গোপালগঞ্জে সেনাবাহিনীর অস্ত্র লুট ও গাড়ি পোড়ানোর মামলায় গ্রেপ্তার আসামির মৃত্যু
গোপালগঞ্জে সেনাসদস্যের ওপর হামলা, গাড়িতে আগুন ও অস্ত্র ছিনিয়ে নেওয়ার মামলায় কারাগারে থাকা এক আসামি হাসপাতালে মারা গেছেন। গতকাল শনিবার দিবাগত রাত একটার দিকে গোপালগঞ্জ ২৫০ শয্যাবিশিষ্ট জেনারেল হাসপাতালে ইলাহি সিকদার (২৫) নামের ওই আসামির মৃত্যু হয়।
গোপালগঞ্জ ২৫০ শয্যাবিশিষ্ট জেনারেল হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক জিবিতেষ বিশ্বাস ও জেলা কারাগারের জেলার আবুল হোসেন আসামির মৃত্যুর তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
ইলাহি সিকদার গোপালগঞ্জের কাশিয়ানী উপজেলার নিজামকান্দি ইউনিয়নের ফলসি গ্রামের মহি সিকদারের ছেলে। তিনি ফলসি বাজারে মিষ্টির দোকানদার ছিলেন।
ইলাহি সিকদারের বড় ভাই কুদরত সিকদার বলেন, ‘৩ সেপ্টেম্বর বেলা দেড়টার দিকে ইলাহিকে ফলসি গ্রামের বাড়ি থেকে নিয়ে যাওয়া হয়। রাত দেড়টা দিকে পুলিশ মোবাইলে ফোন দিয়ে জানায়, ভাইকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। পরের দিন আদালতের মাধ্যমে জেলহাজতে পাঠানো হয়। গতকাল রাতে জেলখানা থেকে ফোন দিয়ে জানানো হয়, ইলাহি সিকদার অসুস্থ। রাত তিনটার দিকে গোপালগঞ্জ ২৫০ শয্যাবিশিষ্ট জেনারেল হাসপাতালে গিয়ে দেখেন ভাইয়ের মরদেহ পড়ে আছে।
গোপালগঞ্জ জেলা কারাগারের জেলার আবুল হোসেন বলেন, ‘উনি যখন ৪ তারিখে আসেন, তখন আহত অবস্থায় আসেন। গোপালগঞ্জ ২৫০ শয্যাবিশিষ্ট জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি ছিলেন, সেখান থেকে ছাড়পত্রসহ কারাগারে আসেন। আমরা তাঁকে আবার হাসপাতালে পাঠাই। সেখান থেকে চিকিৎসা দিয়ে কারাগারে নিয়ে আসা হয়। গতকাল রাতে আবার অসুস্থ হয়ে পড়লে তাঁকে হাসপাতালে নিয়ে গেলে চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন।’
গোপালগঞ্জ কারাগারের কর্তব্যরত নার্স মো. বদিউজ্জামান বলেন, ‘সন্ধ্যার আগে তাকে যখন জেলা কারাগারে আনা হয়, তখন সে খুব অসুস্থ ছিল। হাঁটতে পারত না। তাকে হুইলচেয়ারে করে ভেতরে নিয়েছি এবং চিকিৎসা দিয়েছি। পরে রাতেই তাকে আমরা হাসপাতালে পাঠিয়েছি। এর আগে সে হাসপাতালে ভর্তি ছিল।’
গোপালগঞ্জ ২৫০ শয্যাবিশিষ্ট জেনারেল হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক জিবিতেষ বিশ্বাস বলেন, ইলাহি সিকাদারকে তিনবার হাসপাতালে আনা হয়। প্রথমে ৩ সেপ্টেম্বর রাত ১১টা ২৪ মিনিটে, দ্বিতীয় দফায় ৪ সেপ্টেম্বর রাত ১টা ৩৭ মিনিটে এনে চিকিৎসা দিয়ে নিয়ে যান। কিছুক্ষণ পরে ২টা ১১ মিনিটে আবার হাসপাতালে এনে তাঁকে ভর্তি করা হয়। এরপর তৃতীয় দফায় গতকাল রাত একটার দিকে তাঁকে জেলা কারাগার থেকে হাসপাতালে আনা হয়। তবে আনার আগেই তাঁর মৃত্যু হয়েছিল।
গত ৫ আগস্ট তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গণ-আন্দোলনের মুখে পদত্যাগ করে দেশ ছাড়েন। শেখ হাসিনাকে ‘দেশত্যাগে বাধ্য’ করার প্রতিবাদে ১০ আগস্ট বিকেলে ঢাকা-খুলনা মহাসড়ক অবরোধ করে গোপালগঞ্জ সদরের গোপীনাথপুর বাসস্ট্যান্ডে বিক্ষোভ সমাবেশ করেন আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মী ও সমর্থকেরা। এতে মহাসড়কের দুই পাশে অসংখ্য গাড়ি আটকা পড়ে। খবর পেয়ে গোপালগঞ্জে কর্তব্যরত সেনাসদস্যরা ঘটনাস্থলে গিয়ে বিক্ষোভকারীদের মহাসড়ক ছেড়ে দিতে বলেন। তখন সেনাসদস্যদের সঙ্গে বিক্ষোভকারীরা বাগ্বিতণ্ডায় জড়ান। একপর্যায়ে তাঁরা সেনাসদস্যদের ওপর হামলা করেন। এতে সেনাবাহিনীর ৪ কর্মকর্তাসহ ৯ জন আহত হন। এ ছাড়া সেনাবাহিনীর দুটি রাইফেল ও ছয়টি ম্যাগাজিন ছিনিয়ে নিয়ে একটি গাড়িতে আগুন ও দুটি গাড়িতে ভাঙচুর করা হয়। পরে দুটি অস্ত্র ও তিনটি ম্যাগাজিন উদ্ধার করে সেনাবাহিনী।
এ ঘটনায় ২২ আগস্ট সকালে লেফটেন্যান্ট কর্নেল মো. মাকসুদুল আলম বাদী হয়ে গোপালগঞ্জ জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি, সাধারণ সম্পাদকসহ ১০৬ জনের নাম উল্লেখ করে ও ৩ হাজার ২০০ জনকে অজ্ঞাতনামা আসামি করে সদর থানায় একটি মামলা করেন।
গোপালগঞ্জ সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মদ আনিচুর রহমান প্রথম আলোকে বলেন, মামলায় এখন পর্যন্ত ২১ জন আসামিকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। তাঁদের আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠানো হয়েছে।