জলাতঙ্ক দিবসে পঞ্চগড়ে এক কুকুর কামড়াল ১৩ জনকে
রাস্তা দিয়ে ছুটতে ছুটতে সামনে যাঁকে পেয়েছে, তাঁকেই কামড়েছে কুকুরটি। কারও পায়ে, কারও হাতে আবার কারও পিঠে ছোট থেকে মাঝারি ক্ষত করেছে কুকুরটি। শিশু, নারী, পুরুষ—কেউই রেহাই পাননি। প্রথম দিকে কুকুরটিকে লাঠি দিয়ে তাড়িয়ে দিয়েছিলেন স্থানীয় বাসিন্দারা। পরে রাত সাড়ে তিনটার দিকে কুকুরটিকে পিটিয়ে মেরে ফেলেন কয়েকজন।
গতকাল বৃহস্পতিবার পঞ্চগড় সদর উপজেলার মাগুরা, ধাক্কামারা ও গরিনাবাড়ি ইউনিয়নের কয়েকটি গ্রামে এবং তেঁতুলিয়া উপজেলার দুটি গ্রামে এ ঘটনা ঘটে। সন্ধ্যা সাড়ে সাতটা থেকে রাত সাড়ে ১২টা পর্যন্ত অন্তত ১৩ জন কুকুরের আক্রমণের শিকার হন। গতকাল ছিল বিশ্ব জলাতঙ্ক দিবস।
আহত ব্যক্তিরা সবাই পঞ্চগড় আধুনিক সদর হাসপাতালে জলাতঙ্ক রোগের টিকাসহ চিকিৎসা নিয়েছেন। তাঁদের কুকুরে কামড়ের বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন হাসপাতালের চিকিৎসক মির্জা সাইদুল ইসলাম।
কুকুরের কামড়ের শিকার ব্যক্তিরা হলেন সদর উপজেলার মাগুরা ইউনিয়নের ধনীপাড়া এলাকার রুস্তম আলী (২৫), আদুরী রানী (৩০), শ্রী সনু (৪০), একই ইউনিয়নের মাগুরা প্রধানপাড়া এলাকার হৃদয় (১৩), আজাদপুর এলাকার তসলিম (৩৫), বাঁশবাড়ি এলাকার জিসান আরাবী (৮), ধাক্কামারা ইউনিয়নের রজলী খালপাড়া এলাকার ফারুক (৩০), বুকলতলা এলাকার ইয়াসমিন (৩২), মীরগড় এলাকার শামীম (৩২) ও গরিনাবাড়ি ইউনিয়নের বজরাপাড়া এলাকার আবদুল মালেক (৩৫)। এ ছাড়া তেঁতুলিয়া উপজেলার সিপাইপাড়া এলাকার সায়মান (২), শাম্মী আক্তার (৪০) ও দেবনগর এলাকার আবদুল কাদেরও (৩২) আক্রমণের শিকার হন।
মাগুরা ইউনিয়নের বাঁশবাড়ি এলাকার বাসিন্দা মহিবুল ইসলাম বলেন, গতকাল রাত নয়টার দিকে আট বছর বয়সী ছেলে জিসান আরাবীকে নিয়ে পঞ্চগড় শহর থেকে বাড়িতে ফিরছিলেন তিনি। বাড়ির কাছাকাছি গিয়ে ইজিবাইক থেকে নেমে বাবা-ছেলে হেঁটে যাচ্ছিলেন। এ সময় হঠাৎ একটি কুকুর এসে তাঁর সামনেই ছেলে জিসানের ওপর ঝাঁপিয়ে পড়ে এবং পিঠে কামড়ে ধরে। এ সময় তিনি পা দিয়ে কুকুরটিকে লাথি মারতে মারতে চিৎকার দিলে আশপাশের লোকজন ছুটে আসেন। পরে স্থানীয় বাসিন্দাদের তাড়া খেয়ে কুকুরটি পালিয়ে যায়। সঙ্গে সঙ্গে তিনি ছেলেকে হাসপাতালে নিয়ে আসেন।
গড়িনাবাড়ি ইউনিয়নের বজরাপাড়া এলাকার বাসিন্দা আবদুল মালেক (৩৫) বলেন, ‘আমি রাত সোয়া ১২টার দিকে বাড়ির কাছাকাছি একটি বিয়ের অনুষ্ঠান থেকে ফিরছিলাম। এ সময় রাস্তায় হঠাৎ করেই একটা কুকুর এসে আমার ওপর আক্রমণ চালায় এবং পিঠে কামড়ে ধরে। পরে আমি চিৎকার করলে লোকজন ছুটে এসে তাড়া দিলে কুকুরটি দৌড়ে পালায়। পরে গ্রামের সব লোক এক হয়ে কুকুরটিকে খোঁজাখুঁজি শুরু করি। রাত সাড়ে তিনটার দিকে আমরা কুকুরটিকে খুঁজে পেয়ে মেরে ফেলেছি। রাতেই আমি হাসপাতালে এসে ভ্যাকসিন নিয়েছি।’
ধাক্কামারা ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) ৪, ৫ ও ৬ নম্বর ওয়ার্ডের সংরক্ষিত সদস্য মালেকা বানু বলেন, রাত ৮টার দিকে তাঁর প্রতিবেশী ইয়াসমিন (৩২) বাড়ির বাইরে মুরগি খুঁজতে বের হন। এ সময় একটি কুকুর এসে তাঁকে কামড়ে ধরে। ইয়াসমিনের চিৎকারে লোকজন এসে কুকুরটিকে তাড়া দিলে সেটি পালিয়ে যায়। সন্ধ্যার পর থেকে অনেক রাত পর্যন্ত কয়েকটি গ্রামে এভাবেই কুকুরটি সামনে যাঁকে পেয়েছে, তাঁকেই কামড় দিয়েছে বলে জানান তিনি।
পঞ্চগড় আধুনিক সদর হাসপাতালের চিকিৎসক মির্জা সাইদুল ইসলাম বলেন, কুকুরের কামড়ের শিকার হয়ে যাঁরা হাসপাতালে এসেছেন, তাঁদের সবাইকেই জলাতঙ্কের টিকাসহ প্রয়োজনীয় চিকিৎসা দেওয়া হয়েছে। এমনকি আজ শুক্রবার ছুটির দিনেও তাঁদের পরবর্তী ডোজের টিকা দিতে এই কার্যক্রম চালু রাখা হয়েছে। এসব কুকুরের হাত থেকে রক্ষা পেতে বিশেষ করে শিশুদের ক্ষেত্রে অভিভাবকদের আরও সচেতন হতে হবে বলে মন্তব্য করেন তিনি।