আগুন লাগার পর এস আলম চিনিকলের গুদামের অপরিশোধিত চিনির গলিত পানি সরাসরি কর্ণফুলী নদীতে গিয়ে পড়ছে। নদীর বিশাল এলাকাজুড়ে পোড়া তেল ও ফেনার মতো ভাসছে চিনির বর্জ্য। এতে নদীর পানি দূষিত হচ্ছে। ছোট জলজ প্রাণীর জন্য এটা হুমকি বয়ে আনতে পারে বলে বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন।
গত সোমবার বিকেল চারটার কিছু আগে কর্ণফুলী থানা এলাকার ইছানগরে অবস্থিত এস আলম রিফাইন্ড সুগার ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেডের কারখানার গুদামে আগুনের সূত্রপাত হয়। গতকাল মঙ্গলবার রাত আটটা পর্যন্ত আগুন পুরোপুরি নেভানো সম্ভব হয়নি। তবে সোমবার রাত সাড়ে ১০টার দিকে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনা হয়।
আগুনে গুদামে থাকা অপরিশোধিত চিনি পুড়ছে। গুদামটির ধারণক্ষমতা ৬০ হাজার টন। গুদামটি পুরোটা অপরিশোধিত চিনিতে ভর্তি ছিল বলে দাবি করেছে এস আলম কর্তৃপক্ষ। এ রকম আরও চারটি গুদাম রয়েছে। তবে ফায়ার সার্ভিসের তৎপরতার কারণে আগুন সেগুলোতে ছড়াতে পারেনি।
সরেজমিনে দেখা গেছে, ১ নম্বর গুদামটির পোড়া চিনির গলিত পানি দুটি নালা হয়ে সরাসরি গিয়ে পড়ছে কর্ণফুলী নদীতে। এলাকাজুড়ে দুর্গন্ধও ছড়িয়ে পড়েছে। এলাকার মাটি ও নদী দূষিত হওয়ার আশঙ্কা পরিবেশ অধিদপ্তরের। অধিদপ্তরের পরিচালক হিল্লোল বিশ্বাস প্রথম আলোকে বলেন, অগ্নিকাণ্ডে গলিত চিনি গিয়ে নদীতে পড়ছে। এতে নদী এবং সার্বিক পরিবেশের কী অবস্থা, তা দেখতে একটা দল পাঠানো হয়েছে।
গতকাল পরিবেশ অধিদপ্তরের উপপরিচালক মো. কামরুল হাসানের নেতৃত্বে একটি দল ঘটনাস্থলে গিয়ে নালা ও নদী থেকে পানির নমুনা সংগ্রহ করে নিয়ে আসে। তাঁরা এসব নমুনা অধিদপ্তরে পরীক্ষা করে দেখবেন পানির বিভিন্ন উপাদানের কী ক্ষতি হয়েছে। কামরুল হাসান প্রথম আলোকে বলেন, চিনিমিশ্রিত পানি নদীতে গেলে নদীর দ্রবীভূত অক্সিজেন কমে যাওয়ার আশঙ্কা থাকে। আরও কিছু উপাদান কমবেশি হতে পারে। সবকিছু নিশ্চিত হওয়া যাবে পরীক্ষাগারের প্রতিবেদন আসার পর।
চট্টগ্রামের নেভি অ্যাংকরেজ স্কুল অ্যান্ড কলেজের রসায়ন বিভাগের প্রভাষক মো. শহীদুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, দ্রবীভূত অক্সিজেন কমে যাবে। সমুদ্রের পানিতে কার্বনের পরিমাণ বেড়ে যাবে। এসব কারণে নদীর পানিতে ইকোসিস্টেমে এর প্রভাব পড়বে। এর ফলে জীববৈচিত্র্য হুমকিতে পড়তে পারে।
এদিকে চিনিকলের গুদামের আগুন পুরোপুরি নেভানো যায়নি। গতকাল রাত ১১টার দিকে ফায়ার সার্ভিসের ৭টি ইউনিট আগুন নেভাতে কাজ করে যাচ্ছিল। তবে আগুন নতুন করে বাইরে ছড়ানোর আশঙ্কা নেই। কিন্তু কবে নাগাদ পুরোপুরি নেভানো সম্ভব হবে, তা বলতে পারছে না ফায়ার সার্ভিস। আগুন লাগার পর পর্যায়ক্রমে ফায়ার সার্ভিসের ১৫টি ইউনিট আগুন নেভাতে অংশ নেয়। তাদের সঙ্গে সোমবার রাতে সেনা, বিমান ও নৌবাহিনী যোগ দেয়।
ফায়ার সার্ভিসের সহকারী পরিচালক মো. আবদুল মান্নান বলেন, চিনির আগুনে রাসায়নিক বিক্রিয়া হয়। যার কারণে আগুন নেভাতে সময় লাগছে।
এস আলম রিফাইন্ড সুগার ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেডের জেনারেল ম্যানেজার (কমার্শিয়াল) আকতার হোসেন বলেন, দু-এক দিনের মধ্যে পুরোদমে উৎপাদনে ফিরবে কারখানাটি। একটি গুদামে আগুন লাগলেও আরও চারটি গুদাম আছে। তাই চিনির বাজারে এর প্রভাব পড়বে না।
আগুন না নিভলেও অগ্নিকাণ্ডের কারণ অনুসন্ধানে কাজ শুরু করে দিয়েছে তদন্ত কমিটি। অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট মামুনুর রহমানের নেতৃত্বাধীন কমিটির সদস্যরা গতকাল ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন।