শিক্ষার্থীদের উপবৃত্তি থেকে কেটে নেওয়া হচ্ছে বেতন
শরীয়তপুর সদর উপজেলার একটি বিদ্যালয়ে প্রধানমন্ত্রীর শিক্ষাসহায়তা ট্রাস্টের উপবৃত্তি পাওয়া শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে বেতন আদায় করার অভিযোগ উঠেছে। অথচ উপবৃত্তি পাওয়া দরিদ্র শিক্ষার্থীদের বেতন মওকুফ করার পরিপত্র জারি করা হয়েছে।
চিতলিয়া সমিতির হাট উচ্চবিদ্যালয়ের শিক্ষকেরা বলেন, ১৯৯৪ সালে বিদ্যালয়টি প্রতিষ্ঠিত হয়। বর্তমানে বিদ্যালয়ে ৩৮৮ জন শিক্ষার্থী রয়েছে। তাদের মধ্যে উপবৃত্তি পায় ১৯২ জন।
উপবৃত্তি পাওয়া অষ্টম শ্রেণির এক শিক্ষার্থীর বাবা কৃষক। সে বলে, তারা চার বোন। তিন বোন পড়ালেখা করে। পরিবারের পক্ষ থেকে তিন বোনের পড়ালেখার খরচ চালানো কষ্টসাধ্য। তার মাসিক বেতন ও আনুষঙ্গিক খরচসহ বছরে প্রায় সাড়ে পাঁচ হাজার টাকা খরচ হয়। অথচ সে বছরে উপবৃত্তির টাকা পায় তিন হাজার।
ওই শিক্ষার্থী বলে, ‘আমি উপবৃত্তির কিছু টাকা পাই। যা পাই তার দ্বিগুণ স্কুলে রেখে দেয়। টাকা দিতে না পারলে প্রধান শিক্ষক চাপ দেন। বাধ্য হয়ে টাকা দিতে হয়। অথচ আমাদের নাকি বেতন মাফ।’
এক অভিভাবক বলেন, পড়ালেখার জন্য সরকার উপবৃত্তির টাকা দেয়। আবার ওই শিক্ষার্থীর স্কুলের বেতন সরকার দিয়ে দেয়। এরপরও স্কুল কর্তৃপক্ষ বেতন আদায় করেন। সরকার সব খরচ দেওয়ার পরও কেন এভাবে তাঁদের চাপে রাখা হয়?
জেলা শিক্ষা কার্যালয় সূত্র জানায়, দরিদ্র ও মেধাবী শিক্ষার্থীদের পড়ালেখার খরচ জোগান দিতে সরকার প্রধানমন্ত্রীর শিক্ষাসহায়তা ট্রাস্ট থেকে উপবৃত্তি দেওয়া হয়। ষষ্ঠ শ্রেণি থেকে দ্বাদশ শ্রেণির শিক্ষার্থীদের বছরে দুই কিস্তিতে উপবৃত্তির টাকা দেওয়া হয়। ষষ্ঠ ও সপ্তম শ্রেণির শিক্ষার্থীদের মাসে ২০০ টাকা, অষ্টম শ্রেণিতে ২৫০ টাকা, নবম ও দশম শ্রেণিতে ৩০০ টাকা ও একাদশ ও দ্বাদশ শ্রেণিতে ৪০০ টাকা করে উপবৃত্তি দেওয়া হচ্ছে। উপবৃত্তি পাওয়া শিক্ষার্থীদের কাছে থেকে কোনো মাসিক বেতন আদায় করা যাবে না বলে প্রধানমন্ত্রীর শিক্ষাসহায়তা ট্রাস্ট থেকে প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়। উপবৃত্তি পাওয়া শিক্ষার্থীদের মাসিক বেতন প্রধানমন্ত্রীর শিক্ষাসহায়তা ট্রাস্ট থেকে বিদ্যালয়ে দেওয়া হয়।
শিক্ষার্থীদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, ষষ্ঠ শ্রেণির শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে মাসিক বেতন হিসেবে ১৮০ টাকা, সপ্তম শ্রেণির ২০০ টাকা, অষ্টম শ্রেণির ২২০ টাকা, নবম শ্রেণির ২৬০ টাকা ও দশম শ্রেণির শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে ৩০০ টাকা আদায় করা হচ্ছে। এ ছাড়া ভর্তি ফি, সেশন ফি, বিদ্যুৎ বিল, বৈদ্যুতিক সরঞ্জাম ক্রয়, খাজনা, পরিচ্ছন্নতা, স্টেশনারি, উন্নয়ন ও ইন্টারনেটের খাত দেখিয়ে বাড়তি টাকা আদায় করা হচ্ছে।
শিক্ষার্থীদের অভিভাবকেরা বলেন, সদর উপজেলার চিতলিয়া সমিতির হাট উচ্চবিদ্যালয়ে অধ্যয়নরত অধিকাংশ শিক্ষার্থী দরিদ্র ও শ্রমজীবীদের সন্তান। তাঁদের পক্ষে বিদ্যালয়ের এত টাকা পরিশোধ করা কষ্টসাধ্য। প্রধান শিক্ষক হারুন অর রশিদ শিক্ষার্থীদের তাঁর কক্ষে ডেকে ও শ্রেণিকক্ষে গিয়ে টাকা আদায়ের জন্য বিভিন্ন সময় চাপ দেন। টাকা না দিলে বিদ্যালয়ে পড়ালেখা করা যাবে না—এমন কথাও তিনি শিক্ষার্থীদের বলে থাকেন।
প্রধান শিক্ষক হারুন অর রশিদ বলেন, কোন শিক্ষার্থী উপবৃত্তি পায়, তা তাঁরা সুনির্দিষ্টভাবে জানেন না। অনেকে উপবৃত্তি পাওয়ার তথ্য গোপন করে রাখে। তখন অনেকের কাছ থেকে মাসিক বেতন নেওয়া হয়। তাঁরা বিষয়টি জানতে পারলে উপবৃত্তি পাওয়া শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে বেতন আদায় করেন না। তাদের কাছ থেকে বেতন ছাড়া বিদ্যালয়ের অন্যান্য পাওনা আদায় করা হয়।
জেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা শ্যামল চন্দ্র শর্মা বলেন, কারা বৃত্তি পায় তা ওই শিক্ষক জানেন না, এমনটা হওয়ার কথা নয়। অবশ্যই এই তালিকা বিদ্যালয়ে থাকবে। ওই তালিকা বিদ্যালয়ের নোটিশ বোর্ডে টাঙিয়ে দেওয়ার বিধান রয়েছে।