মুক্তাগাছায় বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের কর্মীকে কুপিয়ে জখম, গ্রেপ্তার ১

মো. মামুনুর রহমানছবি: সংগৃহীত

ময়মনসিংহের মুক্তাগাছার হতরপাড়া এলাকায় গতকাল রোববার রাতে বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে সক্রিয় থাকা মো. মামুনুর রহমান ওরফে আল মামুন (২১) নামের এক কর্মীকে কুপিয়ে ও পিটিয়ে জখম করা হয়েছে। তাঁকে উদ্ধার করে মুক্তাগাছা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করা হয়েছে। তাঁর মাথায় ৯টি সেলাই দেওয়া হয়েছে।

এ ঘটনায় গতকাল রাতেই রাকিবুল ইসলাম (২৪) নামের অভিযুক্ত এক ব্যক্তিকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। তাঁকে আজ সোমবার আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠানো হয়েছে।

আহত মামুনুর রহমান মুক্তাগাছা উপজেলার ঘোগা ইউনিয়নের হতরপাড়া গ্রামের মৃত আন্নেছ আলীর ছেলে। বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে তিনি ঢাকার আশুলিয়া এলাকায় গুলিবিদ্ধ হয়েছিলেন। তিনি বিদ্যাগঞ্জ বিএম টেকনিক্যাল কলেজ থেকে এ বছর এইচএসসি পরীক্ষা দেবেন। আর রাকিবুল উপজেলার ঘোগা ইউনিয়নের সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সদস্য শরীফ আহমেদের ইটের ভাটায় শ্রমিকের কাজ করতেন।

মামুনুরকে কুপিয়ে ও পিটিয়ে জখম করার ঘটনায় তাঁর বড় ভাই মো. আল আমিন বাদী হয়ে থানায় মামলা করেছেন। আজ করা মামলায় রাকিবুল, তাঁর দুই ভাই, বাবাসহ আটজনের নাম উল্লেখ করা হয়। পুলিশ ওই মামলায় গ্রেপ্তার দেখিয়ে রাকিবুলকে আজ আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠিয়েছে।

মামুনুর ও রাকিবুল একই এলাকার বাসিন্দা। মামলায় বলা হয়, পারিবারিক বিভিন্ন বিষয় ও কলাবাগান নিয়ে বিরোধের জের ধরে এ হামলা করা হয়। তবে মামুনুর প্রথম আলোকে বলেন, ‘এলাকার নিরীহ মানুষের জমিজমা দখল করে রেখেছিল আওয়ামী লীগের সাবেক চেয়ারম্যান শরীফ আহমেদ ও তার লোকজন। সেগুলো উদ্ধার ও মানুষের জমি ফিরিয়ে দেওয়াতে ভূমিকার রাখায় আমার ওপর হামলা হয়েছে।’

মামলার বাদী আল আমিন মুঠোফোনে প্রথম আলোকে বলেন, ‘আন্দোলনের পর তাঁর ভাই এলাকার বিভিন্ন উন্নয়ন কর্মকাণ্ড ও অন্যায়ের বিরুদ্ধে ভূমিকা রাখতে শুরু করে। মানুষের জমিজমা জোর করে শরীফ আহমেদ দখল করে রাখায় সেগুলো উদ্ধারে আমার ভাই আলোচনা করায় এলাকার একটি গ্রুপের বিপক্ষে চলে যায়। এর কারণেই আমার ভাইকে মেরে ফেলার পরিকল্পনা করে এই কাজ করা হয়।’ তিনি আরও বলেন, ‘রাকিবুলরা আমাদের কিছু জমি দখলে রাখায় ঘটনার দিন দুপুরে এ নিয়ে মামুনুরের সঙ্গে ঝামেলা হয়। পরে বিষয়টি আমি মিটমাট করার জন্য রাকিবুলের সঙ্গেও কথা বলি। যা হওয়ার হয়েছে, এ নিয়ে যেন আর ঝামেলা না হয়, সে অনুরোধ করেছিলাম। কিন্তু রাতেই হামলার ঘটনা ঘটে।’

এদিকে মামুনুরের ওপর হামলার প্রতিবাদে মানববন্ধন ও বিক্ষোভ হয়েছে। আজ দুপুরে মুক্তাগাছা প্রেসক্লাবের সামনে জাতীয় নাগরিক কমিটি ও বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ব্যানারে এ কর্মসূচি করা হয়। বক্তারা বলেন, রাকিবুলের নেতৃত্বে সংঘবদ্ধ একদল সন্ত্রাসী এ হামলা করে।

জাতীয় নাগরিক কমিটির মুক্তাগাছার সংগঠক মাকামে মাহমুদ বলেন, শরীফ আহমেদ আগে থেকে মানুষের জমিজমা দখল ও বিভিন্ন মানুষকে অত্যাচার করতেন। এর প্রতিবাদে মামুনুর কথা বলায় অনেকে জমি ফেরতও পান। যার কারণে তাঁকে দুনিয়া থেকে সরিয়ে দিতে এ হামলা করা হয়। এ ঘটনায় জড়িত সবার বিচার দাবি করেন তাঁরা।

তবে গত ৫ আগস্টের পর থেকে গা ঢাকা দিয়েছেন শরীফ আহমেদ। তাঁর মুঠোফোনে কল করা হলেও সেটি বন্ধ পাওয়া যায়।

মুক্তাগাছা থানার পরিদর্শক (তদন্ত) রিপন চন্দ্র গোপ বলেন, ‘বিষয়টি জানার পর তাৎক্ষণিক অভিযান চালিয়ে একজনকে গ্রেপ্তার করে কারাগারে পাঠানো হয়েছে। গ্রেপ্তার হওয়া ব্যক্তি জামায়াত-শিবিরের সমর্থক বলে আমাদের কাছে দাবি করেছে আসামি নিজেই, তবে দলের পক্ষ থেকে এ বিষয়ে আমাদের কিছু জানানো হয়নি। জমিজমা নিয়ে পূর্ববিরোধের জেরে এ হামলা হয়েছে বলে প্রাথমিকভাবে আমরা জানতে পেরেছি। এ ঘটনায় থানায় মামলা হয়েছে, জড়িত অন্যদের গ্রেপ্তারে অভিযান চলছে।’

মামুনুর রহমানের ওপর হামলার ঘটনায় বৈষম্যবিরোধী আন্দোলন ময়মনসিংহের অন্যতম সমন্বয়ক আশিকুর রহমান রোববার রাতেই নিজের ফেসবুকে স্ট্যাটাসে উল্লেখ করেছেন, ৫ আগস্ট বিপ্লবে গুলিবিদ্ধ মুক্তাগাছার কৃতিসন্তান মামুনের ওপর আজ বাড়ি ফেরার পথে হত্যার উদ্দেশ্যে জামায়াত ও ছাত্রলীগ যৌথ হামলা করে। মাথায় কয়েকটা সেলাই লেগেছে।

আশিকুর প্রথম আলোকে বলেন, ‘ঘটনার সঙ্গে যাঁরা জড়িত, সুষ্ঠু তদন্তের মাধ্যমে তাঁদের দ্রুত গ্রেপ্তার করার দাবি জানাই।’