মেহেরপুর-১ (সদর-মুজিবনগর) আসনের সংসদ নির্বাচনে পরাজিত স্বতন্ত্র প্রার্থী অধ্যাপক আবদুল মান্নান বলেছেন, তাঁর নেতা-কর্মীরা নৌকার জয়ী প্রার্থী জনপ্রশাসন প্রতিমন্ত্রী ফরহাদ হোসেনের হামলা-মামলার ভয়ে বাড়িতে থাকতে পারছেন না। আজ মঙ্গলবার দুপুরে মেহেরপুর পৌর শহরে নিজ বাসভবনে সংবাদ সম্মেলনে এমন অভিযোগ করেন আবদুল মান্নান।
আসনটিতে এবারও নির্বাচিত হয়েছেন ফরহাদ হোসেন। গত রোববারের ভোটে নৌকা প্রতীকে তিনি ৯৪ হাজার ৩০৩ ভোট পান। স্বতন্ত্র প্রার্থী মেহেরপুর জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সভাপতি ও সাবেক সংসদ সদস্য আবদুল মান্নান ট্রাক প্রতীকে পান ৫৭ হাজার ৬৮২ ভোট। এই দুই প্রার্থীর মধ্যে এবার বেশ উত্তেজনা ছড়ায়। নির্বাচনী আচরণবিধি লঙ্ঘনের অভিযোগে উভয় প্রার্থীকে কারণ দর্শানো নোটিশ দেয় নির্বাচনী অনুসন্ধান কমিটি।
সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে আবদুল মান্নান জানান, তাঁর নেতা-কর্মীরা ভয়ে থানায় গিয়ে মামলাও করতে পারছেন না। রিটার্নিং কর্মকর্তা ও পুলিশ বিভাগকে জানিয়েও প্রতিপক্ষের হামলা থামানো সম্ভব হচ্ছে না। এভাবে চলতে থাকলে জেলায় আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীদের মধ্যে রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষ শুরু হবে। তিনি বলেন, নির্বাচন সম্পন্ন হয়ে গেলে বিজয়ী প্রার্থী সবাইকে ঐক্যবদ্ধ করার চেষ্টা করে থাকেন, যাতে নির্বাচন-পরবর্তী পরিস্থিতি শান্ত থাকে। কিন্তু মেহেরপুর সদর ও মুজিবনগরে পরাজিত স্বতন্ত্র প্রার্থীর পক্ষে কাজ করা আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীদের বাড়িতে বাড়িতে হামলা করা হচ্ছে। এসব দ্রুত বন্ধ করার আহ্বান জানান আবদুল মান্নান।
সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, গত সোমবার রাত ৯টায় মুজিবনগর উপজেলা চেয়ারম্যান ও জেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি জিয়াউদ্দিন বিশ্বাসের বাড়িতে প্রতিমন্ত্রী ফরহাদ হোসেনের কর্মী-সমর্থকেরা হামলা চালানো হয়। ওই বাড়িতে ইটপাটকেল নিক্ষেপ করা হয়, লোকজনকে মারধর করা হয়। একপর্যায়ে দুই পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষ বাধে। এতে উভয় পক্ষের নেতা-কর্মীরা আহত হন। এই ঘটনার পর মুজিবনগর থানার পুলিশের কাছে মামলা করতে বাড়ি থেকে বের হতে পারছেন না জিয়াউদ্দিন বিশ্বাস।
নির্বাচন কেমন হয়েছে, এমন প্রশ্নের উত্তরে বলেন আবদুল মান্নান বলেন, নির্বাচন শেষ হওয়ার মাত্র ২০ মিনিটের মধ্যে একটি কেন্দ্রের ফলাফল ঘোষণা করা হয়েছে। এতে বোঝা যায়, ভোট গণনা যথারীতি না করে ফল ঘোষণা করা হয়েছে। স্বতন্ত্র প্রার্থী কেউ জিতে এলে তাঁকে বরণ করে নেওয়া হবে, নেত্রীর এমন নির্দেশে অনেকে স্বতন্ত্র প্রার্থী হন। সরকার দেশে একটি আন্তর্জাতিক মানের নির্বাচন করার জন্য সব ধরনের প্রস্তুতি নিয়েছিল। কিন্তু ফরহাদ হোসেন তাঁর জেতার মতো করে নির্বাচন সাজিয়ে রেখেছিলেন।
সংবাদ সম্মেলনে অন্যান্যের মধ্যে জেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি মিয়াজান আলী, আবদুল মান্নান (ছোট্ট), মেহেরপুর সরকারি কলেজের সাবেক অধ্যক্ষ আবদুল মালেক, পৌর মেয়র ও জেলা যুব লীগের আহ্বায়ক মাহফুজুর রহমানসহ স্থানীয় আওয়ামী লীগের অনেক নেতা-কর্মী উপস্থিত ছিলেন।
মিয়াজান আলী বলেন, গ্রামে গ্রামে আওয়ামী লীগের যেসব নেতা-কর্মী স্বতন্ত্র প্রার্থীর নির্বাচন করেছিলেন, তাঁদের বাড়িতে হামলা করছেন ফরহাদ হোসেনের নেতা-কর্মীরা। তাঁরা বাড়িতে থাকতে পারছেন না। মুজিবনগর উপজেলায় নারী কর্মীকে মারধর করে হাত ভেঙে দেওয়া হয়েছে। পুলিশ বিভাগ দ্রুত ব্যবস্থা না নিলে আওয়ামী লীগের মধ্যে সহিংসতা ছড়িয়ে পড়বে।
আবদুল মান্নান সংবাদ সম্মেলন করে মিথ্যা অভিযোগ করেছেন বলে দাবি করেন জনপ্রশাসন প্রতিমন্ত্রীর পক্ষের নেতা জেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ইব্রাহিম শাহীন। প্রথম আলোকে তিনি বলেন, মুজিবনগর উপজেলা চেয়ারম্যান জিয়াউদ্দিন বিশ্বাস গত সোমবার রাতে ফরহাদ হোসেনের কর্মীদের আনন্দমিছিলে হামলা করে ১২ জন কর্মী-সমর্থককে মারধর করেন। তাঁরা এখনো হাসপাতালে চিকিৎসাধীন।