সময়ের মুখ

বন্যা আশ্রয়কেন্দ্রে শিশুদের পড়ানো শুরু করি

হাকালুকি হাওর এখন বর্ষার পানিতে টইটম্বুর। পাহাড়ি ঢল ও ভারী বর্ষণে তলিয়ে আছে হাওরপারের গ্রাম, পথঘাট। অনেক বানভাসি পরিবার আশ্রয় নিয়েছে বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে। মৌলভীবাজারের বড়লেখা উপজেলার তালিমপুর ইউনিয়নের হাকালুকি উচ্চবিদ্যালয়ে আশ্রয় নিয়েছে ৩২টি পরিবার। সেই সব পরিবারের শিশুদের পড়ানো শুরু করেছেন প্রতিষ্ঠানটির (হাকালুকি উচ্চবিদ্যালয়) প্রধান শিক্ষক বিধান চন্দ্র দাস। তাঁর সাক্ষাৎকার নিয়েছেন আকমল হোসেন

প্রথম আলো:

বানভাসি মানুষ আশ্রয়কেন্দ্রে এসেছেন। তাঁদের সন্তানদের পড়ানো কীভাবে শুরু হলো?

বিধান চন্দ্র দাস: একদিন (গত ২০ জুন) আশ্রয় নেওয়া মানুষদের বললাম, তাঁদের সন্তানদের পড়াতে চাই। তাঁরা সবাই খুব খুশি হয়ে সম্মতি দেন। সেই থেকে শুরু।

প্রথম আলো:

কয়টি শিশু আপনার কাছে পড়ছে?

বিধান চন্দ্র দাস: আশ্রয়কেন্দ্রে মানুষ আসতে শুরু করার পর প্রথম দিন দেখলাম, ২০ থেকে ২২টি শিশু আছে। তাদের দিয়ে পড়ানো শুরু করি। এখন শিশু শ্রেণি থেকে সপ্তম শ্রেণি পর্যন্ত ২৫ জন শিক্ষার্থী রয়েছে।

প্রথম আলো:

স্কুল বন্ধ। আশ্রয়কেন্দ্রে আসা শিক্ষার্থীদের পড়ানোর চিন্তাটি কেন এল?

বিধান চন্দ্র দাস: আমার উদ্দেশ্য দুটি। প্রথমত, শিশুদের পড়ানো, যাতে তারা আশ্রয়কেন্দ্রে থাকার সময়ও পড়াশোনা চালিয়ে যেতে পারে। দ্বিতীয়ত, উদ্দেশ্য স্কুলটিকে পরিচ্ছন্ন রাখা। শিশুদের পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন থাকার বিষয়ে বলছি।

প্রথম আলো:

পরিচ্ছন্ন রাখার বিষয়টি বুঝলাম না।

বিধান চন্দ্র দাস: ২০২২ সালের বন্যায়ও আমাদের স্কুলে আশ্রয়কেন্দ্র ছিল। তখন পুরো স্কুল ক্যাম্পাস অপরিচ্ছন্ন হয়ে পড়ে।

প্রথম আলো:

এবার?

বিধান চন্দ্র দাস: এবার স্কুলটিকে বন্যাদুর্গতদের আশ্রয়কেন্দ্র বলে মনে হবে না। স্কুলটি খুবই পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রয়েছে।

প্রথম আলো:

কখন পড়ান?

বিধান চন্দ্র দাস: প্রতিদিন বেলা তিনটা থেকে বিকেল চারটা পর্যন্ত।

প্রথম আলো:

কী কী বিষয়ে পড়ান?

বিধান চন্দ্র দাস: শিশুরা আমাদের স্কুলসহ স্থানীয় বিভিন্ন স্কুল ও মাদ্রাসার শিক্ষার্থী। তাদের বাংলা, ইংরেজি, গণিত ও বিজ্ঞান পড়াই।

প্রথম আলো:

শুনেছি শিশুদের কিছু খাবারও দেওয়া হয়।

বিধান চন্দ্র দাস: হ্যাঁ, হালকা নাশতার ব্যবস্থা রেখেছি।

প্রথম আলো:

চারদিকে তো পানি। আপনি স্কুলে যান কীভাবে?

বিধান চন্দ্র দাস: নৌকা ছাড়া চলাচলের উপায় নেই। নৌকা ভাড়া করে আসি, আবার বাড়ি যাই।

প্রথম আলো:

পরিবারে কে কে আছেন?

বিধান চন্দ্র দাস: আমাদের যৌথ পরিবার। মা, স্ত্রী, দুই মেয়ে ও এক ছেলে এবং আমার চার ভাই ও তাঁদের স্ত্রী-সন্তানেরা রয়েছেন। আমাদের পরিবারে পাঁচজন শিক্ষক। আমার প্রয়াত বাবাও হাকালুকি উচ্চবিদ্যালয়ের শিক্ষক ছিলেন।

প্রথম আলো:

স্ত্রী-সন্তানেরা আপনার উদ্যোগ নিয়ে কিছু বলেছেন?

বিধান চন্দ্র দাস: আমার স্ত্রী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক। তিনি এই কাজে আমাকে খুব উৎসাহ দিয়ে যাচ্ছেন।

প্রথম আলো:

পত্রিকায় আপনাকে নিয়ে প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়েছে। কেউ কিছু বলেছে?

বিধান চন্দ্র দাস: আমার মেয়ে কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ে। সে ‘নিউজ’ দেখে আমাকে ফোন করেছে। স্কুলের ব্যবস্থাপনা কমিটির সভায় আমাকে ধন্যবাদ জানিয়ে প্রস্তাব নেওয়া হয়েছে। আমার প্রাক্তন শিক্ষার্থীরা ফেসবুকে লেখালেখি করছে। সব মিলিয়ে ভালো সাড়া পাওয়া গেছে।

প্রথম আলো:

হাকালুকি হাওরপারে বন্যা দীর্ঘস্থায়ী হচ্ছে। শিক্ষার্থীদের ক্ষতি কতটা?

বিধান চন্দ্র দাস: গ্রামদেশে শিশুরা বাড়িতে পড়তে চায় না। স্কুলে গেলে পড়ালেখার সুযোগ থাকে। বন্যার কারণে স্কুল বন্ধ থাকায় শিশুরা পড়ালেখায় পিছিয়ে পড়ছে।

প্রথম আলো:

পিছিয়ে পড়াদের জন্য পরে কোনো উদ্যোগ নেবেন?

বিধান চন্দ্র দাস: সিদ্ধান্ত নিয়েছি আমাদের স্কুলের ২০২৫ সালের এসএসসি পরীক্ষার্থীদের বিনা মূল্যে ইংরেজির ক্লাস নেব। ইংরেজির শিক্ষকদের সঙ্গে এ নিয়ে কথা হয়েছে। বেশির ভাগ শিক্ষার্থী ইংরেজিতেই অকৃতকার্য হয়।