‘চার দিন ধরে বসে আছি, জানি না রাস্তা কবে শেষ হবে’

বন্যা পরিস্থিতির কারণে ঢাকা–চট্টগ্রাম মহাসড়ক অচল হয়ে পড়ে আছে গত চার দিন ধরে। জরুরি পণ্য নিয়ে আটকে আছে শত শত যানবাহন। আজ সকাল নয়টায় চট্টগ্রামের মিরসাইয়ের বারইয়ারহাটেজুয়েল শীল

‘চার দিন ধরে গাড়িতে বসে আছি। এর মধ্যে গতকাল জ্বর এসেছিল। শরীর খুব ক্লান্ত। যাব গাজীপুরে। জানি না এ রাস্তা কবে শেষ হবে। কবে পৌঁছাতে পারব।’

কথাগুলো বলছিলেন কনটেইনারবাহী লরির চালক মোহাম্মদ ইয়াসিন। আজ রোববার সকাল নয়টায় তাঁর সঙ্গে কথা হয় মিরসরাইয়ের বারইয়ারহাট এলাকায়। ইয়াসিন জানান, পোশাক কারখানার পণ্য নিয়ে বন্দর থেকে বেরিয়েছেন গত বৃহস্পতিবার সকালে। মিরসরাইয়ে ঢোকার আগেই আটকে যান তিনি। এরপর ধীরে ধীরে বারইয়ারহাট পর্যন্ত এসেছেন। আজ ভোরে চার কিলোমিটার পর্যন্ত চলেছে গাড়ি।

চার দিন ধরে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক কার্যত অচল হয়ে আছে। মিরসরাই থেকে ফেনী সদরের লালপোল পর্যন্ত প্রায় ৩০ কিলোমিটারে শত শত যানবাহন আটকা। বেশির ভাগই বন্দর থেকে বের হওয়া পণ্যবাহী যানবাহন।

ছাগলনাইয়ায় ঢোকার মুখে কথা হয় নুরুল আমিনের সঙ্গে। তিনিও চার দিন ধরে বসে আছেন। নুরুল বলেন, আশপাশের দোকানপাট সব ডুবে আছে। খাবার নেই। ঘুম নেই। মুড়ি খেয়ে দিন পার করছেন।

ফেনী জেলার ছাগলনাইয়া, ফুলগাজী, পরশুরাম, ফেনী সদর, দাগনভূঞা ও সোনাগাজী—এ ছয় উপজেলা পুরোপুরি বন্যাকবলিত। গ্রামের পর গ্রাম ডুবে আছে। মহাসড়কের লালপোল এলাকায় পানির প্রবল স্রোত বয়ে যাচ্ছে। কোথাও হাঁটুপানি, কোথাও বুকসমান। অন্যদিকে কুমিল্লার চৌদ্দগ্রাম অংশেও এখনো পারি সরেনি। এ কারণে সড়কে তীব্র যানজট সৃষ্টি হয়।

সরেজমিন দেখা গেছে, চট্টগ্রাম থেকে ফেনীর দিকে ত্রাণবাহী ট্রাক একের পর ঢুকছে। উল্টো পথে যেতে হচ্ছে সবাইকে। একপাশ পুরোপুরি বন্ধ হয়ে আছে।

সড়কের এক পাশে আড্ডা দিচ্ছিলেন জানে আলম, রুহুল তালুকদার ও অভয় দাস নামের তিন চালক। তাঁরা বলেন, এক জায়গা বসে থাকতে থাকতে বিরক্তি চলে এসেছে। তাই আড্ডা দিচ্ছিলেন। তবে এ চালকেরা আশা করছেন, আজ দুপুরের মধ্যে সড়ক থেকে পানি নেমে যাবে।

সড়কে কয়েক দিন ধরে আটকে থাকা চালক ও পরিবহন শ্রমিকেরা খাবার ও পানির সংকটে পড়েছেন। হোটেল–রেস্তোরাঁ খোলা না থাকায় শুকনো খাবার খেয়ে দিন কাটাতে হচ্ছে তাঁদের। আজ সকাল নয়টায় চট্টগ্রামের মিরসাইয়ের বারইয়ারহাটে
জুয়েল শীল

আল আমিন জানালেন, আজ ভোর থেকে ধীরগতিতে তিনি এগিয়েছেন। যাবেন ঢাকার কাঁচপুরে। শুক্কুর মিয়া সড়কের পাশে বসে দাঁত মাজছিলেন। তিনি জানান, তিন দিন ধরে আটকে আছেন। বিভিন্ন সময়ে সড়কে আটকে যাওয়ার অভিজ্ঞতা আছে তাঁর। কিন্তু এবারের যাত্রা ভিন্ন। আশপাশে দোকানপাট বন্ধ পড়ে আছে।

ঢাকাগামী একটি বাসে ৩০ জনের মতো যাত্রী ছিলেন। এর মধ্যে ২৫ জনই গাড়ি থেকে গতকাল নেমে গেছেন। তাঁরা কেউ চট্টগ্রাম ফিরেছেন। কেউ গন্তব্যে হাঁটা দিয়েছেন। বাকি যাত্রীরা বলেন,  তাঁরা মনে করেছিলেন রাস্তা পরিষ্কার হয়ে যাবে। কিন্তু তা হয়নি।