছে বলে জানিয়েছেন কলমালিকেরা। তাঁদের হিসেবে, প্রতি কেজি মোটা চাল উৎপাদনে ৪২ টাকা ও চিকন চালে ৫২ টাকার মতো খরচ হচ্ছে। তবে উৎপাদন খরচের সঙ্গে বাজারে দামের পার্থক্য বেশি।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে চট্টগ্রাম রাইস মিল মালিক সমিতির সভাপতি ফরিদ উদ্দিন আহমেদ প্রথম আলোকে বলেন, সরকারিভাবে ধানের দাম কম, তা ঠিক। তবে প্রতি মণ ধানের কেবল ৬৭ শতাংশ চাল হয়। বাকি অংশ কুঁড়া। এর পাশাপাশি পরিবহন খরচও আছে। আগে যেকোনো বস্তায় চাল বাজারজাত হতো। এখন প্রতিদিন বস্তায় ছয় তথ্য ছাপাতে হচ্ছে। সেখানেও একটা বাড়তি খরচ রয়েছে।
কনজ্যুমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্যাব) কেন্দ্রীয় সহসভাপতি এস এম নাজের হোসাইন প্রথম আলোকে বলেন, আমনের মৌসুমেও নানা অজুহাতে দাম বাড়িয়েছিল ব্যবসায়ীরা। বোরো মৌসুমেও একই কাজ করছে তাঁরা। অসাধু ব্যবসায়ীদের আটকাতে কৃষক পর্যায় থেকে খুচরা বাজার পর্যন্ত সব পর্যায়ে নজরদারি বাড়াতে হবে। তাহলে চালের দাম সাধারণ ক্রেতার ক্রয়ক্ষমতার মধ্যে থাকবে।