শ্রমিকেরা কাজ না করায় সাভার ও আশুলিয়ায় আরও ২১টি পোশাক কারখানায় ছুটি ঘোষণা

নির্ধারিত সময়ে কারখানায় প্রবেশ করছেন শ্রমিকেরা। কারখানার সামনে নিরাপত্তার দায়িত্ব পালন করছেন সেনাবাহিনী, পুলিশ, র‍্যাব সদস্যরা। আজ সকালে আশুলিয়ার পলাশবাড়ী এলাজার পার্ল গার্মেন্টসেছবি: প্রথম আলো

ঢাকার সাভার ও আশুলিয়া শিল্পাঞ্চলে আজ সকালে নির্দিষ্ট সময়ে অধিকাংশ কারখানা শ্রমিকেরা কাজে যোগ দিয়েছেন। তবে কারখানায় উপস্থিত হওয়ার পরও কাজ না করায় ২১টি কারখানা ছুটি দিয়েছে কর্তৃপক্ষ। একই কারণে আগে থেকে বন্ধ রয়েছে ১৯টি তৈরি পোশাক কারখানা।

এদিকে গত কয়েক দিনে যেসব এলাকায় শ্রমিক বিক্ষোভের ঘটনা ঘটছে, সেসব এলাকায় মোতায়েন রয়েছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। দুপুর সাড়ে ১২টা পর্যন্ত কারখানাসংলগ্ন কোথাও কোনো অপ্রীতিকর ঘটনার খবর পাওয়া যায়নি বলে জানিয়েছেন আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা। আশুলিয়ার বিভিন্ন সড়কে সেনাবাহিনী, র‍্যাব ও পুলিশ সদস্যরা টহল দিচ্ছেন।

আশুলিয়ার শিল্পাঞ্চল পুলিশ-১ ও কারখানা–সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা জানান, আজ মঙ্গলবার সকাল থেকে সাভার ও আশুলিয়ার পোশাক কারখানাগুলোতে নির্ধারিত সময়ে উপস্থিত হন শ্রমিকেরা। তবে কিছু কারখানায় শ্রমিকেরা দাবি পূরণ না হওয়ায় কাজ বন্ধ রেখে কারখানার ভেতরে বসে থাকেন। এ অবস্থায় দুপুর ১২টা পর্যন্ত ২১টি কারখানা ছুটি ঘোষণা করা হয়।

শিল্পাঞ্চল পুলিশ জানায়, শিল্পাঞ্চল আশুলিয়ায় বিভিন্ন কারখানায় হাজিরা বোনাস বৃদ্ধি, শ্রমিক ছাঁটাই বন্ধ, টিফিন বিল বৃদ্ধিসহ নানা দাবিতে কয়েক দিন ধরে বিক্ষোভ করছিলেন শ্রমিকেরা। এ ছাড়া কারখানায় সমপরিমাণ নারী–পুরুষ নিয়োগ ও চাকরির দাবিতে বিক্ষোভ করেন চাকরিপ্রত্যাশীরা। আন্দোলকারীরা সচল কারখানার সামনে এসে বিক্ষোভ ও হামলা চালান। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যদের সঙ্গে সংঘর্ষের ঘটনাও ঘটে। এর জেরে অনেক কারখানায় শ্রমিকেরা কাজ শুরু করলেও কিছুক্ষণের মধ্যে কারখানা ছুটি ও বন্ধ ঘোষণা করে কারখানা কর্তৃপক্ষ। গত কয়েক দিনের এমন অস্থিশীল পরিস্থিতির পর আজ শিল্পাঞ্চল আশুলিয়ার সার্বিক পরিস্থিতি অনেকটাই স্বাভাবিক।

বাংলাদেশ গামের্ন্ট ও সোয়েটার্স শ্রমিক ট্রেড ইউনিয়ন কেন্দ্রের আইনবিষয়ক সম্পাদক খায়রুল মামুন প্রথম আলোকে বলেন, গতকাল (সোমবার) তৈরি পোশাক খাতের পরিস্থিতি স্বাভাবিক করতে সন্ধ্যায় বিজিএমইএ কারখানামালিক, শ্রমিকনেতা, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যদের বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। ওই বৈঠকে কিছু দাবির বিষয়ে সিদ্ধান্ত হওয়ার পর আজকে অধিকাংশ কারখানা সচল রয়েছে। তবে কিছু কারখানা আগে থেকে বন্ধ এবং কিছু কারখানায় শ্রমিকেরা অভ্যন্তরীণ কিছু দাবিতে কাজ বন্ধ করে ভেতরে বসে আছেন। দুপুরের পর প্রকৃত পরিস্থিতি বোঝা যাবে।
খায়রুল মামুন আরও বলেন, বিজিএমইএ থেকে হাজিরা বোনাস ও টিফিন বিল বৃদ্ধি, শ্রমিকদের কালো তালিকাভুক্ত না করা, নারী–পুরুষের বৈষম্য করা হবে না—এমন সিদ্ধান্তের ঘোষণা দেওয়া হয়েছে, যা খুবই ইতিবাচক। পাশাপাশি শ্রমিকদের অন্য যেসব দাবি রয়েছে, সেগুলোর বিষয়ে শ্রমিকদের সঙ্গে কারখানার মালিকপক্ষ আলোচনা করে সিদ্ধান্ত নেবে। এখন এ বিষয়টির সমাধান হলে পরিস্থিতি পুরোপুরি স্বাভাবিক হয়ে যাবে।

র‍্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র‍্যাব)-৪, সিপিসি-২–এর কোম্পানি কমান্ডার মেজর জালিস মাহমুদ খান বলেন, ভোর থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত র‍্যাব-৪ ও র‍্যাব-২–এর ১৫টি টহল দল কাজ করছে। পরিস্থিতি আজকে অনেকটাই স্বাভাবিক। সাভার ও আশুলিয়ার আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে সেনাবাহিনী, শিল্প পুলিশ, বিজিবির সদস্যরাও কাজ করছেন।

শিল্পাঞ্চল পুলিশ-১–এর পুলিশ সুপার মোহাম্মদ সারোয়ার আলম বলেন, বেশির ভাগ কারখানায় শ্রমিকেরা কাজ করছেন। আগের বন্ধ থাকা ১৯টি কারখানা আজও বন্ধ রয়েছে। বেশ কিছু কারখানার শ্রমিকেরা কারখানা উপস্থিত হলেও তাঁদের দাবি নিয়ে মালিকপক্ষের সঙ্গে সমঝোতা না হওয়ার তাঁরা কাজ বন্ধ করে বসে আছেন। শ্রমিকেরা বসে ছিলেন, এমন ২১টি কারখানায় ইতিমধ্যে ছুটি ঘোষণা করছে কারখানা কর্তৃপক্ষ। সব মিলিয়ে আজ ৪০টি কারখানায় কাজ বন্ধ রয়েছে। কোথাও শ্রমিক বিক্ষোভের ঘটনা ঘটেনি। পরিস্থিতি শান্ত রয়েছে।