হিজলায় আ.লীগ নেতাকে কুপিয়ে হত্যা, অভিযোগ সংসদ সদস্য শাম্মীর সমর্থকদের বিরুদ্ধে
বরিশালের হিজলায় জামাল মাঝি (৫২) নামের আওয়ামী লীগের স্থানীয় এক নেতাকে কুপিয়ে হত্যা করা হয়েছে। আজ শনিবার দুপুরে উপজেলার ধুলখোলা ইউনিয়নের মেঘনাতীরবর্তী একটি সয়াবিনখেত থেকে তাঁর লাশ উদ্ধার করে পুলিশ।
নিহত জামাল মাঝি ধুলখোলা ইউনিয়নের ৭ নম্বর ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সভাপতি এবং ওই ইউনিয়নের পালপাড়া গ্রামের আবদুল কাদের মাঝির ছেলে। তিনি মেঘনা ঘাটে মাছের ব্যবসা করতেন।
জামাল মাঝিকে নিজের অনুসারী দাবি করে সংসদ সদস্য পংকজ নাথ অভিযোগ করেন, ধুলখোলা ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান জামাল ঢালী সমর্থকদের নিয়ে তাঁকে হত্যা করেছেন। তবে সংসদ সদস্য শাম্মী আহমেদের অনুসারী জামাল ঢালী ওই অভিযোগ অস্বীকার করেছেন।
হিজলা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) জুবাইর আহমেদ বলেন, আজ দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে মেঘনার তীরবর্তী একটি সয়াবিনখেত থেকে জামাল মাঝি নামের ওই ব্যক্তির লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। পরে সুরতহাল প্রতিবেদন তৈরির করে ময়নাতদন্তের জন্য লাশ বরিশাল শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মর্গে পাঠানো হয়েছে।
পুলিশ ও স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, নিহত জামালের গলাসহ বুকে একাধিক কোপের চিহ্ন আছে। তবে লাশ উদ্ধার হওয়া জায়গায় রক্তের কোনো চিহ্ন দেখা যায়নি। পুলিশের ধারণা, পরিকল্পিতভাবে অন্য কোথাও তাঁকে হত্যার পর লাশ ওই সয়াবিনখেতে ফেলে রাখা হয়েছে।
বরিশাল-৪ (হিজলা-মেহেন্দীগঞ্জ) আসনের সংসদ সদস্য পংকজ নাথ প্রথম আলোকে বলেন, জামাল মাঝি তাঁর অনুসারী। ২ মার্চ জামালের বাড়িতে হামলা করেন স্থানীয় ধুলখোলা ইউপির চেয়ারম্যান জামাল ঢালীসহ তাঁর ৪০-৫০ জন সহযোগী। তাঁরা জামালসহ তাঁর স্বজনদের পিটিয়ে ও কুপিয়ে আহত করেন। এ ঘটনায় সাইফুল ইসলাম নামে ইউপি চেয়ারম্যানের এক অনুসারীকে গতকাল শুক্রবার মারধর করা হয়। ওই ঘটনার পর হিজলা থানার পরিদর্শক (তদন্ত) দীপংকর রায়ের নেতৃত্বে পুলিশ তাঁর অনুসারীদের ব্যাপক ধরপাকড় শুরু করে। ধরপাকড়ের কারণে তাঁর অনুসারীরা এলাকাছাড়া হয়ে গেলে জামাল মাঝি একা হয়ে যান। এ সুযোগে তাঁকে ইউপি চেয়ারম্যান জামাল ঢালী ও তাঁর লোকজন কুপিয়ে হত্যা করেছেন।
তবে অভিযোগ অস্বীকার করে পরিদর্শক দীপংকর রায় বলেন, ১৫ দিন ধরে ধুলখোলা ইউনিয়নে দুই পক্ষের মধ্যে হামলা ও সংঘর্ষের ঘটনা ঘটছে। একই সময়ে একে অপরের বিরুদ্ধে থানা ও আদালতে মামলা হয়েছে পাঁচটি। গতকাল রাতে সাইফুল নামের একজনকে মারধরের খবর পেয়ে এলাকায় গিয়ে দেখেন, দুই পক্ষ সশস্ত্র অবস্থায় আছে। তখন দুই পক্ষকে ধাওয়া করে ছত্রভঙ্গ করে দেন এবং সেখান থেকে দুজনকে গ্রেপ্তার করেন। রাত তিনটা পর্যন্ত দুই পক্ষই এলাকায় অবস্থান করছিল। পুলিশ কোনো পক্ষের হয়ে কাজ করেনি।
নিহতের স্ত্রী আঁখি বেগম প্রথম আলোকে বলেন, গতকাল দিবাগত রাতে জামাল বাড়িতে না ফেরায় রাত দুইটার দিকে তাঁর বড় মেয়ে বাবাকে কল দেন। তখন তিনি জানিয়েছিলেন, ‘আমি ভালো আছি ও নিরাপদে আছি।’ এরপর আজ সকাল ৯টার দিকে এলাকার লোকজনের কাছে জানতে পারেন, স্বামীর লাশ খেতে পড়ে আছে। আঁখি বেগমের অভিযোগ, ধুলখোলা ইউপির চেয়ারম্যান জামাল ঢালীর নেতৃত্বে সন্ত্রাসী বাহিনী তাঁর স্বামীকে কুপিয়ে হত্যা করেছে।
তবে অভিযোগ অস্বীকার করে ইউপি চেয়ারম্যান জামাল ঢালী বলেন, গতকাল ধুলখোলায় একটি মারামারি হয়েছে। সংসদ সদস্য পংকজের অনুসারী কালাম ব্যাপারীর লোকেরা সাইফুল নামের এক ব্যক্তির হাত–পা ভেঙে দেন। সাইফুল তাঁর কর্মী হওয়ায় তাঁর চিকিৎসা নিয়ে ব্যস্ত ছিলেন। সকালে চৌকিদার এসে জানান, সয়াবিনখেতে কারও লাশ পড়ে আছে। খবর নিয়ে জানতে পারেন, লাশটি জামাল মাঝির। তবে কে বা কারা তাঁকে হত্যা করেছে, তিনি জানেন না।
জামাল ঢালী দাবি করেন, ‘২০২১ সালে সংসদ সদস্য পংকজ নাথের এক অনুসারীকে নিজেরা হত্যার পর আমাদের ফাঁসাতে চেয়েছিল। পরে পুলিশের তদন্তে ঘটনার রহস্য বেরিয়ে আসে এবং মূল হত্যাকারীরা শনাক্ত হয়। আমাদের ধারণা, এটাও একই ধরনের পরিকল্পিত হত্যাকাণ্ড। আমরা বিষয়টি নিবিড়ভাবে তদন্ত করার জন্য পুলিশ ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর প্রতি দাবি জানাচ্ছি।’
হিজলা থানার ওসি জুবাইর প্রথম আলোকে বলেন, জাতীয় নির্বাচন-পরবর্তী সময়ে ধুলখোলা ইউনিয়নে একাধিকবার সংঘর্ষ হয়েছে। তাঁদের নিয়ন্ত্রণ করার সর্বোচ্চ চেষ্টা করেছেন। প্রাথমিকভাবে পুলিশ ধারণা করছে, জামাল মাঝিকে কুপিয়ে হত্যা করা হয়েছে। তদন্ত করে অপরাধীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
বরিশাল-৪ আসনে এবার আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পান দলের আন্তর্জাতিকবিষয়ক সম্পাদক শাম্মী আহমেদ। কিন্তু দ্বৈত নাগরিকত্বের জটিলতায় শাম্মী আহমেদের মনোনয়ন বাতিল হয়ে যায়। দলীয় মনোনয়নবঞ্চিত হয়ে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে আবার সংসদ সদস্য হন পংকজ নাথ। পংকজ মনোনয়নবঞ্চিত হওয়ার পর তাঁর অনুসারী আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীরা শুরুর দিকে এলাকায় কোণঠাসা হয়ে পড়েন। পরে শাম্মীর অনুসারী নেতা-কর্মীদের তোপের মুখে অনেকে এলাকা ছাড়েন।
শাম্মীর মনোনয়ন আদালতে স্থগিত হয়ে গেলে পংকজের অনুসারী নেতা-কর্মীরা আবার এলাকায় ফেরেন। গত ৭ জানুয়ারি ভোটে পংকজ জয়ী হলে প্রতিপক্ষের বাড়িঘর, ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানে হামলা শুরু হয়। এরপর শাম্মীর অনুসারী নেতা-কর্মীদের অনেকে এলাকা ছেড়ে চলে যান। গত ১৪ ফেব্রুয়ারি শাম্মী আওয়ামী লীগের মনোনয়নে সংরক্ষিত আসনের সংসদ সদস্য হলে এলাকায় পংকজের একক আধিপত্য কিছুটা খর্ব হয়।