ভারত বিশ্ব দরবারে বাংলাদেশের দুর্নাম করার চেষ্টা করছে বলে মন্তব্য করেছেন জাতীয় নাগরিক কমিটির কেন্দ্রীয় সদস্য কৈলাশ চন্দ্র রবিদাস। তিনি বলেছেন, ‘৫ আগস্টের পর আওয়ামী লীগের দালাল হিন্দুদের ওপর হামলা হয়েছে। আমরা কোথাও সাধারণ হিন্দুদের ওপর হামলা হতে দেখিনি। ভারত বিশ্ব দরবারে বাংলাদেশের দুর্নাম করার চেষ্টা করছে। আমরা কোনোভাবেই ভারতের ফাঁদে পা দেব না। তাদের ষড়যন্ত্র সফল হলে আমরা আরও ক্ষতিগ্রস্ত হব। ষড়যন্ত্র মোকাবিলা করে আমরা নতুনভাবে দেশ গড়ার কাজে যুক্ত হব।’
আজ বৃহস্পতিবার বিকেলে নারায়ণগঞ্জের টানবাজার ঋষিপাড়া এলাকায় আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে তিনি এসব কথা বলেন। ‘ভারতের বাংলাদেশবিরোধী ষড়যন্ত্র ও আগরতলায় বাংলাদেশ সহকারী হাইকমিশনে হামলার প্রতিবাদ এবং জাতীয় নাগরিক কমিটির কেন্দ্রীয় পর্যায়ে দলিত হরিজন তফসিলি প্রতিনিধি অন্তর্ভুক্ত করায় এই সমাবেশ ও সংবর্ধনা অনুষ্ঠান হয়। টানবাজার ঋষিপাড়া এলাকার দলিত, হরিজন, তফসিলি জনগোষ্ঠীর পক্ষ থেকে এই অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়।
অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন টানবাজার সিটি কলোনি পঞ্চায়েত কমিটির সাবেক সভাপতি রতন লাল দাস। নিতাইগঞ্জ ঋষিপাড়া এলাকার বাসিন্দা সাঞ্জু দাসের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে বক্তব্য দেন জাতীয় নাগরিক কমিটির কেন্দ্রীয় সদস্য মোল্লা ফারুক এহসান, কৈলাশ চন্দ্র রবিদাস, ভীম্পাল্লী ডেভিড রাজু, জাতীয় নাগরিক কমিটি নারায়ণগঞ্জ সদর থানার সদস্য শওকত আলী, দলিত নারী উন্নয়ন সংস্থার চেয়ারম্যান সনুরানী দাস, টানবাজার সিটি কলোনি পঞ্চায়েত কমিটির সরদার সুকুমার দাস, বাংলাদেশ হরিজন ঐক্য পরিষদ নারায়ণগঞ্জ জেলার সভাপতি অমৃত লাল, টানবাজার হরিজন সমাজসেবা সংঘের সাধারণ সম্পাদক মামুন চন্দ্র দাস প্রমুখ।
অনুষ্ঠানের শুরুতেই জাতীয় নাগরিক কমিটির কেন্দ্রীয় পর্যায়ে দলিত হরিজন তফসিলি প্রতিনিধি হিসেবে অন্তর্ভুক্ত হওয়ায় কৈলাশ চন্দ্র রবিদাস ও ভীম্পাল্লী ডেভিডকে দলিত সম্প্রদায়ের পক্ষ থেকে সংবর্ধনা দেওয়া হয়। পরে ঋষিপাড়া সিটি কলোনির বাসিন্দারা নিজেদের নানা সমস্যা ও সংকট নিয়ে আলোচনা করেন।
দলিত নারী উন্নয়ন সংস্থার চেয়ারম্যান সনুরানী দাস বলেন, প্রায় চার বছর হতে চলল নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশন টানবাজার সিটি কলোনিতে বহুতল ভবন নির্মাণের কাজ শুরু করেছে। কিন্তু বারবার সময় শেষ হলেও ভবনের নির্মাণকাজ শেষ হচ্ছে না। ফলে টানবাজারের বাসিন্দারা কখনো ইসদাইর কখনো ঋষিপাড়ায় ভাসমান অবস্থায় থাকছেন। অথচ আমাদের শিশুরা সবাই টানবাজার সিটি কলোনির বিদ্যালয়ে পড়ে। এলাকায় ফিরতে না পাড়ায় এই শিশুরা বিদ্যালয় থেকে ঝরে পড়ছে। ঋষিপাড়ায় টানবাজারের বাসিন্দাদের থাকতে দেওয়ায় বাড়তি মানুষের চাপে পানি, পয়োনিষ্কাশনসহ নানা ধরনের সংকট তৈরি হচ্ছে।
এ সময় দ্রুত টানবাজার সিটি কলোনির ভবন নির্মাণকাজ শেষ করে সেখানকার বাসিন্দাদের আবাসন সংকট দূর করা, নিতাইগঞ্জ ঋষিপাড়ার বাসিন্দাদের নিজস্ব ভবনে আবাসনের ব্যবস্থা করা এবং আবাসন সংকট সমাধান না হওয়া পর্যন্ত অস্থায়ীভাবে ঋষিপাড়া এলাকায় শিশুদের জন্য বিদ্যালয়ের ব্যবস্থা করার দাবি জানান বক্তারা।
অতীতের সরকারগুলো দলিত সম্প্রদায়ের ভাগ্য উন্নয়নে কাজ করেনি উল্লেখ করে কৈলাশ চন্দ্র বলেন, ‘দেশে আমরা এক কোটি দলিত হরিজন ও তফসিলি সম্প্রদায়ের জনগোষ্ঠী। আমরা চেয়েছিলাম আমাদের যেন আলাদা শুমারি হয়। সংবিধানে যেন আমাদের আলাদা স্বীকৃতি থাকে। কিন্তু বিগত সরকারগুলো আমাদের বলেছে আমরা নাকি মেইনস্ট্রিম হিন্দু। তারা আমাদের সাংবিধানিক স্বীকৃতি দেয়নি। এমনকি আমাদের রাজনৈতিক নেতা বুদ্ধিজীবীদের অনেকেই জানেন না এ দেশে রবিদাস আর তেলেগু সম্প্রদায়ের লোকও আছে। ফলে আমাদের কোনো সুরক্ষা বলয় গড়ে ওঠেনি।’
দলিত হরিজন ও তফসিলি জনগোষ্ঠীর সাংবিধনিক স্বীকৃতির জন্য নাগরিক কমিটি সবাইকে নিয়ে কাজ করবে বলে মন্তব্য করেন মোল্লা ফারুক এহসান। তিনি বলেন, ‘সাম্য, মানবিক মর্যাদা ও সামাজিক ন্যায়বিচারের কথা বলে বাংলাদেশ স্বাধীন হলো। কিন্তু গত ৫৩ বছরেও হরিজন-দলিতরা মানবিক মর্যাদা ও সাংবিধানিক অধিকার পায়নি। ৫ আগস্টের পর আমরা যে নতুন বাংলাদেশ গড়ার স্বপ্ন দেখছি সেই বাংলাদেশের অন্যতম অংশীজন হলো দলিত, হরিজন ও তফসিলি জনগোষ্ঠী।’
জুলাই অভ্যুত্থানে হিন্দু সম্প্রদায়ের অসংখ্য ভাই শহীদ হয়েছেন উল্লেখ করে ফারুক এহসান বলেন, ‘অথচ এখন ফ্যাসিবাদী আওয়ামী লীগ ও ভারত আমাদের মধ্যে দ্বন্দ্ব তৈরির ষড়যন্ত্র করছে। সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা তৈরির চেষ্টা করছে। আমরা স্পষ্টভাবে বলছি বাংলাদেশের হিন্দু–মুসলিম তফসিলিসহ নিম্ন ও উচ্চবর্গের সবাই মিলে ঐক্যবদ্ধভাবে এই ষড়যন্ত্র মোকাবিলা করব।’