ময়মনসিংহে তরুণ কবিকে গ্রেপ্তারের প্রতিবাদে আওয়ামী লীগ সভাপতির সংবাদ সম্মেলন
ময়মনসিংহের তরুণ কবি ও গ্রাফিক ডিজাইনার শামীম আশরাফকে (৩৫) গ্রেপ্তারের ঘটনায় জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি এহতেশামুল আলম সংবাদ সম্মেলন করেছেন। তিনি আগামী ৯ মার্চ অনুষ্ঠেয় ময়মনসিংহ সিটি করপোরেশনের নির্বাচনে মেয়র পদের একজন প্রার্থী।
আজ সোমবার বিকেলে ময়মনসিংহ প্রেসক্লাবে এ সংবাদ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। এতে সিটি করপোরেশন নির্বাচনের আরেক মেয়র পদপ্রার্থী মহানগর আওয়ামী লীগের সদস্য ফারামার্জ আল নূরও উপস্থিত ছিলেন।
গতকাল রোববার রাতে কবি শামীম আশরাফকে শহরের আঠারোবাড়ি বিল্ডিং এলাকায় অবস্থিত তাঁর ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান থেকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। আজ বিকেলে তাঁকে আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠানো হয়েছে। শামীম আশরাফকে গ্রেপ্তারের পর থেকে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ময়মনসিংহের অনেক কবি-লেখক নিন্দা জানিয়েছেন।
শামীম আশরাফের বিরুদ্ধে অভিযোগ, তিনি ময়মনসিংহ সিটি করপোরেশনের সদ্য সাবেক মেয়র ও মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি ইকরামুল হকের বিরুদ্ধে অপপ্রচারের জন্য ষড়যন্ত্রমূলক পোস্টার ডিজাইন করেন। ইকরামুল হক মেয়র পদে আবারও প্রার্থী হয়েছেন।
সংবাদ সম্মেলনে এহতেশামুল আলম একজন তরুণ কবিকে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে হেনস্তার নিন্দা জানান। পাশাপাশি তাঁকে হেনস্তা করা ব্যক্তিরা ওই কবির করা পোস্টারের সঙ্গে এহতেশামুলের নাম জড়ানোর প্রতিবাদ জানান।
এহতেশামুল আলম বলেন, ‘রোববার রাতে শামীম আশরাফের প্রতিষ্ঠানের এ ঘটনা চার থেকে পাঁচটি ফেসবুক আইডিতে লাইভ হয়। সেখানে দেখা যায়, শামীম আশরাফ জেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি আমিনুল হকের কানে কানে কিছুই বলেননি। তারপরও আমিনুল হক পোস্টার ডিজাইনের সঙ্গে আমাকে জড়াতে চাইছেন। শামীম আশরাফ আমার পোস্টার করেন না বলার পরও আমিনুল হক আমার নাম বলেন। আসন্ন সিটি নির্বাচনে আমি মেয়র পদের প্রার্থী। আমাকে হেয় করার উদ্দেশ্যে জনসমক্ষে আমার নাম নেওয়া হয়। আমি এর প্রতিবাদ জানাই।’
এহতেশামুল আলম আরও বলেন, ‘শামীম আশরাফ একজন কবি। তাঁর সঙ্গে আমার ব্যক্তিগত কোনো সম্পর্ক নেই। তবে একাধিকবার বিভিন্ন অনুষ্ঠানে তাঁর সঙ্গে আমার পরিচয় হয়েছে। একজন তরুণ কবিকে এভাবে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে হেয় করা উচিত হয়নি।’
আজ বিকেলে কবি শামীম আশরাফকে ৫৪ ধারায় (অপরাধের সন্দেহে) আদালতে পাঠানো হলে আদালত শামীমকে কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেন।
সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত মেয়র পদপ্রার্থী ফারামার্জ আল নূর বলেন, ‘শামীম আশরাফ যদি কোনো পোস্টারের ডিজাইন করে থাকেন, তাতেও কেন দোষ হবে। একজন ব্যক্তি চাইলে ব্যক্তিগতভাবেও পোস্টার তৈরি করে অধিকারের কথা বলতে পারেন।’
শামীম আশরাফ একজন তরুণ কবি এবং পেশায় তিনি একজন গ্রাফিক ডিজাইনার। ময়মনসিংহ নগরের আঠারোবাড়ি বিল্ডিং এলাকায় ‘গ্রাফিটি’ নামে তাঁর একটি ছাপাখানা রয়েছে। গতকাল রাতে শামীমকে গ্রেপ্তারের আগে ময়মনসিংহ জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি আল আমিনসহ কয়েকজন ছাত্রলীগ নেতা গ্রাফিটিতে যান। সেখানে গিয়ে শামীমের উদ্দেশে আল আমিন মেয়রের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রমূলক পোস্টার কেন করেন, তার কারণ জানতে চান। বিষয়টি আল আমিনের ফেসবুক থেকে লাইভ করা হয়। কিছুক্ষণ পরে সেখানে প্রবেশ করেন ময়মনসিংহ জেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি ও সদস্য সাবেক মেয়র মো. ইকরামুল হকের বড় ভাই আমিনুল হক। আমিনুল হক শামীম আশরাফকে প্রশ্ন করেন, কার হয়ে তিনি এসব পোস্টারের ডিজাইন করে দেন।
এর কিছুক্ষণ পর ময়মনসিংহ কোতোয়ালি মডেল থানার পুলিশ কবি শামীম আশরাফকে তুলে নিয়ে যায় থানায়। আজ বিকেলে তাঁকে ৫৪ ধারায় (অপরাধের সন্দেহে) আদালতে পাঠানো হলে আদালত শামীমকে কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেন।
গতকাল রাত আনুমানিক সাড়ে ১০টার দিকে কবি শামীম আশরাফকে আটক করার পর সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছাত্রলীগ নেতার লাইভের দৃশ্য ছড়িয়ে পড়ে। আজ বিকেলে এ বিষয়ে বক্তব্য জানতে জেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি মো. আমিনুল হকের সঙ্গে মুঠোফোনে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলে তিনি ফোন ধরেননি।
তবে এ বিষয়ে ছাত্রলীগের সভাপতি আল আমিন বলেন, ‘কারও বিরুদ্ধে কোনো সমালোচনা থাকলে সেটি যৌক্তিকভাবে এবং প্রকাশ্যে করা যায়। কিন্তু শামীম আশরাফ সিটি করপোরেশন ও মেয়রের বিরুদ্ধে পরিকল্পিতভাবে অপপ্রচারের জন্য বেনামি পোস্টার দিয়ে মিথ্যা তথ্য ছড়াচ্ছেন। এমন অভিযোগের পর আমরা তাঁর প্রতিষ্ঠানে গিয়ে হাতেনাতে প্রমাণ পাই। সিটি করপোরেশন নির্বাচনের আগে এ ধরনের উদ্দেশ্যমূলক অপপ্রচার করা উচিত নয়।’
৯ মার্চ ময়মনসিংহ সিটি করপোরেশনের নির্বাচনে মেয়র পদে মোট ছয়জন প্রার্থী হয়েছেন। এহতেশামুল আলম, ইকরামুল হক, ফারামার্জ আল নূর ছাড়া অন্য প্রার্থীরা হলেন ময়মনসিংহ জেলা আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা সাদেকুল হক খান, মহানগর আওয়ামী লীগের সহসভাপতি গোলাম ফেরদৌস এবং জাতীয় পার্টির নেতা শহিদুল ইসলাম ও কৃষিবিদ রেজাউল হক।