বরিশাল সিটি করপোরেশনের বিদায়ী মেয়র সেরনিয়াবাত সাদিক আবদুল্লাহ তাঁর মেয়াদের শেষ বাজেট ঘোষণা করেছেন। গতকাল বৃহস্পতিবার বিকেলে বরিশাল ক্লাব মিলনায়তনে ২০২৩-২৪ অর্থবছরের জন্য ৪৪২ কোটি ৭ লাখ ৭১ হাজার ৩৮৭ টাকার বাজেট ঘোষণা করেন তিনি। এটি বরিশাল সিটির ২১তম এবং বর্তমান মেয়রের পঞ্চম বাজেট।
বাজেট বক্তৃতায় নিজের মেয়াদের সাফল্য–ব্যর্থতা নিয়ে কথা বলেন সাদিক আবদুল্লাহ। তিনি বলেন, নগরের সব কটি খাল দখলমুক্ত করে খনন ও সৌন্দর্যবর্ধন, রাস্তাঘাটের উন্নয়নসহ সার্বিক উন্নয়নে বেশ কয়েকটি বড় প্রকল্প মন্ত্রণালয়ে জমা দেওয়া ছিল। সরকার প্রকল্প অনুমোদন না দেওয়ায় এই উন্নয়ন করা সম্ভব হয়নি। তবে সাধ্যের সবটুকু দিয়ে বর্জ্য স্থাপনাসহ, সিটি করপোরেশনের সব সম্পদের তালিকা করা এবং সব কাজে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা আনার চেষ্টা করেছেন। সাফল্য–ব্যর্থতার মূল্যায়ন করবে জনগণ।
করোনা মহামারীর কারণে দুই বছর নষ্ট হয়েছে উল্লেখ করে বিদায়ী মেয়র বলেন, ‘গত পাঁচ বছরে দৃশ্যমান উন্নয়ন করতে পারিনি। তবে চেষ্টা ও আন্তরিকতার কোনো কমতি ছিল না। প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনায় একটি পরিকল্পিত, সবুজ, পরিচ্ছন্ন ও স্মার্ট নগর গড়ার জন্য গত পাঁচ বছর আমি কাজ করেছি।’
সাদিক আবদুল্লাহ ২০১৮ সালের অক্টোবরে মেয়র হিসেবে দায়িত্ব নেন। তিনি মেয়র হওয়ার পর বরিশালবাসীর প্রত্যাশা ছিল, নগরের চেহারা বদলে দেবেন। কিন্তু পাঁচ বছরে একটিও বড় প্রকল্প পায়নি বরিশাল সিটি করপোরেশন। তাঁর মেয়াদে প্রতিবারই বাজেটের আকার কমেছে। ২০১৯-২০ অর্থবছরে বরিশাল সিটি করপোরেশনের ৫৪৮ কোটি টাকার বাজেট ঘোষণা করেছিলেন মেয়র সাদিক আবদুল্লাহ। ২০২০-২১ অর্থবছরে ১২০ কোটি টাকা কমিয়ে ৪২৮ কোটি এবং ২০২১-২২ অর্থবছরে ৪১৫ কোটি টাকার বাজেট প্রস্তাব করেন।
এবার বাজেট ঘোষণা অনুষ্ঠানে সাদিক আবদুল্লাহ বলেন, ‘গত পাঁচ বছর দায়িত্ব পালনকালে বরিশাল সিটি করপোরেশনকে একটি স্বনির্ভর, সুশৃঙ্খল ও দুর্নীতিমুক্ত প্রতিষ্ঠান হিসেবে গড়ে তুলতে সক্ষম হয়েছি। মেয়র হিসেবে সফলতা বা ব্যর্থতার মূল্যায়নের দায়িত্ব নগরবাসীর ওপর অর্পণ করলাম। দায়িত্ব পালনের সময় যদি কেউ কষ্ট পেয়ে থাকেন, তাহলে ক্ষমাসুন্দর দৃষ্টিতে দেখার অনুরোধ করছি।’
সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজন) নগর কামটির সাধারণ সম্পাদক রফিকুল আলম বলেন, নগরবাসী উচ্চহারে কর দিচ্ছেন। কিন্তু সে অনুযায়ী নাগরিক সেবা মিলছে না। গত পাঁচ বছরে সরকারি কোনো প্রকল্প কেন পাওয়া গেল না, সেটা নাগরিকদের মধ্যে বড় প্রশ্ন।
যা আছে এবারের বাজেটে
নতুন করে কোনো করারোপ ছাড়াই চলতি অর্থবছরের জন্য বিদায়ী মেয়র ৪৪২ কোটি ৭ লাখ ৭১ হাজার ৩৮৭ টাকার বাজেট ঘোষণা করেন। একই সঙ্গে ২০২২-২৩ অর্থবছরের ১৭১ কোটি ৯৪ লাখ ৩৩ হাজার ২৮১ টাকার সংশোধিত বাজেটও ঘোষণা করেন তিনি।
ঘোষিত বাজেট পর্যালোচনা করে দেখা যায়, এতে অবকাঠামো উন্নয়ন খাতে ৩৪৯ দশমিক ৫৬ কোটি টাকার প্রস্তাব করা হয়েছে। যার মধ্যে নিজস্ব আয়ে ৬৭ কোটি, সরকারি বিশেষ বরাদ্দ থেকে ৩৬ কোটি এবং সরকারি ও বৈদেশিক সাহায্যপুষ্ট প্রকল্প থেকে ২৪৬ কোটি টাকা প্রস্তাব করা হয়েছে।
আয়ের উৎস হিসেবে রাজস্ব খাত থেকে ১২৫ কোটি টাকা, উন্নয়ন খাতে সরকারি অনুদান ৩৬ দশমিক ৫ কোটি টাকা, রাজস্ব খাতে সরকারি অনুদান ১১ দশমিক ৪৫ কোটি টাকা, সরকারি ও বৈদেশিক সাহায্যপুষ্ট প্রকল্প থেকে ২৪৬ কোটি টাকা ধরা হয়েছে।
ঘোষিত বাজেটে অবকাঠামো নির্মাণের জন্য ১১৯ কোটি, করপোরেশনের কর্মকর্তা, কর্মচারীদের বেতন-ভাতা বাবদ ৫৩ দশমিক ১৩ কোটি টাকা, পরিবেশ উন্নয়ন ও সৌন্দর্যবর্ধন কাজে ৯৭ দশমিক ৩৯ কোটি টাকা, সামাজিক সুরক্ষায় ৮ দশমিক ২৯ কোটি টাকা, খাল ও পুকুর সংরক্ষণে ২৮ কোটি টাকা, বর্জ্য ব্যবস্থাপনায় ৭৩ কোটি টাকা ব্যয়ের পরিকল্পনা করা হয়েছে।
অবকাঠামো উন্নয়ন খাতে রাস্তাঘাট, ড্রেন, কালভার্ট নির্মাণে ১১ কোটি টাকা, পুকুর সৌন্দর্যবর্ধনের কাজে ১০ কোটি, ওয়ার্ডভিত্তিক শিশুপার্ক ও সাংস্কৃতিক কেন্দ্র নির্মাণে ১০ কোটি টাকা, বঙ্গবন্ধু অডিটোরিয়ামের বাকি কাজ সম্পন্ন করার কাজে ৩০ কোটি টাকা, রুপাতলী ও বেলতলা সারফেস ওয়াটার ট্রিটমেন্ট প্ল্যান্ট পুনঃস্থাপন প্রকল্পে ৫০ কোটি টাকা, জলাবদ্ধতা ও বর্জ্য উন্নয়ন প্রকল্প ৬০ কোটি টাকা ও খালপাড় সংরক্ষণ প্রকল্পে ২৫ কোটি টাকা বরাদ্দ প্রস্তাব করা হয়েছে।
সিটি করপোরেশনের সচিব মাসুমা আক্তারের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে নগর আওয়ামী লীগের সভাপতি কে এম জাহাঙ্গীর হোসেন, জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক তালুকদার মো. ইউনুস, প্যানেল মেয়র গাজী নইমুল হোসেন, রফিকুল ইসলাম উপস্থিত ছিলেন। বাজেট ঘোষণাকালে ১১ জন কাউন্সিলর ছাড়া বাকি কাউন্সিলররা উপস্থিত ছিলেন।