বাংলাদেশের কক্সবাজারের টেকনাফ সীমান্তের ওপারে মিয়ানমার থেকে গত দুই দিনে গোলাগুলি ও বিস্ফোরণের কোনো শব্দ আসেনি। গত সোমবার দিনভর থেমে থেমে বিকট বিস্ফোরণের আওয়াজ ভেসে এলেও সেদিন সন্ধ্যার পর থেকে আজ বুধবার সকাল ১০টা পর্যন্ত এমন শব্দ আর শোনা যায়নি।
স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরা খবর পেয়েছেন, গত ১৮ দিনের লড়াইয়ে দেশটির সরকারি বাহিনীকে হটিয়ে বিদ্রোহী আরাকান আর্মি অধিকাংশ সীমান্তচৌকি নিয়ন্ত্রণে নিয়েছে। এ কারণে বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়ি এবং কক্সবাজারের উখিয়া ও টেকনাফ সীমান্তে লড়াইয়ের তীব্রতা কমে এসেছে।
শাহপরীর দ্বীপের জালিয়াপাড়ার বাসিন্দা খলিলুর রহমান ও বশির আহমদ বলেন, সোমবার সন্ধ্যা থেকে আজ সকাল ১০টা পর্যন্ত গোলাগুলি কিংবা ভারী অস্ত্রের বিস্ফোরণের আওয়াজ শোনা যায়নি। এতে শান্তিতে ঘুমাতে পেরেছেন সীমান্ত এলাকার লোকজন। তবে আবার গোলাগুলি ও ভারী অস্ত্রের কম্পনের আতঙ্ক রয়ে গেছে তাঁদের মধ্যে।
স্থানীয় লোকজন বলেন, টেকনাফ সীমান্তের উত্তরাংশে হোয়াইক্য এবং পূর্ব ও দক্ষিণাংশে সাবরাংয়ের বিপরীতে নাফ নদীর ওপারে রাখাইন রাজ্য। কয়েক দিন ধরে সেখান থেকে গুলির শব্দ আসছে। স্থানীয় লোকজনের ধারণা, রাখাইন রাজ্যের মংডু শহরের পাশের বলিবাজার, মেগিচং, কাদিরবিল, নুরুল্লাহপাড়া, মাংগালা, নলবন্ন্যা, ফাদংচা ও হাসুরাতা এলাকায় সে দেশের আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সঙ্গে সশস্ত্র বিদ্রোহী গোষ্ঠীর লড়াই চলছে। বিদ্রোহীরা মংডুর দিকে অগ্রসর হচ্ছেন।
সাবরাং ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) ৯ নম্বর ওয়ার্ডের সদস্য আবদুস সালাম প্রথম আলোকে বলেন, মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যের মংডু শহরের আশপাশের এলাকায় কয়েক দিন ধরে ব্যাপক গোলাগুলি ও ভারী অস্ত্রের বিস্ফোরণের আওয়াজ এপারে এসেছে। মাঝেমধ্যে বিকট শব্দে কেঁপে উঠছিল টেকনাফ সীমান্ত। তিনি বলেন, মিয়ানমারের সংঘাতময় পরিস্থিতির প্রভাবে এপারের বাসিন্দারা জীবন-জীবিকা নিয়ে সংকটে পড়েছেন। ইয়াবা ও রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশ প্রতিরোধে প্রায় সাত বছর ধরে নাফ নদীতে জেলেদের মাছ ধরা বন্ধ থাকার পাশাপাশি স্থানীয় লোকজনের বহনকারী নৌযান চলাচলও সীমিত করা হয়েছে।
হ্নীলা ইউপি চেয়ারম্যান রাশেদ মাহমুদ আলী বলেন, সোমবার সকালে হ্নীলা ইউনিয়নের সীমান্তে টানা ১০ থেকে ১৫ মিনিট গোলাগুলির শব্দ শোনা গিয়েছিল। তবে সকালের পর থেকে রাতভর গোলাগুলির কোনো শব্দ আসেনি। গতকাল মঙ্গলবার সকাল থেকে আজ সকাল ১০টা পর্যন্ত সীমান্তের পরিস্থিতি স্বাভাবিক।
টেকনাফ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. আদনান চৌধুরী বলেন, সোমবার সন্ধ্যার পর থেকে আজ সকাল ১০টা পর্যন্ত কোনো বিস্ফোরণ ও গোলাগুলির শব্দ পাওয়া যায়নি বলে স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরা জানিয়েছেন। সীমান্তে বিজিবি, কোস্টগার্ড ও পুলিশের টহল বাড়ানো হয়েছে। সেখানে বসবাসরত মানুষদেরও সতর্ক থাকতে বলা হয়েছে।