পাওনা টাকা না দেওয়ায় সামিউলকে মোটরসাইকেল থেকে ফেলে দিয়ে হত্যা করা হয়: পুলিশ
পঞ্চগড়ের আটোয়ারী উপজেলার যুবক সামিউল ইসলামের কাছে ছয় থেকে সাত হাজার টাকা পেতেন মো. মুন্না। সেই টাকা তুলতে গত ৬ সেপ্টেম্বর বিকেলে বন্ধু মাসুদ রানাকে নিয়ে ঠাকুরগাঁও থেকে আটোয়ারীতে এসেছিলেন মুন্না। পরে আটোয়ারী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের সামনে থেকে চা খাওয়ার কথা বলে সামিউলকে মোটরসাইকেলে তুলে উপজেলার পল্লী বিদ্যুৎ এলাকায় (কোনপাড়া) নিয়ে যাচ্ছিলেন মুন্না ও মাসুদ রানা। এ সময় পল্লী বিদ্যুৎ এলাকা পার হয়ে রুহিয়ার দিকে যাওয়ার সময় মাথায় আঘাত করে মোটরসাইকেল থেকে ফেলে দেন মুন্না ও মাসুদ। পরে তাঁরা মোটরসাইকেল নিয়ে সেখান থেকে পালিয়ে যান। মোটরসাইকেল থেকে পড়ে গুরুতর আহত সামিউল পরদিন হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান।
আজ বৃহস্পতিবার দুপুরে পঞ্চগড়ের পুলিশ সুপার এস এম সিরাজুল হুদা তাঁর কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানান। হত্যাকাণ্ডে জড়িত থাকার অভিযোগে গ্রেপ্তার মাসুদ রানা প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে এসব তথ্য দিয়েছেন বলে জানান পুলিশ সুপার। নিহত সামিউল ইসলাম আটোয়ারী উপজেলার রাধানগর ইউনিয়নের ছোটদাপ এলাকার রবিউল হকের ছেলে।
পুলিশ সূত্র জানায়, গত মঙ্গলবার রাতে আটোয়ারী থানার পুলিশ র্যাবের সহায়তায় তথ্যপ্রযুক্তি ব্যবহার করে ঢাকার আশুলিয়ার একটি বাড়ি থেকে মাসুদ রানাকে (২৬) গ্রেপ্তার করে। তিনি ঠাকুরগাঁও পৌরসভার নিশ্চিন্তপুর এলাকার বাসিন্দা।
সংবাদ সম্মেলনে পুলিশ সুপার জানান, সামিউলকে হত্যার ঘটনায় গ্রেপ্তার মাসুদ রানাকে কারাগারে পাঠানো ও রিমান্ড আবেদনের প্রক্রিয়া চলছে। এ ছাড়া এজাহারভুক্ত আসামি মো. মুন্নাকে (৩০) গ্রেপ্তারের চেষ্টা অব্যাহত আছে।
মামলার এজাহার ও নিহত যুবকের পরিবার সূত্রে জানা যায়, আর্থিক লেনদেনসংক্রান্ত ঘটনার জেরে গত ৬ সেপ্টেম্বর বিকেলে আটোয়ারী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের সামনে থেকে দুই ব্যক্তি সামিউল ইসলামকে (২৬) একটি মোটরসাইকেলে তুলে নিয়ে ঠাকুরগাঁওয়ের রুহিয়া এলাকার দিকে নিয়ে যাচ্ছিলেন। একপর্যায়ে তাঁরা আটোয়ারী উপজেলার কোনপাড়া এলাকায় সামিউলের মাথায় আঘাত করে চলন্ত মোটরসাইকেল থেকে ফেলে দিয়ে পালিয়ে যান।
এ সময় স্থানীয় লোকজন সামিউলকে উদ্ধার করে আটোয়ারী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে যান। সেখানে অবস্থার অবনতি হলে তাঁকে রংপুর মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। পরে সেখানে আইসিইউতে নেওয়ার প্রয়োজন হলে তাঁকে একটি বেসরকারি হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়। পরদিন ৭ সেপ্টেম্বর রাত ১২টার পর সামিউল সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান।
এ ঘটনায় ৮ সেপ্টেম্বর সামিউল ইসলামের মা সেলিনা আক্তার বাদী হয়ে ঠাকুরগাঁও জেলার জগন্নাথপুর আদর্শ কলোনি এলাকার মো. মুন্না ও অজ্ঞাতনামা আরও একজনের বিরুদ্ধে আটোয়ারী থানায় একটি হত্যা মামলা করেন। ঘটনার পর সামিউল হত্যায় জড়িত ব্যক্তিদের গ্রেপ্তার করে বিচারের আওতায় আনার দাবিতে আটোয়ারী উপজেলা শহরে একাধিকবার মানববন্ধন ও বিক্ষোভ করেছিল এলাকাবাসী।