কোরবানির মাংস নিয়ে ঈদের পরদিন গ্রামে ছুটছেন অনেকে

ব্যস্ততার কারণে ঈদ করেছেন শহরে। ঈদের পরদিন কোরবানির মাংস নিয়ে গ্রামে যাচ্ছেন। শহর ছেড়ে আসা দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলগামী যাত্রীদের ভিড় ছিল আজ দৌলতদিয়া লঞ্চ ঘাটে। গোয়ালন্দ, রাজবাড়ী, ১৮ জুনছবি: এম রাশেদুল হক

রাজধানীর মিরপুরে একটি মাদ্রাসায় শিক্ষকতা করেন সোয়াইব হোসেন। পরিবারসহ রাজধানী থাকেন। কোরবানিও করেছেন সেখানে। তাঁর দুই হাতে দুটি ব্যাগ। ঈদের পরদিন কোরবানির মাংস নিয়ে তিনি গ্রামের বাড়ি মাগুরার শ্রীপুরে যাচ্ছেন। আজ মঙ্গলবার ঈদের পরদিন রাজবাড়ীর গোয়ালন্দ উপজেলার দৌলতদিয়া-পাটুরিয়া নৌপথ দিয়ে সোয়াইবের মতো অনেককেই বাড়িতে যাচ্ছেন। ঢাকায় ঈদ করে কেউ কেউ স্বজনদের বাড়িতে বেড়াতে যাচ্ছেন।

আজ মঙ্গলবার আজ সকাল ১০টা থেকে দুপুর ১২টা পর্যন্ত দৌলতদিয়ার লঞ্চ ও ফেরিঘাটে দেখা গেছে, ঈদের পরদিনও রাজধানী ছেড়ে দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলগামী মানুষ বাড়িতে ছুটছেন। সেই তুলনায় শহরমুখী যাত্রী তেমন দেখা যায়নি। ৩ নম্বর ফেরিঘাটে হাসনাহেনা ইউটিলিটি (ছোট) ফেরি ভেড়ানো। দুপুর পৌনে ১২টার দিকে পাটুরিয়া থেকে বীরশ্রেষ্ঠ জাহাঙ্গীর ও ভাষাশহীদ বরকত নামের দুটি রো রো (বড়) ফেরি পন্টুনে ভিড়ে। ফেরিতে গাড়ি, মোটরসাইকেলের পাশাপাশি কয়েক শ যাত্রী। ফেরিতে আসা অধিকাংশ যাত্রীর হাতে কোরবানির মাংসের ব্যাগ দেখা যায়।

সাভারের একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে চাকরি করেন আনোয়ার হোসেন। ঈদের আগের দিন ছুটি পেলেও ঝামেলা এড়াতে ঈদের পরদিন পরিবার নিয়ে ফরিদপুরে গ্রামের বাড়িতে যাচ্ছেন। আনোয়ার হোসেন বলেন, ‘যে সময় ছুটি পেয়েছি, ওই সময় পরিবার নিয়ে অনেক ঝামেলা পোহাতে হতো। এ জন্য আজ গ্রামে যাচ্ছি। গ্রামে বাবা-মা আছেন। কাছাকাছি শ্বশুরবাড়ি। সাভারে ছাগল কোরবানি দিয়েছিলাম। ওই গোশত নিয়ে পরিবারের সবার সঙ্গে মিলেমিশে খাব।’

লঞ্চঘাটে গিয়ে দেখা গেল, পাটুরিয়া থেকে আসা প্রতিটি লঞ্চে যাত্রী। ধারণক্ষমতার চেয়ে বাড়তি যাত্রী নিয়ে লঞ্চঘাটে এসে ভিড়ছে। ঈদের পরদিন হলেও সকাল থেকেই মানুষ শহর ছেড়ে গ্রামে ছুটছেন। বিআইডব্লিউটিএর তদারকিতে আনসার সদস্যরাও কাজ করছেন।

পন্টুনে অন্যদের সঙ্গে কাজ করছেন আনসার সদস্য আবদুল মান্নান। যাত্রীর চাপ দেখে বললেন, ‘সকাল থেকে লঞ্চবোঝাই যাত্রী আসছেন। ঈদের পরদিন অনেকে গ্রামে থাকা পরিবার, স্বজনদের বাড়িতে যাচ্ছেন। অধিকাংশের হাতে কোরবানির গোশতের ব্যাগ।’

সাভারের একটি পোশাক কারখানায় কাজ করেন মর্জিনা বেগম। তাঁর সঙ্গে আরেক বোন ও ভাগনি থাকেন। ঈদের আগে ছুটি হলেও রাস্তায় যানজটসহ বাড়তি ঝামেলা এড়াতে ঈদের পরদিন আজ গ্রামের বাড়িতে যাচ্ছেন। মর্জিনার ভাগনি সাথী ইসলাম বলেন, ‘ঈদের আগে রাস্তায় অনেক সমস্যা হয়। সাভারে ঈদ করে আজ সকালে রওনা হয়েছি। অনেকটা নিরিবিলি পরিবেশে ঘাটে পৌঁছে লঞ্চে একটু ভিড় পেয়েছি। তারপরও এখন পর্যন্ত ভালোভাবে ঘাটে পৌঁছাতে পারছি।’

পাটুরিয়া থেকে আসা সলিমাবাদ-১ নামের একটি লঞ্চ ঘাটে এসে পৌঁছে। লঞ্চটি যাত্রীতে ঠাসা। ধারণক্ষমতা ১৬০ জন। যাত্রীদের ভাষ্য অনুযায়ী, অন্তত ২৫০ জন এসেছেন। ঈদের সময় পাটুরিয়া থেকে কর্তৃপক্ষের সামনে দিয়ে এভাবে এলে কোনো বাধার মুখে পড়েননি।

দৌলতদিয়া ঘাটে কর্মরত বিআইডব্লিউটিএর ট্রাফিক পরিদর্শক জাকির হোসেন বলেন, ঈদের কারণে তুলনামূলক যাত্রীর চাপ থাকবেই। ঈদের পরদিনও শহর ছেড়ে গ্রামে যাচ্ছেন মানুষ। পাটুরিয়া ঘাটে কর্তব্যরত ব্যক্তিরা পরিস্থিতি বুঝে লঞ্চ ছাড়ছেন বলে তিনি মনে করেন।