গদখালীতে হু হু করে বাড়ছে গাঁদা ফুলের দাম
‘হলুদ গাঁদার ফুল, রাঙা পলাশ ফুল/ এনে দে, এনে দে, নইলে বাঁধব না বাঁধব না চুল...’—চুলে জড়াতে গাঁদা ফুল যে নারীর কাছে কত প্রিয়, সে কথা গানে গানে সেই কবেই বলে গেছেন দ্রোহ ও প্রেমের কবি কাজী নজরুল ইসলাম। আগামীকাল মঙ্গলবার পয়লা ফাল্গুন ঘিরে গাঁদা ফুলের চাহিদা বাড়ছে। আজ সোমবার ফুলের রাজ্য যশোরের গদখালীর পাইকারি বাজারে গাঁদা ফুলের জমজমাট কেনাবেচা হয়। দামও বাড়ছে হু হু করে।
এ বছরের সবচেয়ে বেশি দামে আজ গদখালী বাজারে গাঁদা ফুল কেনাবেচা হয়েছে। প্রতি হাজার গাঁদা ফুল ৩৫০ থেকে ৪০০ টাকা দরে কেনাবেচা হয়েছে। গতকাল রোববার সমপরিমাণ ফুল ১০০ থেকে ১৫০ টাকায় বিক্রি হয়েছিল। গাঁদা ফুলের ভালো দাম পেয়ে কৃষক ও ব্যবসায়ীরা ভীষণ খুশি।
আজ সকালে গদখালী মোকামে গিয়ে দেখা যায়, কাকডাকা ভোর থেকেই কৃষকেরা বড় বড় ঝুড়ি ও বস্তায় ভরে গাঁদা ফুল নিয়ে হাজির হচ্ছেন মোকামে। যশোর-বেনাপোল মহাসড়কের পাশের এই বাজারে মানুষ আর মানুষ। ভ্যানের ওপর থেকে কৃষকদের গাঁদা ফুল বিক্রি হয়ে যাচ্ছে। সকাল নয়টা বাজার আগেই হাটের বেচাকেনা প্রায় শেষ হয়ে যায়। এরপর শুরু হয় নারীদের মালা গাঁথার কাজ। তাঁরা বাজারের পাশে বাড়ির আঙিনায় সুই–সুতা দিয়ে মালা গাঁথার কাজ শুরু করেন। ওই মালা সকাল ৯টা থেকে দুপুর ১২টা পর্যন্ত বিভিন্ন পরিবহনে করে ঢাকাসহ দেশের জেলায় জেলায় পাঠানো হয়।
যশোর ফুল উৎপাদক ও বিপণন সমবায় সমিতি সূত্রে জানা গেছে, বিশ্ব ভালোবাসা দিবস ও পয়লা ফাল্গুনকে কেন্দ্র করে আজ গাঁদা ফুলের বাজার ছিল চড়া। ১৫০ জন ফুলচাষি অন্তত ২০ লাখ গাঁদা ফুল নিয়ে হাটে আসেন। গড়ে আট লাখ টাকার বেচাকেনা হয়েছে।
গাঁদা ফুলের ভালো দাম পেয়ে আবদুল হামিদের মতো কৃষকের মুখে চওড়া হাসি ফুটেছে। ঝিকরগাছা উপজেলার পটুয়াপাড়া গ্রামের এই কৃষক বলেন, ‘এই বছরের মধ্যে আজই গাঁদা ফুলের দাম সবচেয়ে বেশি পেলাম। ১৪ হাজার গাঁদা নিয়ে হাটে এসেছি। ৩৫০ টাকা হাজার দরে এই ফুল বিক্রি হয়েছে। সপ্তাহখানেক আগে হাজারটা গাঁদা ফুল ৫০ টাকা দরে বিক্রি করতে হয়েছে।’ তিনি ৩৩ শতাংশ জমিতে গাঁদা ফুলের চাষ করেছেন বলে জানান।
হাড়িয়া গ্রামের গাঁদা ফুলচাষি শফিকুল ইসলাম বলেন, ‘আজ থেকে গাঁদা ফুলের দাম উঠল। ২১ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত গাঁদা ফুলের দাম উঠতে থাকবে। গত বছর ১ হাজার গাঁদা ফুল ৭০০ টাকা পর্যন্ত বিক্রি হয়েছিল। আশা করছি, এবারও এমন দাম পাব।’
যশোর ফুল উৎপাদক ও বিপণন সমবায় সমিতির সভাপতি আবদুর রহিম বলেন, পয়লা ফাল্গুন ও আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস উপলক্ষে গাঁদা ফুলের চাহিদা বাড়ে। আজ গাঁদা ফুলের বাজার চড়া হয়েছে। অন্তত সাত দিন এমন দাম থাকবে।
আড়তদারের মাধ্যমে কৃষকের এই ফুল বেচাকেনা হয়। কৃষকের কাছ থেকে ব্যাপারীরা গাঁদা ফুল কিনে স্থানীয় নারীদের দিয়ে মালা তৈরি করিয়ে নেন। ওই মালা বস্তায় ভরে সারা দেশের খুচরা ফুলের দোকানে পাঠানো হয়। গদখালী বাজারের উল্টো দিকে সড়কের পাশে সদির আলী গ্রামের অন্তত ২০০ নারী পাঁচটি বাড়ির আঙিনায় বসে গাঁদা ফুলের মালা গাঁথার কাজ করেন।
সকাল ১০টার দিকে সেখানকার জেসমিন আক্তারের বাড়িতে গিয়ে দেখা যায়, বাড়ির উঠান ও বারান্দায় বসে অন্তত ১০ জন নারী গাঁদা ফুলের মালা গাঁথার কাজ করছেন। তিনি বলেন, ‘সংসারের কাজ সামলে গ্রামের নারীরা গাঁদা ফুলের মালা গাঁথার কাজ করেন। যিনি যত ফুল গাঁথতে পারেন, তিনি তত বেশি টাকা রোজগার করেন। দুই থেকে তিন ঘণ্টা কাজ করলে একেকজন ১০০ থেকে ১৫০ টাকা আয় করতে পারেন। ব্যাপারীরা আমার কাছে ফুল ও সূতা দিয়ে যান। আমি নারীদের দিয়ে কাজ করিয়ে নিই।’
গাঁদা ফুল গাঁথার কাজে ব্যস্ত মধু বেগম বলেন, ‘গাঁদা ফুলের মালা গাঁথা আমাদের কাছে খুব আনন্দের। আয়ও হয়।’