বঙ্গমাতা সেতুতে যান চলাচল শুরু, প্রথম টোল দিলেন প্রাণিসম্পদমন্ত্রী
পিরোজপুরের কচা নদীর ওপর নির্মিত বঙ্গমাতা বেগম ফজিলাতুন্নেছা মুজিব অষ্টম বাংলাদেশ-চীন মৈত্রী সেতু উদ্বোধনের পর রাত থেকে যান চলাচল শুরু হয়েছে। গতকাল রোববার দিবাগত রাত ১২টা ১ মিনিটে মৎস্য ও প্রাণিসম্পদমন্ত্রী শ ম রেজাউল করিম টোল দিয়ে সেতুর পশ্চিম প্রান্ত থেকে পূর্ব প্রান্তে যান।
মন্ত্রীর পরে জেলা প্রশাসনের কর্মকর্তারা টোল দিয়ে সেতু পার হন। তবে এসব ছিল আনুষ্ঠানিকতা। উদ্বোধনের পর সাধারণ মানুষের মধ্যে প্রথম টোল দেন ট্রাকচালক শহিদুল আলম (৫০)।
এর আগে গতকাল বেলা ১১টায় গণভবন থেকে ভার্চ্যুয়ালি যুক্ত হয়ে সেতুর উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। প্রধানমন্ত্রীর উদ্বোধন ঘোষণার পরপরই হেঁটে চলাচলের জন্য সেতু খুলে দেওয়া হয়। সেতুতে যান চলাচল শুরুর আগে টোল প্লাজায় যানবাহনের নির্ধারিত টোলের তালিকা টাঙিয়ে দেওয়া হয়। মৎস্য ও প্রাণিসম্পদমন্ত্রী শ ম রেজাউল করিম তাঁর গাড়ির জন্য নির্ধারিত ৩০ টাকা টোল দিয়ে পিরোজপুর প্রান্ত থেকে সেতু পার হয়ে পূর্ব দিকের বেকুটিয়া প্রান্তে যান।
সড়ক ও জনপথ বিভাগ (সওজ) নির্ধারিত টোলের তালিকায় দেখা গেছে, সর্বোচ্চ টোল ধরা হয়েছে ট্রেইলারের ৩১৫ টাকা, এরপর ভারী ট্রাক ২৫০, মাঝারি ট্রাক ১২৫, বড় বাস ১১৫, মিনিট্রাক ৯৫, কৃষিকাজে ব্যবহৃত যান ৭৫, মিনিবাস ও কোস্টার ৬৫, মাইক্রোবাস ৫০, চার চাকার যান ৫০, সিডান কার ৩০, তিন-চার চাকার মোটরচালিত যান ১৫, মোটরসাইকেল, অটোরিকশা, বাইসাইকেল ও ঠেলাগাড়ির জন্য ৫ টাকা টোল নির্ধারণ করা হয়েছে।
সরেজমিন গতকাল রাতে দেখা গেছে, রাত পৌনে ১২টার দিকে মৎস্য ও প্রাণিসম্পদমন্ত্রী শ ম রেজাউল করিম, জেলা প্রশাসক, পুলিশ সুপারসহ প্রশাসনের কর্মকর্তা ও সরকারি দলের নেতা-কর্মীরা সেতুর পিরোজপুর প্রান্তে টোল প্লাজায় পৌঁছান। রাত ১২টা ১ মিনিটে মন্ত্রী গাড়ি থেকে নেমে সেতুর টোল প্লাজায় টোল দেন। এরপর গাড়ি নিয়ে সেতু পার হন। আনুষ্ঠানিকতা শেষে সাতক্ষীরা থেকে পটুয়াখালীগামী পাথরবোঝাই ট্রাকের চালক শহিদুল আলম ২৫০ টাকা টোল দিয়ে প্রথম সেতু পার হন।
শহিদুল আলম প্রথম আলোকে বলেন, সাতক্ষীরার ভোমরা স্থলবন্দর থেকে পাথর নিয়ে পটুয়াখালী যাচ্ছেন তিনি। এর আগে ফেরি দিয়ে কচা নদী পার হয়েছেন। ফেরিতে অনেক বিড়ম্বনা ছিল। তিন–চার ঘণ্টা অপেক্ষার পর ফেরিতে উঠতে হতো। সেতু হওয়ায় এখন ভোগান্তি কমবে।
শ ম রেজাউল করিম বলেন, পিরোজপুরবাসীর জন্য এটা এক অসাধারণ আনন্দঘন মুহূর্ত। নদীটি পিরোজপুরবাসীকে বিচ্ছিন্ন করে রেখেছিল। সেতু চালুর মধ্য দিয়ে সেই অবস্থার উত্তরণ হয়েছে। সেতুর নির্মাণের ফলে পিরোজপুরের অবকাঠামো, কৃষিপণ্য, যোগাযোগব্যবস্থার উন্নয়ন হবে।
সওজের পিরোজপুর কার্যালয়ের উপবিভাগীয় প্রকৌশলী অহিদুজ্জামান জানান, রাত ১২টা ১ মিনিট থেকে সকাল ৮টা পর্যন্ত ১১ হাজার টাকার টোল আদায় হয়েছে।
২০১৮ সালের ১ নভেম্বর প্রধানমন্ত্রী সেতুর নির্মাণকাজের উদ্বোধন করেন। একই বছরের ১৮ জুলাই সেতুর কাজ শুরু করে চায়না রেলওয়ে ১৭ ব্যুরো গ্রুপ লিমিটেড নামের একটি প্রতিষ্ঠান। ১ হাজার ৪৯৩ মিটার দৈর্ঘ্যের ও ১৩ দশমিক ৪০ মিটার প্রস্থের সেতুটির ১০টি পিয়ার ও ৯টি স্প্যান আছে। ৮৯৮ কোটি টাকা ব্যয়ে সেতুটি নির্মাণ করা হয়েছে।