দশম শ্রেণিতে পড়া কিশোর মারুফ অন্যদের সঙ্গে ভোটের সারিতে দাঁড়ানো। ভোটার কি না, তা জিজ্ঞাসা করতেই কিশোরের জবাব, ‘ভোটকেন্দ্র ফাঁকা থাকায় একজন বাইরে গিয়ে বলে সাংবাদিক এসেছে, তাড়াতাড়ি সবাই লাইনে দাঁড়া। তাই অন্যদের সঙ্গে আমিও লাইনে দাঁড়িয়েছি।’ মারুফের সঙ্গে কথা বলার সময় এক ব্যক্তি এসে তাকে ধমকিয়ে সরিয়ে দেন।
আজ রোববার সকাল ১০টার দিকে পাকুন্দিয়ার ১১ নম্বর লক্ষ্মীয়া উচ্চবিদ্যালয় ভোটকেন্দ্রে গিয়ে এমন পরিস্থিতি দেখা গেল। ২ ঘণ্টায় কেন্দ্রটির ৩ হাজার ২২৬ ভোটের মধ্যে মাত্র ১২৮টি ভোট পড়েছে।
দুপুর ১২টার দিকে একই কেন্দ্রে গিয়ে ভোটের সারি ফাঁকা দেখা যায়। মাঠে পাকুন্দিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও), থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাসহ (ওসি) আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা দাঁড়িয়ে গল্প করছেন। প্রিসাইডিং কর্মকর্তা মো. সাইফুল্লাহ প্রথম আলোকে বলেন, সকাল আটটায় ভোট গ্রহণ শুরু হওয়ার পর দুপুর ১২টা পর্যন্ত ৪১১টি ভোট পড়েছে। বেলা সাড়ে ১১টার দিকে বহিরাগত কিছু লোক মিছিল নিয়ে কেন্দ্রের দিকে এলে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা প্রতিহত করেন।
দুপুর সোয়া ১২টার দিকে পাকুন্দিয়ার চালিয়াগোপ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ভোটকেন্দ্রে গিয়ে দেখা যায়, ভোটারের সারি নেই। তবে সেখানে দুই পাশে দুই পক্ষের লোকজনকে মারমুখী ভঙ্গিতে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখা যায়। কিছুক্ষণ পর নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটের নেতৃত্বে একদল বিজিবি সদস্য তাঁদের ধাওয়া করে ছত্রভঙ্গ করে দেন। সেখানকার প্রিসাইডিং কর্মকর্তা হারুন অর রশিদ জানান, দুপুর সাড়ে ১২টা পর্যন্ত ভোটকেন্দ্রের ৬টি বুথে ৫৩০টি ভোট পড়েছে। এখানকার মোট ভোটার ২ হাজার ৮৫৬ জন।
উপজেলার শ্রীরামদী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রের মোট ভোটার ২ হাজার ৪৪৮ জন। বেলা একটা পর্যন্ত ভোট পড়েছে ৮০০টি। খামা বালিকা দাখিল মাদ্রাসা কেন্দ্রে ২ হাজার ২২৪ নারী ভোটারের মধ্যে দুপুর সাড়ে ১২টা পর্যন্ত ২৮০টি ভোট পড়ে। একই কেন্দ্রে ২ হাজার ১৫৩ পুরুষ ভোটারের মধ্যে ৩৭৪ জন ভোট দিয়েছেন। কেন্দ্রের বাইরে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যদের ছাড়া কাউকে দেখা যায়নি। ১০ থেকে ১৫ মিনিট পরপর একজন করে ভোটার এসে ভোট দিয়ে চলে যাচ্ছেন।
তবে সকালে ভোট গ্রহণের শুরু থেকে পাকুন্দিয়ার পাটুয়াভাঙা ইউনিয়নের চকদিগা ইসলামিয়া দাখিল মাদ্রাসা ভোটকেন্দ্রে ভোটারদের সারি দেখা গেছে। এখানে সরুফা আক্তার নামের ৮২ বছর বয়সী এক নারীকে ভোট দিয়ে বাড়ি ফিরতে দেখা যায়।
আবদুস সোবহান নামের এক ভোটার প্রথম আলোকে বলেন, ‘কেন্দ্রে গিয়ে দেখি ফাঁকা। তাই সোজা বুথে গিয়ে একাকী ভোট দিয়ে চলে এসেছি। কেন্দ্রের বাইরে মানুষের জটলা থাকলেও ভেতরে সব ফাঁকা।’ আল আমিন নামের আরেক ভোটার বলেন, ‘আমি ভোট দিতে না, শুধু পরিস্থিতি দেখতে আসছি। আর ভোট দিলেই কী হবে? শেষে যদি সেই ভোটের হিসাব না থাকে।’
সকাল আটটা থেকে বেলা পৌনে দুইটা পর্যন্ত সদর, পাকুন্দিয়া, কটিয়াদী ও করিমগঞ্জ উপজেলার কয়েকটি ভোটকেন্দ্রে গিয়ে দেখা গেছে, সব কটিতেই ভোটার উপস্থিতি কম। বিভিন্ন প্রার্থীর লোকজন রিকশা ও অটোরিকশায় করে ভোটারদের কেন্দ্রে আনার চেষ্টা করেন। কিশোরগঞ্জের কোথাও কোনো সহিংসতার খবর পাওয়া যায়নি।
বেলা পৌনে দুইটার দিকে রিটার্নিং কর্মকর্তা ও জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ আবুল কালাম আজাদ বলেন, জেলায় কোথাও কোনো অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটেনি। সব জায়গায় সুষ্ঠুভাবে ভোট হচ্ছে।