রোহিঙ্গা আশ্রয়শিবিরে জাতিসংঘ মহাসচিবের মিয়ানমারবিষয়ক দূত

কক্সবাজারের উখিয়ার আশ্রয়শিবিরে বিভিন্ন উন্নয়ন প্রকল্প পরিদর্শন করেন জাতিসংঘ মহাসচিবের মিয়ানমারবিষয়ক দূত নোয়েলিন হেজার। মঙ্গলবার দুপুরে
ছবি: প্রথম আলো

কক্সবাজারে রোহিঙ্গাদের আশ্রয়শিবির পরিদর্শন করেছেন জাতিসংঘের মহাসচিবের মিয়ানমারবিষয়ক দূত নোয়েলিন হেজার। জাতিসংঘের মানবাধিকারবিষয়ক হাইকমিশনার মিশেল ব্যাশেলেতের সফরের সাত দিনের মাথায় মিয়ানমারবিষয়ক দূতের সফরকে গুরুত্বপূর্ণ বলে মনে করছেন শরণার্থীরা। তাঁদের ধারণা, প্রত্যাবাসনের বিষয়ে রোহিঙ্গাদের মনোভাব কী, তা বোঝার চেষ্টা করছে জাতিসংঘ।

মঙ্গলবার সকালে ঢাকা থেকে কক্সবাজারে পৌঁছান নোয়েলিন হেজার। সড়কপথে বেলা ১১টার দিকে পৌঁছান ৪৫ কিলোমিটার দূরে উখিয়ার কুতুপালং আশ্রয়শিবিরে। বিকেল সাড়ে চারটা পর্যন্ত তিনি আশ্রয়শিবিরের বিভিন্ন উন্নয়ন কার্যক্রম, শিশুদের পাঠদান, মেয়েদের সেলাই প্রশিক্ষণ কেন্দ্র, ত্রাণ বিতরণ কেন্দ্র পরিদর্শন করেন। দুপুরে ৩টি পৃথক দলের অন্তত ৩০ জন রোহিঙ্গা নারী-পুরুষের সঙ্গে কথা বলেন নোয়েলিন হেজার। তবে সফরের লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য নিয়ে সাংবাদিকদের কাছে তিনি কোনো মন্তব্য করেননি।

তবে জাতিসংঘের উদ্বাস্তুবিষয়ক সংস্থা ইউএনএইচসিআরের মুখপাত্র পোর্টিলা রেজিনা বলেন, রোহিঙ্গাদের নিরাপদ প্রত্যাবাসন নিশ্চিত করতে কাজ করছে জাতিসংঘ। নোয়েলিন হেজারের আশ্রয়শিবির পরিদর্শন গুরুত্বপূর্ণ।

রোহিঙ্গা নেতারা বলছেন, ১৬ আগস্ট উখিয়ার আশ্রয়শিবিরে পরিদর্শন করেন জাতিসংঘের মানবাধিকারবিষয়ক হাইকমিশনার মিশেল ব্যাশেলেত। রোহিঙ্গাদের সঙ্গে কথা বলে তিনি প্রত্যাবাসন বিষয়ে রোহিঙ্গাদের মনোভাব ও আশ্রয়শিবিরের চলমান পরিস্থিতি বোঝার চেষ্টা করেন। রাখাইন রাজ্যের পরিবেশ অনুকূলে না থাকায় এখনই রোহিঙ্গাদের সেখানে ফেরত পাঠানো ঠিক হবে না জানিয়ে ব্যাশেলেত নিরাপদ প্রত্যাবাসনের জন্য রোহিঙ্গাদের কিছুদিন ধৈর্য ধরতে বলেন। নোয়েলিন হেজারের সফরকেও তাঁরা (রোহিঙ্গা নেতারা) গুরুত্বপূর্ণ ধরে নিয়েছেন।

জাতিসংঘের মহাসচিবের দূত হিসেবে নিয়োগের পর গেল সপ্তাহে প্রথমবারের মতো মিয়ানমার সফরের পরপরই চার সদস্যের দল নিয়ে বাংলাদেশে এলেন নোয়েলিন হেজার। দলের সঙ্গে আছেন শরণার্থী ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনার কার্যালয়ের (আরআরআরসি) অতিরিক্ত শরণার্থী ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনার মোহাম্মদ সামছু-দ্দৌজা। প্রথম আলোকে তিনি বলেন, ক্যাম্প পরিস্থিতি দেখে সন্তুষ্টি প্রকাশ করেছেন নোয়েলিন হেজার। বেলা ১১টা থেকে বিকেল সাড়ে ৪টা পর্যন্ত তিনি একাধিক রোহিঙ্গা দলের সঙ্গে বৈঠক করে শরণার্থীদের মনোভাব জানার চেষ্টা করেন। রোহিঙ্গারাও প্রত্যাবাসন দ্রুত শুরু করার ক্ষেত্রে মিয়ানমারের ওপর আন্তর্জাতিক মহলের আরও চাপ বৃদ্ধিতে জাতিসংঘের হস্তক্ষেপ চেয়েছে।

সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, বেলা ১১টায় কুতুপালং আশ্রয়শিবিরে (ক্যাম্প-৪) পৌঁছে প্রথমে বিশ্ব খাদ্য সংস্থা ডব্লিউএফপি পরিচালিত ই-ভাউচার সেন্টার পরিদর্শন করেন হেজার। এরপর আন্তর্জাতিক অভিবাসন সংস্থার লার্নিং সেন্টার (শিশুশিক্ষা কেন্দ্র) ঘুরে দেখেন। শিশুদের ইংরেজি, গণিত ও বার্মিজ ভাষায় পাঠদান দেখে মুগ্ধ হন হেজার। দুপুরে ৩টি দলে অন্তত ৩০ জন নারী–পুরুষের সঙ্গে বৈঠক করেন হেজার।

বৈঠকে উপস্থিত একজন রোহিঙ্গা নারী বলেন, তাঁকে হেজার জিজ্ঞাসা করেন, মিয়ানমারে ফিরে যেতে রাজি কি না। জবাবে তিনি বলেন, মিয়ানমার যদি তাঁদের নাগরিক হিসেবে স্বীকৃতি দেয়, রাখাইনে ফেলে আসা জন্মভিটা ফেরত দেয়, স্বাধীনভাবে চলাফেরার নিরাপত্তা দেয়, তাহলে অবশ্যই ফিরে যাবেন।

একজন স্কুলশিক্ষক বলেন, ৮০ শতাংশ রোহিঙ্গা ফিরতে রাজি। কিন্তু রাখাইনে নিরাপদে বসবাসের সুযোগ তৈরি করে দিতে হবে। এ ক্ষেত্রে জাতিসংঘের হস্তক্ষেপ প্রয়োজন। একজন ধর্মীয় নেতা বলেন, আশ্রয়শিবিরে মিয়ানমারের কিছু সশস্ত্র গোষ্ঠীর তৎপরতা চলে। তাদের কারণে খুন-অপহরণ, ধর্ষণের মতো ঘটনা ঘটছে।আশ্রয়শিবিরের বাইরে কাঁটাতারের বেড়া দেওয়ার কারণে নিরাপত্তা জোরদার হয়েছে।