নৌকাবিহীন আসনে জাপার ভোট ৬৬০

পিরোজপুর-৩ (মঠবাড়িয়া) আসনে প্রথমে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পেয়েছিলেন আশরাফুর রহমান। কিন্তু দলীয় সিদ্ধান্ত অনুযায়ী আসনটি জাতীয় পার্টিকে ছেড়ে দিলে তিনি মনোনয়নপত্র প্রত্যাহার করেন। কিন্তু স্বতন্ত্র হিসেবে মাঠে নামেন আশরাফুরের বড় ভাই শামীম শাহনেওয়াজ। দলের নেতা-কর্মীরা জোটের প্রার্থী, অর্থাৎ জাতীয় পার্টির মাশরেকুল আজমের পক্ষে ছিলেন না। ফলাফল বড় ব্যবধানে জিতেছেন শামীম শাহনেওয়াজ। আর মাশরেকুল পান মাত্র ৬৬০ ভোট।

স্থানীয় লোকজন বলেন, তাঁরা আগেই বুঝেছিলেন এখানে মাশরেকুলের ভরাডুবি হবে। তারপরও তাঁরা ভাবেননি, তিনি এত কম ভোট পাবেন। কারণ, এ আসনে আরেক স্বতন্ত্র হিসেবে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছিলেন এ আসনের চারবার সংসদ সদস্য ও জাতীয় পার্টির আরেক বর্ষীয়ান নেতা মো. রুস্তম আলী ফরাজী। রুস্তম ফরাজীও দুবার লাঙ্গল প্রতীক নিয়ে নির্বাচিত হয়েছে। বাকি দুবার স্বতন্ত্র হিসেবে মাঠে ছিলেন।

রিটার্নিং কর্মকর্তার কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, পিরোজপুর-৩ (মঠবাড়িয়া) আসনে আটজন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন। এর মধ্যে স্বতন্ত্র প্রার্থী শামীম শাহনেওয়াজ ৬২ হাজার ১৩০ ভোট পেয়ে বিজয়ী হন। সংসদ সদস্য মো. রুস্তম আলী ফরাজী ৪৭ হাজার ৬২১ ভোট পেয়ে দ্বিতীয় হন। মাত্র ৬৬০ ভোট পেয়ে তৃতীয় হন জাতীয় পার্টির প্রার্থী মাশরেকুল আজম।

দলীয় সূত্রে জানা গেছে, রুস্তম আলী জাতীয় পার্টির কেন্দ্রীয় কমিটির ভাইস চেয়ারম্যান ও এ আসনের বর্তমান সংসদ সদস্য। জাতীয় পার্টিতে রওশন এরশাদ ও জি এম কাদেরের দ্বন্দ্ব চলছে। রওশনপন্থী নেতা হওয়ায় রুস্তম আলী ফরাজী দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে দলের মনোনয়ন বঞ্চিত হন।

আর এ আসনে মনোনয়ন পান জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যানের উপদেষ্টা মাশরেকুল আজম। তিনি ছিলেন এলাকায় অপরিচিত মুখ। নির্বাচনে মাশরেকুল আজম লাঙল প্রতীক নিয়ে নির্বাচন করলেও জাতীয় পার্টির একাংশ স্বতন্ত্র প্রার্থী মো. রুস্তম আলী ফরাজীর পক্ষে কাজ করেন। অন্যদিকে আওয়ামী লীগের দলীয় প্রার্থী না থাকায় দলের নেতা-কর্মীরা ভাগ হয়ে কাজ করেন দুই স্বতন্ত্র প্রার্থী শামীম শাহনেওয়াজ ও রুস্তম আলী ফরাজীর পক্ষে। দলের ও জোটের নেতা-কর্মীদের পাশে না পাওয়ায় মাশরেকুল আজম মাঠে নিষ্ক্রিয় ছিলেন। এ কারণে তিনি এত কম ভোট পেয়ে হেরেছেন এবং জামানতও হারিয়েছেন।

মঠবাড়িয়া পৌর জাতীয় পার্টির সভাপতি ফারুক হোসেন বলেন, রুস্তম আলী ফরাজী চার বার নির্বাচিত সংসদ সদস্য। তাঁকে দলীয় মনোনয়ন না দিয়ে অপরিচিত মুখ মাশরেকুল আজমকে দলীয় মনোনয়ন দেওয়ার কারণে ‘জাতীয় পার্টির ভোটব্যাংকের’ আসনে এমন লজ্জাজনক হার হয়েছে।

এ বিষয়ে মাশরেকুল আজমকে ফোন করা হলে তিনি পরে কথা বলবেন বলে খুদেবার্তা পাঠান। তবে পরে আর যোগাযোগ করা যায়নি। তবে তাঁর ঘনিষ্ঠ মো. হাসান মিয়া বলেন, ‘আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীরা আমাদের পাশে ছিলেন না। জাতীয় পার্টির কিছু লোকজন আমাদের পক্ষে কাজ না করায় আমরা হেরেছি।’

রুস্তম আলী ফরাজীর ব্যক্তিগত সহকারী মো. বয়েজীদ বলেন, ভোটের দুই দিন আগের থেকে সমর্থকদের কুপিয়ে পিটিয়ে জখম করা হয়েছে। ভোটের আগের রাতে বাড়ি বাড়ি গিয়ে ভোটারদের ভয়ভীতি দেওয়া হয়েছে। বিভিন্ন কেন্দ্রে কর্মীদের মারধর ও জাল ভোট দেওয়া হয়েছে। প্রশাসনকে জানানোর পরেও তাঁরা তেমন কোনো পদক্ষেপ নেয়নি। রুস্তম আলীকে হারিয়ে দেওয়া হয়েছে।

প্রথমবারেই শামীমের বাজিমাত

পিরোজপুর-৩ আসনের শামীম শাহনেওয়াজের বাবা বীর মুক্তিযোদ্ধা মজিবর রহমান। তাঁর ছোট ভাই আশরাফুর রহমান জেলা আওয়ামী লীগের সদস্য ও সাবেক উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান। শামীম রাজনীতির সঙ্গে জড়িত থাকলেও দলের কোনো পদে ছিলেন। দলের সিদ্ধান্তে আশরাফুর রহমান মনোনয়নপত্র প্রত্যাহার করায় তিনি ভোটের মাঠে নামেন।

শামীম শাহনেওয়াজ বলেন, ‘আমাকে মঠবাড়িয়ার ভোটারেরা বিজয়ী করেন।’

মঠবাড়িয়া উপজেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি এমাদুল হক খান বলেন, পিরোজপুর-৩ আসনটি বিভিন্ন সময়ে জাতীয় পার্টিকে ছেড়ে দেওয়া হতো। এ আসনে শামীম শাহনেওয়াজের জয়ে তাঁরা খুশি।