উখিয়ায় দুই পক্ষের গোলাগুলিতে ৫ রোহিঙ্গা নিহত, আশ্রয়শিবিরে আতঙ্ক

উখিয়া উপজেলার একটি রোহিঙ্গা আশ্রয়শিবির
ফাইল ছবি

কক্সবাজারের উখিয়ার বালুখালী আশ্রয়শিবিরে (ক্যাম্প-৮ পশ্চিম) মিয়ানমারভিত্তিক দুটি সশস্ত্র গোষ্ঠীর সদস্যদের মধ্যে গোলাগুলি ও সংঘর্ষের ঘটনায় পাঁচ রোহিঙ্গা নিহত হয়েছে। আজ শুক্রবার ভোর সাড়ে পাঁচটার দিকে বালুখালী আশ্রয়শিবিরের (ক্যাম্প-৮ পশ্চিম) এইচ ব্লকে এ ঘটনা ঘটে।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন রোহিঙ্গা নেতা বলেন, আজ ভোর পাঁচটার দিকে মিয়ানমারের সশস্ত্র গোষ্ঠী আরাকান স্যালভেশন আর্মির (আরসা) ২০ থেকে ২২ জন সন্ত্রাসী বালুখালী আশ্রয়শিবিরের (ক্যাম্প-৮ পশ্চিম) এইচ ব্লকে আসে। তারা বসতিতে ঢুকে কয়েকজন রোহিঙ্গা মাঝিকে (নেতা) খুঁজতে থাকে। এ সময় রোহিঙ্গাদের মধ্যে হইচই শুরু হয়। খবর পেয়ে মিয়ানমারের আরেকটি সশস্ত্র গোষ্ঠী আরাকান সলিডারিটি অর্গানাইজেশনের (আরএসও) ১৫ থেকে ২০ জন সন্ত্রাসী ঘটনাস্থলে উপস্থিত হয়। তারা আরসা সদস্যদের ঘিরে ফেললে পাল্টাপাল্টি গোলাগুলি ও সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে।

ওই রোহিঙ্গা নেতা বলেন, গোলাগুলিতে একসঙ্গে পাঁচজনের মৃত্যুর খবরে আশ্রয়শিবিরজুড়ে আতঙ্ক বিরাজ করছে। সন্ত্রাসীদের ধরতে আশ্রয়শিবিরে অভিযান চালাচ্ছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী।

আরও পড়ুন

নিহত ব্যক্তিরা হলেন বালুখালী আশ্রয়শিবিরের (ক্যাম্প-৮ ডব্লিউ) এইচ-৪৯ ব্লকের বাসিন্দা আনোয়ার ছাদেক (২২), একই আশ্রয়শিবিরের এ-২১ ব্লকের বাসিন্দা মোহাম্মদ হামিম (২১), বালুখালী আশ্রয়শিবিরের (ক্যাম্প-১০) এইচ-৪২ ব্লকের বাসিন্দা মো. নজিবুল্লাহ (৩২), মধুরছড়া আশ্রয়শিবিরের (ক্যাম্প-৩) বি-১৭ ব্লকের বাসিন্দা নুরুল আমিন (২২) ও অজ্ঞাতনামা ২৫ বছর বয়সী আরেক রোহিঙ্গা।

ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে উখিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শেখ মোহাম্মদ আলী প্রথম আলোকে বলেন, মিয়ানমারের দুটি সশস্ত্র গোষ্ঠীর মধ্যে গোলাগুলি ও সংঘর্ষের ঘটনায় পাঁচ রোহিঙ্গার মৃত্যু হয়েছে। এর মধ্যে তিনজন ঘটনাস্থলে এবং অপর দুজনকে গুলিবিদ্ধ অবস্থায় আশ্রয়শিবিরের অভ্যন্তরের একটি হাসপাতালে নেওয়ার পর চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন।

আরও পড়ুন

ওসি আরও বলেন, নিহত পাঁচজনের মধ্যে আজ দুপুর পর্যন্ত চারজনের পরিচয় পাওয়া গেছে। অপরজনের পরিচয় শনাক্ত করা যায়নি। লাশগুলো ময়নাতদন্তের জন্য কক্সবাজার সদর হাসপাতালের মর্গে পাঠানো হয়েছে। নিহত ব্যক্তিরা সাধারণ রোহিঙ্গা, নাকি কোনো সশস্ত্র গোষ্ঠীর সদস্য, তা নিশ্চিত হওয়া যায়নি।

আশ্রয়শিবিরে নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকা ৮ আর্মড পুলিশ ব্যাটালিয়নের (এপিবিএন) এক কর্মকর্তা বলেন, ভোর সাড়ে পাঁচটার দিকে গোলাগুলির খবর পেয়ে এপিবিএনের সদস্যরা ঘটনাস্থলে পৌঁছান। তখন সন্ত্রাসীরা পালিয়ে যায়। এ সময় ঘটনাস্থল থেকে গুলিতে নিহত তিনজনের মরদেহ উদ্ধার করা হয়। অপর দুজনকে গুলিবিদ্ধ অবস্থায় পাওয়া যায়। দুজনকে হাসপাতালে নেওয়া হলে চিকিৎসক তাঁদের মৃত ঘোষণা করেন। আশ্রয়শিবিরের নিয়ন্ত্রণ, আধিপত্য বিস্তার এবং পূর্বশত্রুতার জের ধরে রোহিঙ্গা সশস্ত্র গোষ্ঠীর মধ্যে গোলাগুলি ও সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে বলে জানা গেছে।

আরও পড়ুন

পুলিশ জানায়, গতকাল বৃহস্পতিবার সকাল ১০টার দিকে উখিয়ার লম্বাশিয়া আশ্রয়শিবিরে (ক্যাম্প-১ পশ্চিম) আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতে (আইসিসি) সাক্ষ্য দিতে ইচ্ছুক রোহিঙ্গার তথ্য সংগ্রহ করতে গিয়ে সন্ত্রাসীদের ছুরিকাঘাতে মো. এবাদুল্লাহ (২৭) নামের একজন মাঝি (রোহিঙ্গা নেতা) নিহত হওয়ার ঘটনা ঘটে।

পুলিশ ও রোহিঙ্গা নেতাদের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, গত ছয় মাসে রোহিঙ্গা আশ্রয়শিবিরে একাধিক সংঘর্ষ ও গোলাগুলির ঘটনায় অন্তত ৫৬ জনের মৃত্যু হয়েছে। এর মধ্যে ১৭ জন রোহিঙ্গা মাঝি, ১১ জন আরসা সদস্য, ১ জন স্বেচ্ছাসেবক ও অন্যরা সাধারণ রোহিঙ্গা।

আরও পড়ুন