বাগমারার ‘সার জিল্লুর’ গ্রেপ্তার

আওয়ামী লীগ নেতা জিল্লুর রহমান
ছবি: সংগৃহীত

রাজশাহী-৪ (বাগমারা) আসনের সাবেক সংসদ সদস্য (এমপি) এনামুল হকের ব্যক্তিগত প্রেস সচিব জিল্লুর রহমানকে (৪৫) গ্রেপ্তার করেছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। শুক্রবার দুপুর দুইটার দিকে রাজশাহী মহানগরের কাজলা এলাকা থেকে তাঁকে আটক করা হয়। তাঁকে গ্রেপ্তারের বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন বাগমারা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) তৌহিদুল ইসলাম।

জিল্লুর রহমান বাগমারার শ্রীপুর ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং শ্রীপুর গ্রামের ইসমাইল হোসেন গাইনের ছেলে। গত ৫ আগস্টের পর থেকে তিনি পলাতক ছিলেন। তাঁর বিরুদ্ধে ৫ আগস্ট শিক্ষার্থী ও এক যুবদল নেতাকে গুলি করার অভিযোগ রয়েছে। এ ছাড়া এলাকায় ত্রাস সৃষ্টি, মারধর, নিয়োগ–বাণিজ্য ও প্রতারণার অভিযোগ রয়েছে। এলাকায় তিনি ‘সার জিল্লুর’ নামে পরিচিত। এর আগেও তাঁকে একাধিকবার আটকের চেষ্টা করে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। তবে তিনি বারবার নিজের অবস্থান পরিবর্তন করছিলেন।

রাজশাহী গোয়েন্দা পুলিশের কর্মকর্তারা জানান, জিল্লুর রহমান পলাতক থেকে দলীয় লোকজনদের সংগঠিত করার চেষ্টা করছিলেন। আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর দলীয় নেতাদের নিয়ে একটি হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপ চালু করা হয়। দলের পলাতক নেতারাসহ দলীয় প্রধান শেখ হাসিনা এই গ্রুপে বক্তব্য দেন। এই গ্রুপের উত্তরাঞ্চলের অ্যাডমিন ছিলেন জিল্লুর। আওয়ামী লীগের সময় তিনি সাবেক এমপি এনামুল হকের ব্যক্তিগত প্রেস সচিব হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন।

বাগমারা থানা–পুলিশ ও স্থানীয় বাসিন্দাদের কয়েকজনের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, আওয়ামী লীগ সরকারের সময় প্রাথমিক বিদ্যালয়ের নৈশপ্রহরীসহ বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে বিভিন্ন নিয়োগে ব্যাপক নিয়োগ–বাণিজ্য করা হয়। এসব বিষয়ে ওই সময়ে বিভিন্ন দপ্তরে অভিযোগ করা হয়। জিল্লুর রহমান এলাকায় কিশোরদের নিয়ে একটি বাহিনী গঠন করে বিরোধীদলীয় লোকজনের ওপর নির্যাতন চালাতেন। এসব নিয়ে জিল্লুরের বিরুদ্ধে একাধিক মামলা রয়েছে। এ ছাড়া তাঁর বিরুদ্ধে বাগমারা থানার মোড়ে পানি উন্নয়ন বোর্ডের জমি দখল করে কোটি টাকা মূল্যের গুদাম তৈরি করার অভিযোগ রয়েছে। পানি উন্নয়ন বোর্ড জিল্লুরের বিরুদ্ধে ২০১৯ সালে বাগমারা থানায় মামলার আবেদন করে। তাঁর প্রভাবের কারণে আবেদনটি মামলা হিসেবে তালিকাভুক্ত করতে পারেনি পুলিশ। অবৈধ স্থাপনাও উচ্ছেদ করা যায়নি। জিল্লুর রাজনীতি করার পাশাপাশি সার বিক্রি করতেন, এ জন্য এলাকায় তিনি ‘সার জিল্লুর’ হিসেবে পরিচিত।

জিল্লুরকে গ্রেপ্তারের খবর ছড়িয়ে পড়ার পর বাগমারার শ্রীপুর বাঁধের বাজারের লোকজন উল্লাস প্রকাশ করেন। শ্রীপুর ইউনিয়নের বাসিন্দা ও উপজেলা স্বেচ্ছাসেবক দলের যুগ্ম আহ্বায়ক কাফি জানান, শ্রীপুর এলাকার ত্রাস ছিলেন জিল্লুর। তাঁর দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি চান এলাকার লোকজন। একই দাবি জানিয়ে শ্রীপুর ইউনিয়ন বিএনপির সাধারণ সম্পাদক সালাম পারভেজ জানান, সার জিল্লুর ছিলেন মূর্তিমান আতঙ্ক। বিএনপি ছাড়াও আওয়ামী লীগের লোকজনও তাঁর নির্যাতনের শিকার হয়েছেন।

বাগমারা থানার ওসি তৌহিদুল ইসলাম বলেন, বিকেল পাঁচটায় তাঁকে থানায় হস্তান্তর করা হয়েছে। তাঁর বিরুদ্ধে অনেক অভিযোগ রয়েছে। তিনি আওয়ামী লীগের মিডিয়া সেলের অ্যাডমিন বলে জানা গেছে। বিষয়টি খতিয়ে দেখা হচ্ছে। শনিবার তাঁকে আদালতে তোলা হবে।