নেত্রকোনা পৌরসভা
খানাখন্দে ভরা সড়ক, সীমাহীন দুর্ভোগ
সাতপাই লেভেল ক্রসিং থেকে সাতপাই সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় পর্যন্ত সড়কের অবস্থা বেশি খারাপ।
সড়কজুড়ে অসংখ্য ছোট-বড় গর্ত। বেশির ভাগ স্থানে পিচঢালাই নেই। একটু বৃষ্টি হলেই সেসব গর্তে পানি জমে যায়। প্রতিনিয়তই উল্টে পড়ছে যানবাহন। আহত হচ্ছেন যাত্রীরা। এ ছাড়া, কাদাপানি ছিটে পাশের দোকানপাট ও পথচারীদের পোশাক নষ্ট হচ্ছে। এ দুরবস্থা নেত্রকোনা পৌর শহরের সাতপাই এলাকার প্রধান সড়কের।
দীর্ঘদিন ধরে স্থানীয় লোকজন এ সড়ক সংস্কারের দাবি জানালেও কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে না। এলাকার লোকজন বলেন, বিশেষ করে সাতপাই লেভেল ক্রসিং থেকে সাতপাই সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় পর্যন্ত ২০০ মিটারের অবস্থা খুব খারাপ। সড়ক সংস্কার না করায় দিন দিন এসব খানাখন্দ গাড়ির চাকার চাপে ভাঙতে ভাঙতে বড় হচ্ছে।
গত বুধবার দুপুরে সড়কের বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা যায়, সড়কজুড়ে পানি থইথই করছে। এর মধ্যেই চলছে বিভিন্ন যানবাহন। বৃষ্টির পানি জমায় গাড়ি চলছে ধীরে। লোকজন যে আশপাশ দিয়ে হাঁটবেন, তারও কোনো উপায় নেই।
পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) কার্যালয়ের প্রধান ফটকের সামনে এলাকায় গর্তে আটকে পড়ে একটি মাইক্রোবাস। আরিফুল ইসলাম নামের ওই মাইক্রোবাসচালক বলেন, ভোর থেকে গভীর রাত পর্যন্ত এই সড়ক দিয়ে লাগাতারভাবে যান চলাচল করে। এত দিন হয়ে গেল এখন পর্যন্ত কেউ গর্তগুলো ভরাট করার কাজ করছে না।
এ সময় ছবি তুলতে গেলে সড়কের পাশে রফিক মিয়া নামের একজন ব্যবসায়ী আক্ষেপ করে বলেন, ‘আর ছবি তুলে কোনো লাভ নেই। অনেকেই শুধু শুধু ছবি তুলে নিয়ে যান। রাস্তা মেরামতের কোনো কাজ হয় না। এই অবস্থা কোথাও আছে বলে আমার জানা নেই। কিছু ইট-সুরকি ফেলে রাখলেও তো চলাচল করা যেত।’
নেত্রকোনা সরকারি কলেজের বাংলা বিভাগের চূড়ান্ত বর্ষের একজন ছাত্রী বলেন, সড়কের গর্তে গাড়ি আটকে থেকে সব সময়ই যানজট লেগে থাকে। অনেক সময় গর্তে জমে থাকা কাদাপানি ছিটে পোশাক নষ্ট হয়। অবস্থা এত খারাপ যে হেঁটে চলাই কষ্টকর। এই গর্তগুলো দ্রুত মেরামত করা প্রয়োজন।
এলাকার লোকজনের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, শহরের সাতপাই এলাকার প্রধান সড়কটি পূর্বধলা উপজেলা সদরের সঙ্গে যুক্ত হয়েছে। ওই সড়কটি দিয়ে প্রতিদিন প্রায় ৫০ হাজার মানুষ চলাচল করেন। গত দুই বছর ধরে সাতপাই লেভেল ক্রসিং থেকে সাতপাই সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় পর্যন্ত প্রায় ২০০ মিটারের অবস্থা খুব খারাপ। ওই পথে ছোট-বড় শতাধিক গর্ত রয়েছে। এর মধ্যে জেলা পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) সামনে ও চানখার মোড় এলাকায় অন্তত ২১টি বড় গর্ত রয়েছে। এককেটি গর্ত ১৫ থেকে ২০ ফুট লম্বা ও ২ থেকে ৩ ফুটের বেশি গভীর।
সড়কের দুই পাশে বাসাবাড়ি, অফিস, দোকানপাট রয়েছে। সড়কের পাশে নালা না থাকায় একটু বৃষ্টি হলেই পানি জমে যায়। রিকশা, ভ্যান, ঠেলাগাড়ি, মোটরসাইকেল, ব্যাটারি ও সিএনজিচালিত অটোরিকশা, বাস, মালবোঝাই ট্রাক, পিকআপ, লরিসহ অন্যান্য যানবাহন মাঝেমধ্যে এসব গর্তে আটকা পড়ে। হেঁটে চলাচলেও দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে।
ওই এলাকার কয়েকজন বলেন, আগে রাস্তাটি ভাঙা থাকলেও অতটা মন্দ ছিল না। কিন্তু বর্ষা শুরুর পর থেকেই গর্তগুলো ভেঙে এখন কোথাও কোথাও ছোট পুকুরের মতো হয়ে যাচ্ছে।
এ ব্যাপারে মেয়র মো. নজরুল ইসলাম খান বলেন, ‘হাসপাতাল এলাকার সড়কসহ সাতপাই এলাকার সড়কটি সংস্কারের জন্য দরপত্র হয়েছে। তবে আপাতত সড়কের গর্তগুলোতে দ্রুত কিছু খোয়া ও বালু ফেলা হবে। আর মাঝেমধ্যেই গর্তগুলোতে খোয়া-বালু দেওয়া হয়। কিন্তু অতিরিক্ত বৃষ্টির কারণে পানি জমে যাওয়ায় কয়েক দিন ধরে এমন অবস্থা হয়েছে।
রুবেল মিয়া নামের পৌরসভার এক ব্যবসায়ী বলেন, সড়কটি নিয়ে এখন মানুষ রীতিমতো দুঃখে আছে। গত বছরও এমন অবস্থা ছিল। পরে কিছু ইট-বালু ফেলা হয়েছিল। কিন্তু কেউ সংস্কার করছে না। তাঁরা দ্রুত সড়কটি মেরামতের দাবি জানান।